রৌমারীতে এখনো চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন
করোনাভাইরাসের সংক্রমন রোধে প্রশাসন ব্যস্ত থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় ব্রহ্মপুত্র নদ ও সোনাভরি নদীর বিভিন্ন স্থান থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
রৌমারী উপজেলার রৌমারী ইউনিয়নের কর্তিমারী নৌকা-ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সোনাভরি নদীতে সারি সারি ড্রেজার মেশিন বসানো। ওই জায়গা থেকে বালু তুলে বিক্রি করছেন কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী। পাইপের মাধ্যমে আশপাশের এলাকাসহ ৩-৮ কিলোমিটার দূরের এলাকায় যাচ্ছে এসব বালু। এ অবস্থা চলতে থাকলে অল্প দিনেই এ এলাকাটি নদীগর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া ঝুঁকিতে রয়েছে। নদী থেকে অবাধে বালু তোলায় হুমকির মুখে পড়েছে উপজেলার ফৌজদারি-রাজিবপুর বেড়িবাঁধ, বসতভিটা, আবাদি জমিসহ নদী তীরের কয়েক শ পরিবার।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সরকারদলীয় লোকজনই নদী থেকে অবৈধভাবে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন। করোনায় মানুষ যখন অনেকটা দিশেহারা, ঠিক এ সময়ে রৌমারীতে নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করছেন তারা। আর এসব অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা। প্রশাসনও রয়েছে নীরব ভূমিকায়।
নদী পাড়ের বাসিন্দা আহাদ আলী বলেন, ‘এসবের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা কথা বলে কোনো লাভ হয় না। আর যার নেতৃত্বে বালু উত্তোলন হচ্ছে, তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো নাই।’
‘এভাবে নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে রাত-দিন বালু উত্তোলন করা হচ্ছে, অথচ তা দেখার কেউ নেই। এবার বর্ষায় নদীগর্ভে ভেঙে যাবে আমাদের বসতভিটা ও আবাদি জমি’, যোগ করেন তিনি।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক ড্রেজার মালিক জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার সহযোগিতায় প্রশাসন ও পুলিশকে ম্যানেজ করে তারা বালুর ব্যবসা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ড্রেজার মালিকরা ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে টাকা দেই। তাই যত ঝুঁকি আসে তা সামলানোর দায়িত্ব ওই নেতার।’
‘নদ ও নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে’— উল্লেখ করে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল ইমরান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই উপজেলায় দলীয় প্রভাব খাটিয়ে অনেকের মধ্যে আইন না মানার মানসিকতা রয়েছে। আমরা করোনার সংক্রমণ রোধে ব্যস্ত। কারণ, রৌমারী উপজেলা ইতোমধ্যে করোনা-ঝুঁকিতে পড়েছে।’
‘আমি ইউনিয়নের সব ভূমি তহসিলদারদের নির্দেশনা দিয়ে বলেছি, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের জন্য ব্যবহৃত সব ড্রেজার মেশিন ভেঙে ও পুড়িয়ে ফেলতে। তারা কাজটি করতে না পারলে আমি নিজেই মাঠে নেমে শক্তভাবে আইনের প্রয়োগ করবো’, যোগ করেন তিনি।
Comments