কিম কি মারা গেছেন, ট্রেনের স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র

গত দুই সপ্তাহ ধরে জনসমক্ষে না আসায় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। তার স্বাস্থের অবনতি, এমনকি তার মৃত্যুর গুজবও ছড়িয়েছে।

গত দুই সপ্তাহ ধরে জনসমক্ষে না আসায় উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। তার স্বাস্থের অবনতি, এমনকি তার মৃত্যুর গুজবও ছড়িয়েছে।

দ্য কোরিয়া হ্যারল্ড জানায়, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি উত্তর কোরিয়া মনিটরিং ওয়েবসাইটে একটি স্যাটেলাইট ছবি প্রকাশের পর কিমের অবস্থান সম্পর্কে নতুন করে গুঞ্জন তৈরি হয়েছে। 

রোববার, কিমের স্বাস্থ্য অবস্থা নিয়ে হংকংয়ের টেলিভিশন চ্যানেলের একটি প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে চ্যানেলটির সহকারী পরিচালক শিজিয়ান জিংজু জানান, বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে কিমের গুরুতর অসুস্থতার কথা জানতে পেরেছেন তিনি। সূত্র বলছে, কিম খুব সম্ভবত চলাফেরা করতে পারছেন না।

জাপানের ম্যাগাজিন সুখান গেনদাইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মাসের শুরুতে হার্ট সার্জারির পর ‘আশঙ্কাজনক অবস্থা’য় আছেন ৩৬ বছর বয়সী কিম। তার পুরোপুরি আরোগ্যের সম্ভাবনা নেই।

দক্ষিণ কোরিয়ায় মাসিক সংবাদপত্র চুসানে বলা হয়েছে, কিম কোমায় আছেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার জানায়, উত্তর কোরিয়ার সরকারি কার্যক্রমে তারা অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেনি।

কিমের গুরুতর অসুস্থতার কথা অস্বীকার করেছে উত্তর কোরিয়ার বন্ধুদেশ চীন। এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে নিউজ উইক জানায়, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা উত্তর কোরিয়ার সামরিক বাহিনীর কোনো অস্বাভাবিক কার্যকলাপ দেখতে পায়নি। পরিস্থিতি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

কিমের অবস্থা সম্পর্কে নতুন তথ্য দিয়েছে উত্তর কোরিয়ায় নজর রাখা যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক একটি ওয়েবসাইট। স্যাটেলাইট থেকে তোলা ২৫০ মিটার দীর্ঘ একটি ট্রেনের ছবি ওই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, গত ২১ এপ্রিল থেকে উনসান শহরের একটি রেলস্টেশনের বাইরে ওই ট্রেনটি পার্ক করে রাখা হয়েছে। এটি কিমের পরিবারের জন্য সংরক্ষিত একটি ট্রেন। 

উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের উনসান শহরে কিমের একটি অবকাশ যাপনের বাড়ি আছে।

উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের একটি স্টেশনে কিম জং উনের ব্যক্তিগত ট্রেন।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, ‘আমরা কিমের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত নই। ট্রেনের উপস্থিতি মানেই যে কিম উনসান শহরে আছেন তা বলা যায় না। তবে, ধারণা করা যেতে পারে যে, পূর্ব উপকূলের অভিজাত কোনো একটি অঞ্চলে তিনি অবস্থান করছেন।’

নানা রকম গুঞ্জনের মধ্যেও কিমের স্বাস্থ্য ও অবস্থান গোপন রেখেছে উত্তর কোরিয়া। 

গণমাধ্যমে তাকে গত ১১ এপ্রিল সর্বশেষ দেখা যায়। ওইদিন ক্ষমতাসীন ওয়ার্কাস পার্টির পলিটব্যুরো সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি। এমনকি উত্তর কোরিয়ার জাতির পিতা কিম জং উনের প্রয়াত পিতামহ কিম ইল সাংয়ের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানেও অনুপস্থিত ছিলেন কিম। এরপর থেকেই তার স্বাস্থ্য নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়।

অনেকেই ধারণা করেছেন, হৃদপিন্ডে অস্ত্রোপচারের পর তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। 

এর আগে ২০১৪ সালে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম থেকে প্রায় ছয় সপ্তাহ অনুপস্থিত ছিলেন কিম। তখনও তার স্বাস্থ্য নিয়ে গুঞ্জন তৈরি হয়েছিল। পরে, রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে তিনি গোঁড়ালির অস্ত্রোপচারের কথা জানান। 

তথ্য প্রবাহের উপর উত্তর কোরিয়ার কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে কিম সম্পর্কে এইসব গুঞ্জন যাচাই করা কঠিন। 

দ্য কোরিয়া হ্যারল্ড জানায়, কিম ধুমপায়ী। তার উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিস আছে বলেও ধারণা করা হয়।

কিমের পিতামহ ও বাবা দুজনই হৃদরোগে মারা গিয়েছিলেন। ২০১১ সালে কিমের বাবা কিম জং ইলের মৃত্যুর দুদিন পরে রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রচার করা হয়েছিল।

Comments