করোনা পজিটিভ যুবক পুলিশের হস্তক্ষেপে আইসোলেশনে

বত্রিশ বছর বয়সী ইব্রাহিম নামে এক যুবক করোনা পজিটিভ নিয়ে ঢাকা থেকে চাঁদপুর, চাঁদপুর থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা, ফরিদগঞ্জ থেকে আবার চাঁদপুরে এসে শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েন পুলিশের হাতে। অবশেষে পুলিশের হস্তক্ষেপে তাকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়েছে।
কেন তিনি করোনা পজিটিভ হয়েও এভাবে ঘুরে বেড়ালেন তা কেউ বলতে পারছেন না। তার কারণে অন্তত কয়েকশ লোক করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ইব্রাহিম ঢাকার মগবাজারে মুদি দোকানদার। তিনি গতকাল রবিববার দুপুরে ঢাকা থেকে করোনা পজিটিভ নিয়ে চাঁদপুরে আসেন। সেখান থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ ইউনিয়নের পোয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে যান।
কিন্তু, বাড়ির লোকজন তার করোনা পজিটিভ জেনে সেখানে আশ্রয় দেননি। তখন তিনি নিজেই সেদিন বিকালে ফরিদগঞ্জ থেকে চাঁদপুরে আসেন। সেখানে ২৫০ শয্যার চাঁদপুর সদর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ডা. সৈয়দ আহমদ কাজল তার আগের রিপোর্ট দেখে তাকে হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি করিয়ে নেন। কিন্তু, সন্ধ্যায় আইসোলেশন ইউনিটে কর্তব্যরত লোকজনকে ফাঁকি দিয়ে তিনি পালিয়ে যান। বিষয়টি তাৎক্ষণিক চাঁদপুরের পুলিশ সুপারকে জানানো হলে চাঁদপুর মডেল থানা পুলিশ হাসপাতালের নথি থেকে তার ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর নিয়ে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় তাকে আটক করে।
ফরিদগঞ্জ থানার ওসি রকিব উদ্দিন বলেন, ‘সন্ধ্যায় পুলিশ সুপারের নির্দেশে থানার কুইক রেসপন্স টিম নিয়ে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা ইব্রাহিমের অবস্থান নির্ধারণ করি। তাকে উপজেলার উত্তর চরবড়ালি এলাকার একটি বাগান থেকে আটক করা হয়। তারপর তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠিয়ে দেই। কিন্তু, সে কেন এমন করে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো আমরা তা জানতে পারিনি।’
চাঁদপুরের ২৫০ শয্যা সরকারি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক করোনা ফোকালপার্সন ডা. সুজাউদ্দোলা রুবেল বলেন, ‘ইব্রাহিম এর আগে জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করান। তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এই অবস্থায় তিনি ঢাকা থেকে রবিবার দুপুরে পালিয়ে চাঁদপুরে চলে আসেন।’
‘করোনা পজিটিভ নিয়ে ইব্রাহিমের এভাবে ঢাকা থেকে চাঁদপুর, চাঁদপুর থেকে ফরিদগঞ্জ এবং ফরিদগঞ্জ থেকে আবারও চাঁদপুর আসায় আমরা আতঙ্কিত। কারণ অল্প সময়ে তিনি যেসব রাস্তা ব্যবহার করেছেন এতে করে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এখন আমরা তাকে সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করে রেখেছি,’ বলে জানান তিনি।
চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে ইব্রাহিম পালিয়েছে— এ সংবাদ পাওয়া মাত্রই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে আটক করি। তবে তার সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি যে তিনি ভয়ে এটা করেছেন। অন্য কোনো বিষয় ছিল বলে মনে হয় না।’
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, ‘আমরা ইব্রাহিমের কন্ট্রাক্ট ট্রেসিংগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। কারণ, তিনি যেখানে যেখানে গেছেন এতে করে সেসব এলাকার লোকজন করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়ে গেছে। সেসব স্থান ও লোকজন চিহ্নিত হওয়ার পর আমরা সেসব এলাকা লকডাউনসহ তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে নেব।’
Comments