নামেই লকডাউন, বাড়ছে ঝুঁকি

লকডাউনের মধ্যেই ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল ফিরে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এক নারী শিক্ষার্থী (২১)। তিনি শ্রীমঙ্গলের একটি চা-বাগানের বাসিন্দা এবং শ্রীমঙ্গলের একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী৷
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

লকডাউনের মধ্যেই ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গল ফিরে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন এক নারী শিক্ষার্থী (২১)। তিনি শ্রীমঙ্গলের একটি চা-বাগানের বাসিন্দা এবং শ্রীমঙ্গলের একটি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী৷

গত ২২ এপ্রিল তিনি পরিবারসহ ঢাকার যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকা থেকে শ্রীমঙ্গল যান। পরদিন ২৩ এপ্রিল পরিবারের সব সদস্যের করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করে শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। সেই নমুনা পরীক্ষার ফল আসে গতকাল সোমবার রাতে। পরিবারের সবার ফল নেগেটিভ আসলেও ওই নারীর ফল পজিটিভ আসে৷

লকডাউনের মধ্যেই ঢাকা থেকে কীভাবে শ্রীমঙ্গল আসলেন আক্রান্ত নারীর পরিবার, এ নিয়ে জেলায় শুরু হয়েছে আলোচনা৷

গত ১৩ এপ্রিল থেকে মৌলভীবাজার জেলাকে লকডাউন ঘোষণা করেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন। তার দেওয়া আদেশে স্পষ্ট উল্লেখ ছিল, লকডাউন চলাকালীন কেউ জেলায় প্রবেশ করতে বা বের হতে পারবেন না। এমনকি উপজেলা থেকে উপজেলাতেও চলাচল করা যাবে না৷ কিন্তু, এই লকডাউনের মধ্যেও ওই পরিবারটির শ্রীমঙ্গলে প্রবেশ করায় লকডাউনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

একটি সূত্র জানিয়েছে, আক্রান্ত নারী পরিবারসহ ঢাকা থেকে আসার জন্য কয়েকটি পরিবহন ব্যবহার করেছেন এবং কিছুটা পথ হেঁটেও এসেছেন। তবে, আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, আক্রান্ত নারীর পরিবার অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা থেকে মৌলভীবাজারে এসেছেন৷

এ বিষয়ে কথা বলতে ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তারা ফোন ধরেননি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, লকডাউন কার্যকর করার ক্ষেত্রে শুরু থেকেই প্রশাসন যথেষ্ট সচেতন নয়। লকডাউন কার্যকর করার পর থেকেই শ্রীমঙ্গল শহরে প্রায় প্রতিদিনই অন্যান্য শহর থেকে মানুষ প্রবেশ করছেন। বিশেষ করে বিভাগের সবচেয়ে করোনা আক্রান্ত জেলা হবিগঞ্জ থেকে প্রতিনিয়ত শ্রীমঙ্গল অনেকে ঢুকছে৷

স্থানীয় প্রাণী চিকিৎসক জীবন দেব দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, লকডাউনের মধ্যেই হবিগঞ্জের বানিয়াচং থেকে আজ সকালেও আমার পাশের বাসায় দুই জন এসেছেন এবং তারা অবাধে চলাফেরা করছেন৷

একই ধরনের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলের অধিকাংশ এলাকাগুলো থেকেই। জানা গেছে, শ্রীমঙ্গলের প্রবেশমুখ লছনা এলাকায় পুলিশের টহল টিম থাকে। কিন্তু, এলাকাটি পাহাড়ি হওয়ায় বিভিন্ন জেলা ও ঢাকা থেকে আগত মানুষ সহজেই পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে শ্রীমঙ্গল শহরে ঢুকে পড়ছে৷ কিছুসংখ্যক মানুষ আবার হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে গাড়ি থেকে নেমে রেললাইন ধরে হেঁটে আসারও খবর পাওয়া গেছে৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীমঙ্গল চৌমোহনার এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, তিন জন ঢাকার সাভার থেকে হেঁটে রওনা দিয়ে গত ২৬ এপ্রিল ভোররাতে চৌমোহনা এসে পৌঁছান৷

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত দুদিন আগে ঢাকা থেকে স্থানীয় এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষের স্ত্রী ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে শ্রীমঙ্গলে চা-বাগানে নিজ বাসায় উঠেন। পরে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে তাকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলে৷

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, শহরে ঢোকার একাধিক রাস্তা থাকায় বিভিন্ন গ্রামের রাস্তা ও অলি-গলি দিয়ে লোকজন শহরে ঢুকে পড়ছেন। তাদের ঠেকানোটা আমাদের জন্য কষ্টকর হয়ে পড়েছে৷

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী হৃদয় দাশ শুভ বলেন, ‘ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে শ্রীমঙ্গলে করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষ আসছে। লকডাউন হলেও জেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দোকান ছাড়াও অন্যান্য সব ধরনের দোকান খোলা রেখে ব্যবসা চলছে। অপ্রয়োজনে মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে। ফলে করোনার ঝুঁকি বাড়ছে।’

‘করোনা প্রতিরোধে সম্মিলিত প্রচেষ্টা দরকার এখনই। লোক দেখানো লকডাউন বাদ দিয়ে শ্রীমঙ্গলকে করোনা থেকে বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা করা জরুরি। শুধু আলোচনাই নয়, প্রশাসনকে কঠোর অবস্থানে যাওয়ার আহ্বান করছি। শ্রীমঙ্গলকে পুরো লকডাউন করা হোক। এখনো অনেক সময় আছে হাতে। পরে আর কিছুই করার থাকবে না। প্রশাসন কঠোর সিদ্ধান্ত নেক’, যোগ করেন তিনি।

জেলার ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসক নাজিয়া শিরিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিভিন্নভাবে লুকোচুরি করে মানুষ মৌলভীবাজারে প্রবেশ করছে। যেকোনো ফাঁকফোকর দিয়ে প্রবেশ করছে। এ বিষয়ে আমরা আরও কঠোর হচ্ছি।’

শ্রীমঙ্গল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালেক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের দুটি চেকপোস্ট রয়েছে। একটি ভৈরব বাজার, অপরটি লছনা এলাকায়। আমাদের চেকপোস্ট দিয়ে কেউ ঢুকতে পারছে না। কিন্তু, অন্যত্র দিয়ে বিভিন্ন উপায়ে ফাঁকফোকর খুঁজে লোকজন ঢুকছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। এর জন্য মানুষকেও আরও সচেতন হতে হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now