করোনার নতুন ৬ উপসর্গের কথা জানাল সিডিসি
করোনাভাইরাস আক্রান্তের আরও নতুন ছয় উপসর্গ চিহ্নিত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। করোনা আক্রান্তদের পর্যবেক্ষণ করে সিডিসির নির্দেশিকায় নতুন ছয়টি উপসর্গ যুক্ত করা হয়েছে।
সিডিসি বলছে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ার দুই থেকে ১৪ দিনের মধ্যে নতুন ছয়টি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এগুলো হলো- শরীর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, বারবার কাঁপুনি, পেশী ব্যথা, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারানো।
এর আগে সিডিসির নির্দেশিকায় কোভিড-১৯ এর উপসর্গ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, কাশি ও জ্বরের উল্লেখ ছিল।
ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এতদিন যেসব রোগীকে উপসর্গহীন ধরা হচ্ছিল তাদের প্রত্যেকের দেহে এই ছয়টি উপসর্গ ছিল বলে জানা যায়। ফলে, নতুন নির্দেশিকার মাধ্যমে আক্রান্তদের শনাক্ত ও চিকিৎসা সহজ হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্যান্ডেমিক অ্যান্ড ইমার্জিং থ্রেটস কার্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মারিও রামিরেজ জানান, নতুন রোগের উপসর্গ সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি যে, এই ছয়টি কোভিড-১৯ এর উপসর্গ।’
বিশ্বে করোনা মহামারিতে সর্বোচ্চ আক্রান্ত দেশ যুক্তরাষ্ট্র। মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে ৯ লাখ ৮৮ হাজারেরও বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সেখানকার চিকিৎসকরা অনেক রোগীর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে পারছেন, তাদের পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন।
রামিরেজ জানান, অন্যান্য দেশের আক্রান্তের রিপোর্টের পাশাপাশি স্থানীয় রোগীদের পর্যবেক্ষণ করে সিডিসি নতুন ছয় উপসর্গের ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রোগীদের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসকরা এই নতুন উপসর্গ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। বিশেষত, মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই ব্রিটেনে আক্রান্তরা স্বাদ ও গন্ধ না নিতে পারার কথা জানান। ব্রিটেনের কয়েকজন নাক, কান ও গলার চিকিৎসক জানান, প্রাথমিকভাবে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ হিসেবে স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারানোকে বিবেচনা করা যেতে পারে।
ইউরোপে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের ওপর এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮৫ দশমিক ৬ থেকে ৮৮ শতাংশ রোগী স্বাদ ও ঘ্রাণশক্তি হারানোর কথা জানিয়েছেন।
৩৪ বছর বয়সী শেফ ভ্যালারি লোমাস বলেন, ‘প্রায় পাঁচ দিন ধরে আমি কোনোকিছুরই গন্ধ পাচ্ছিলাম না। আমি খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, আর কখনোই হয়তো গন্ধ ও স্বাদ নেওয়ার ক্ষমতা ফিরে পাবো না। চাকরি থেকে অবসর নিতে হবে।’
হার্ভাড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক জো শ্যাপিরো বলেন, ‘আমাদের স্বাদ ও ঘ্রাণ ইন্দ্রিয় একটি আরেকটির সঙ্গে যুক্ত। তাই কোনো একটি কাজ না করলে মনে হয় দুটো শক্তিই হারিয়ে গেছে।’
সিডিসির ওয়েবসাইটে তালিকাভুক্ত না হলেও কোভিড-১৯ আক্রান্তদের আরেকটি সাধারণ উপসর্গ হলো হলো ক্লান্তি। আক্রান্তদের অধিকাংশের মধ্যেই ক্লান্তিভাব দেখা গিয়েছে।
হেডি বাউম্যান বলেন, ‘আমার সারাক্ষণই ক্লান্ত লাগতো। এমনকি বই পড়তে গেলেও ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। বিছানা থেকে দুই পা হাঁটলেই টয়লেট। তবুও আমার মনে হতো টয়লেট থেকে আর বিছানায় ফিরতে পারব না। আমি প্রচন্ড ঠান্ডায় কাঁপতাম। তবে, গায়ে জ্বর ছিল না।’
অন্যদিকে, মার্কিন চিকিৎসকরা কয়েকজন রোগীর ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধার মতো জটিলতা পর্যবেক্ষণ করেছেন। ভাইরাসের প্রাথমিক রিপোর্টে শ্বাসকষ্টের উপসর্গের কথা গেলেও গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ভাইরাসটি কীভাবে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে তা নতুনভাবে পরীক্ষা করে দেখেছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তারা জানান, অনেক রোগীর ফুসফুসে রক্তক্ষরণ দেখা গেছে। রক্ত জমাট বাঁধার কারণে অনেকে স্ট্রোক করেছেন।
রামিরেজ বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ধরনের উপসর্গের কথা জানতে পারছি। কিন্তু, সবগুলোকেই তালিকাভুক্ত করা যায় না। কাদের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা প্রয়োজন সেটা ঠিক করতে হলে অবশ্যই যাচাই বাছাই করে উপসর্গের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে হবে।’
চীনের প্রায় ৮০ হাজার আক্রান্তের রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ৮০ শতাংশ রোগীর দেহেই ওই ছয়টি হালকা উপসর্গ ছিল।
রামিরেজ বলেন, ‘কখন করোনা পরীক্ষা করতে হবে কিংবা আইসোলেশনে নিতে হবে- এসব ঠিক করার জন্য নতুন ছয়টি উপসর্গকে মার্কিন চিকিৎসকরা কয়েক সপ্তাহ ধরেই গুরুত্ব দিয়ে আসছেন। সিডিসির গাইডলাইনে সংযুক্ত হবার পর এখন এটা বিশ্বের কাছেও তুলে ধরা হলো।’
এর বাইরে আরও কয়েকটি উপসর্গ নিয়ে সিডিসি পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান তিনি। সেগুলো হলো- শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা ও ঠোঁট নীল হয়ে যাওয়া।
Comments