করোনাভাইরাস: ‘৯৯ শতাংশ কার্যকর’ অ্যান্টিবডি পরীক্ষা

করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ইউরোপে এক ধরনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শরীরে করোনা শনাক্তে পরীক্ষাটি ৯৯ শতাংশ সফল বলে দাবি করেছে অ্যাবট ল্যাবরেটরিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।
ছবি: রয়টার্স

করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য ইউরোপে এক ধরনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। শরীরে করোনা শনাক্তে পরীক্ষাটি ৯৯ শতাংশ সফল বলে দাবি করেছে অ্যাবট ল্যাবরেটরিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান।

অ্যাবট ল্যাবরেটরিজের যুক্তরাজ্য শাখার বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ইনডিপেন্ডেন্টকে জানায়, আগামী মে মাসের মধ্যেই কয়েক লাখ অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য ইউরোপের ল্যাবগুলোকে প্রস্তুত করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওই প্রতিষ্ঠানটির ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা ইতোমধ্যেই সিই মার্ক অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সুরক্ষা নীতির সার্টিফিকেট পেয়েছে।

রিডিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সেলুলার মাইক্রোবায়োলজির সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইমন ক্লার্ক ইনডিপেন্ডেন্টকে বলেন, ‘মহামারি মোকাবিলায় এই পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন যে, আপনি কখনো ভাইরাসের সংস্পর্শে এসেছেন কিনা। কারো দেহে ভাইরাসটি সংক্রমণের পর প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) তৈরি হয়েছে কিনা। তবে, প্রতিরোধ ক্ষমতার ব্যাপারে এই পরীক্ষা নিশ্চয়তা দিতে পারবে না। কারণ, অ্যান্টিবডি থাকলেও তা আপনাকে সুরক্ষিত করবে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা নেই।’

তিনি জানান, শরীরে কোনো রোগের অ্যান্টিবডি থাকলে সাধারণত কেউ আর ওই রোগে আক্রান্ত হয় না। কিন্তু, এই ভাইরাসটি নতুন।  অনেক করোনায় আক্রান্তদের মধ্যে হালকা উপসর্গ দেখা যায়, কিছুদিনের মধ্যেই তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন। সেক্ষেত্রে তাদের দেহে ইমিউনিটি তৈরি হতে পারে। কিন্তু ইমিউনিটি কতদিন থাকবে সে ব্যাপারে এখনো নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।

ডা. ক্লার্ক আরও জানান, এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষাটি কার্যকর কারণ এর মাধ্যমে মোট জনসংখ্যার কত শতাংশের মধ্যে ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেছে তা জানা যাবে। তবে, এটি সাধারণ জনগণ পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক সময় লাগতে পারে।

পরীক্ষাটি করোনাভাইরাস আক্রান্তের দেহে তৈরি ইমিউনোগ্লোবিন জি (IgG) প্রোটিন শনাক্ত করে। সাধারণত কোনো ভাইরাসের ইমিউনিটি পরীক্ষার জন্য দুই ধরনের অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়। একটি হলো ইমিউনোগ্লোবিন জি (IgG), অন্যটি ইমিউনোগ্লোবিন এম (IgM)।

দেহে ইমিউনোগ্লোবিন এম (IgM) কিংবা দুটোর উপস্থিতি থাকলেই কেবল ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা (ইমিউনিটি) তৈরি হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়।

আক্রান্তের দেহে ইমিউনোগ্লোবিন জি (IgG) প্রোটিন কয়েক মাস এমনকি বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। অ্যাবট জানায়, ইমিউনোগ্লোবিন এম (IgM) অ্যান্টিবডি শনাক্ত করার পদ্ধতিও তারা আবিস্কারের চেষ্টা করছে।

অ্যাবট জানায়, ৭৩ জনের মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা যাওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে তাদের পরীক্ষা করে ৯৯ শতাংশ কার্যকারিতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়াও, ১ হাজার ৭০টি নেগেটিভ নমুনা পরীক্ষা করে সবগুলো রিপোর্টে অ্যান্টিবডিতে কোভিড-১৯ নেই বলে জানা গেছে।

যুক্তরাজ্যের গবেষণাগারগুলোর যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেই অ্যাবটের এই পরীক্ষাটি করা যাবে।

অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করানো রোগী শনাক্তের জন্য জরুরি। কারণ এর মাধ্যমে যাদের দেহে ভাইরাসটির সংক্রমণ ছিল, তারা কাজে ফিরে যেতে পারবেন কিনা সেটি জানা যাবে। অন্যদিকে, স্বাস্থ্যকর্মীসহ জরুরি সেবায় নিয়োজিতদের জন্য পরীক্ষাটি গুরুত্বপূর্ণ।

তবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সার্স-কোভ-২ এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরির এখনো কোনো প্রমাণ নেই। সুস্থ হয়ে ওঠার পর দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হলেও দ্বিতীয়বার সংক্রমণ হবে না এমন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এদিকে, লকডাউন প্রত্যাহার ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষাটি ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছে যুক্তরাজ্য।

যুক্তরাজ্যে সরকারিভাবে করোনা পরীক্ষার নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধ্যাপক জন নিউটন। তিনি জানান, সাধারণ মানুষ আগামী মে অথবা জুনের শুরুতে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে পারবেন।

বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে আশাবাদী যে, প্রয়োজনের সময় আমরা ব্যাপকহারে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করতে পারবো।’

যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, যেসব মানুষ কাজে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন, যাদের বয়স সাধারণত ৬৫ বছরের ওপরে। তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের এই অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করানো হবে।

এতোদিন পর্যন্ত পিসিআর মেশিনের পরীক্ষাকে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছিল। যদিও পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত যে কম-বেশি ৩০ শতাংশ ভুল ফল পিসিআর মেশিনে পরীক্ষাতেও হয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে এন্টিবডি পরীক্ষার এই সাফল্যের দাবি নিঃসন্দেহে এক উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।

Comments

The Daily Star  | English

Fashion brands face criticism for failure to protect labour rights in Bangladesh

Fashion brands, including H&M and Zara, are facing criticism over their lack of action to protect workers' basic rights in Bangladesh, according to Clean Clothes Campaign (CCC)..One year after a violent crackdown by state actors and employers against Bangladeshi garment workers protesting

Now