নেই সুরক্ষা সরঞ্জাম, ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিচ্ছেন পল্লী চিকিৎসকরা

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি আছে জেনেও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন পল্লী চিকিৎসকরা। সে কারণে দিনকে দিন তাদের কাছে যাওয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
করোনা-ঝুঁকি নিয়েই সেবা দিচ্ছেন পল্লী চিকিৎসকরা। ছবি: স্টার

করোনাভাইরাসের ঝুঁকি আছে জেনেও সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন পল্লী চিকিৎসকরা। সে কারণে দিনকে দিন তাদের কাছে যাওয়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।

লালমনিরহাটে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার ও কুড়িগ্রামে সাড়ে নয় হাজার পল্লী চিকিৎসক রয়েছেন। করোনা-ঝুঁকিতে তাদের কেউই চিকিৎসাসেবা দিতে পিছপা হননি। বরং আগের চেয়ে তাদের সেবা দেওয়ার পরিমাণ আরও বেড়েছে। তাদের কাছেই এখন ভিড় করছেন রোগীরা। তবে, তাদের কোনো সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই।

লালমনিরহাট শহরের উত্তরা সিনেমা রোডের পল্লী চিকিৎসক আব্দুল আজিজ বলেন, ‘রোগীর চাপ বেড়েছে অনেক। আমাদের কাছে চিকিৎসাসেবা পেতে সাধারণ মানুষরা ভিড় করছেন। তাদের বেশিরভাগই আমাদের পরিচিত, আশপাশেই বসবাস করেন। তাই কাউকে ফেরাতে পারিনা।’ 

‘করোনা-ঝুঁকি আছে জেনেও আমরা সাধারণ মানুষের কাছাকাছি থেকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি’, যোগ করেন তিনি।

শহরের শাহজাহান কলোনি তোরনের পল্লী চিকিৎসক মিজানুর রহমান মিজু বলেন, ‘মানুষের সেবা করাই আমাদের মূল লক্ষ্য ও অঙ্গীকার। আমরা সাধ্যমতো সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি।’

‘আমরা করোনা-ঝুঁকি নিয়েই সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছি। কিন্তু, আমাদের কোনো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম নেই’— বলেছেন লালমনিরহাট শহরের বিডিআরহাট এলাকার পল্লী চিকিৎসক মৃনাল কান্তি রায়।

তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল, ক্লিনিকে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকের অনীহা থাকতে পারে। কিন্তু, আমাদের কোনো অনীহা নেই। এখন প্রতিদিন গড়ে ৭০ জনের মতো রোগী আসছেন চিকিৎসার জন্য। যা আগের চেয়ে দ্বিগুণ।’

স্থানীয়রা বলছেন, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকরা সাধারণ রোগীদেরও চিকিৎসাসেবা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাই মানুষ পল্লী চিকিৎসকদের কাছে যাচ্ছেন। ঝুঁকি নিয়েই সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা দিচ্ছেন তারা। তাদের কোনো ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) নেই। এ ছাড়া, তাদের কোনো ধরনের প্রণোদনা সুবিধার আওতায় আনা হয়নি।

শহীদ শাহজাহান কলোনির বাসিন্দা রাজু আহমেদ বলেন, ‘আমরা এখন পল্লী চিকিৎসকদের কাছ থেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছি। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে এখন হয় চিকিৎসক থাকেন না, আর থাকলেও চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন না। পল্লী চিকিৎসকরা এখন আমাদের ভরসাস্থল’

লালমনিরহাট জেলা পল্লী চিকিৎসক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দিলীপ চন্দ্র বর্মণ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ ও মেডিসিন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করেও পিপিই পাচ্ছি না। আর যেহেতু ব্যক্তিগত ব্যয়ে পিপিই কেনার সামর্থ্য পল্লী চিকিৎসকদের নেই, তাই বাধ্য হয়েই সুরক্ষা ছাড়া সাধারণ মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। করোনা দুর্যোগে সারাদেশে পল্লী চিকিৎসকরা ঝুঁকি নিয়েই চিকিৎসকসেবা দিচ্ছেন।’

করোনা দুর্যোগকালে দেশের সাধারণ মানুষকে সাধ্যমতো চিকিৎসাসেবা দেওয়া পল্লী চিকিৎসকদের জন্য সুরক্ষা ব্যবস্থাসহ প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে— সরকারের কাছে এমন দাবিই করছেন দিলীপ চন্দ্র বর্মণসহ অন্যান্য পল্লী চিকিৎসকরা।

লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা-ঝুঁকি নিয়েই পল্লী চিকিৎসকরা যে কাজ করছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। সরকারিভাবে তাদের সুরক্ষাসামগ্রী দেওয়া না গেলেও আমি বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানিগুলোকে বলেছি, যাতে তাদের সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয়।’

সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘আমরা পল্লী চিকিৎসক সমিতিকে বিষয়টি অবগত করেছি। বর্তমানে পল্লী চিকিৎসকরা সাধারণভাবেই সেবা দিচ্ছেন। তাদের বলেছি, আপনারা নিজেদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে রোগীদের চিকিৎকসেবা দেবেন। তবে, সরকারিভাবে তাদের সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়ার কোনো বার্তা আমাদের কাছে এখনো আসেনি।’

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago