প্রবাস

করোনা মোকাবিলায় ইন্দোনেশিয়ার অভিজ্ঞতা

চীন সরকারিভাবে উহানে করোনা মহামারির ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইন্দোনেশিয়া আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বাণিজ্যিক কারণে বিপুল সংখ্যক চীনা নাগরিক ইন্দোনেশিয়ায় বসবাস করে থাকেন এবং দেশটির বড় শহরগুলোর সঙ্গে চীনের সরাসরি উড়োজাহাজ যোগাযোগ আছে।
প্রমোদতরী ‘এক্সপ্লোরার ড্রিম’ থেকে জাকার্তা বন্দরে নামার পর জাহাজের কর্মীদের দ্রুত করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ২৯ এপ্রিল ২০২০। ছবি: রয়টার্স

চীন সরকারিভাবে উহানে করোনা মহামারির ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইন্দোনেশিয়া আন্তর্জাতিক বন্দরগুলোতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বাণিজ্যিক কারণে বিপুল সংখ্যক চীনা নাগরিক ইন্দোনেশিয়ায় বসবাস করে থাকেন এবং দেশটির বড় শহরগুলোর সঙ্গে চীনের সরাসরি উড়োজাহাজ যোগাযোগ আছে।

প্রাথমিকভাবে সার্স ও মার্স মহামারি প্রতিরোধের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে থাকে ইন্দোনেশিয়া। দেশব্যাপী ১২০টি হাসপাতালে সম্ভাব্য রোগীর জন্য আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়। চীনের হুবেই প্রদেশে বসবসরত নাগরিকদের ফিরিয়ে এনে একটি দ্বীপে বাধ্যতামূলক কোয়ারিন্টিনে রাখা হয়। প্রতিবেশী দেশগুলোতে করোনা রোগী শনাক্ত হলেও ইন্দোনেশিয়ায় কোনো রোগী শনাক্ত না হওয়ার কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে দেশটি। গত ২ মার্চ দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো দুই জন করোনা রোগী শনাক্তের ঘোষণা দেন।

কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় ইন্দোনেশিয়া পুরোপুরি লকডাউনের পথ অনুসরণ না করে দক্ষিণ কোরিয়ার দেখানো সামাজিক দূরত্ব রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করে। গণপরিবহন, অফিস-আদালত ও কলকারখানায় সামাজিক দূরত্বের বিষয়ে কড়াকড়ি ব্যবস্থা চালু রাখা হয়। গণজমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউন না করে স্থানীয় সরকারের ওপর প্রয়োজনে নিজ এলাকায় লকডাউনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দেয়। দেশব্যাপী ১২০টি হাসপাতালের পাশাপাশি দুটি দ্বীপ ও জাকার্তায় ২০১৮ সালের এশিয়ান গেমস ভিলেজে জরুরি অস্থায়ী কোভিড হাসপাতাল চালু করা হয়। তবে কিটের অভাবে শনাক্তকরণ পিসিআর টেস্টের সংখ্যায় পিছিয়ে থাকে দেশটি। পিসিআর টেস্ট কিট সংগ্রহ করার উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি গণহারে র‌্যাপিড টেস্ট শুরু করা হয়। ড্রাইভ থ্রু টেস্টের ব্যবস্থা করা হয় বিভিন্ন স্থানে। পিসিআর টেস্টে শনাক্ত রোগীর চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি র‌্যাপিড টেস্টের মাধ্যমে সম্ভাব্য আক্রান্তদের পৃথক করে নিজের বাসায় ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনের নীতি গ্রহণ করে দেশটি। তবে দূরপাল্লার যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখায় বড় শহরগুলো থেকে বিপুল সংখ্যক মানুষ আদি বাসস্থানে পাড়ি জমাতে থাকে। বিভিন্নস্থানে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে এলাকাভিত্তিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়।

প্রথমদিকে, সংক্রমণের কেন্দ্রভূমি ছিল রাজধানী জাকার্তা। প্রথম রোগী শনাক্তের প্রায় ১ মাস পর ১০ এপ্রিল তিন কোটি মানুষের এই মহানগরী আংশিক লকডাউন ঘোষণা করা হয়। মেট্রো, বাস, ট্রেন চলাচল কমিয়ে সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়। দূরপাল্লার গণপরিবহন চালু থাকলেও সংখ্যা কমিয়ে দেওয়া হয়। এলাকাভিত্তিক গণহারে র‌্যাপিড টেস্ট শুরু করা হয়। ফেসমাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়। প্রত্যেক নাগরিককে দুটি করে ফেসমাস্ক বিনামূল্যে দেওয়া হয়। সংক্রমণ সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকায় গত ২৪ এপ্রিল জাকার্তা মহানগর এলাকায় অফিস, শপিং মল, বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দূরপাল্লার যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়। মহানগরের ভেতরে গণপরিবহন এখনও চালু রয়েছে। সীমিত আকারে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটও চালু রাখা হয়েছে।

মহামারির প্রথম দিকে স্বাস্থ্যকর্মীদের পিপিই সংকট থাকলেও দ্রুততার সঙ্গে তা সামাল দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যেই পর্যাপ্ত সংখ্যক পিসিআর কিট সংগ্রহ করা হয়েছে। এখন দিনে প্রায় ১০ হাজার পিসিআর টেস্ট করা হচ্ছে। কোভিড চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য পদবি অনুসারে বাংলাদেশি মুদ্রার হিসাবে মাসে ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকার প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।

এই মহামারি মোকাবিলায় শিল্পভিত্তিক অর্থনীতির দেশ ইন্দোনেশিয়া সমালোচনা ও সতর্কবাণী উপেক্ষা করে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিষয়টি কড়াকড়িভাবে আরোপ করে কলকারখানা চালু রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে। এখনও দেশটির এক-তৃতীয়াংশ শিল্পকারখানা চালু রয়েছে। এই মহামারি সামাল দিতে প্রায় ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নেওয়া হযেছে। দেশটির ৯ থেকে ১০ শতাংশ গরিব মানুষের জন্য ডিজিটাল ব্যবস্থায় মাসিক অর্থ সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাসের বিল মওকুফ করে দেওয়া হয়েছে।

গত এক সপ্তাহ ধরে ইন্দোনেশিয়ায় দৈনিক কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের সংখ্যা কমতির দিকে। জাকার্তায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা কমলেও অন্যান্য এলাকায় বেড়ে গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটিতে আক্রান্ত সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়েছে। মারা গেছেন ৭৮২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ১,৫২২ জন।

বলা যায় চলমান কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবেলায় বিশেষ কোনো দেশ বা মডেল অনুসরণ না করে, নিজস্ব একটি ঝুঁকিপূর্ণ নীতিতে চলছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটির অনুসৃত এই স্বাতন্ত্র্য নীতি ঠিক নাকি ভুল তা হয়তো ভবিষ্যতে জানা যাবে। তবে ভুল হলে দেশটিকে অনেক বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

এমআর করিম রেজা, ডেরম্যাটোলোজিস্ট

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

12h ago