পটুয়াখালীতে ইটভাটা মালিকের সাজা ভোগ করছেন শ্রমিক

Patuakhali Worker.jpg
সাজা ভোগকারী শ্রমিক মো. তারেক খান। ছবি: সংগৃহীত

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের ধানদী গ্রামের মেসার্স সিয়াম নামে একটি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর ওই ভাটার মালিকের সাজা না দিয়ে এক শ্রমিককে মালিক বানিয়ে ২০ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মালিকের পরিবর্তে প্রায় দেড় মাস ধরে কারাগারে সাজা ভোগ করছেন ওই শ্রমিক। ভাটার মালিক একই ইউনিয়নের নাজিরপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আজিজ বহাল তবিয়তে আছেন।

বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, লাইসেন্স ছাড়া ইট পোড়ানোর দায়ে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৩ (সংশোধিত)’ অনুযায়ী ওই ভাটার মালিককে চলতি বছরের ১৯ মার্চ ২০ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি বর্তমানে পটুয়াখালী জেলা কারাগারে আছেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের নেতৃত্বে ছিলেন বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল হালিম।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মালিক বানিয়ে যাকে দণ্ড দেওয়া হয়েছে, তিনি ওই ভাটার শ্রমিক। নাম মো. তারেক খান (২৮)। তার বাড়ি উপজেলার নওমালা ইউনিয়নের নওমালা গ্রামে। বাবার নাম আবদুল মতিন খান।

ভাটার মালিক আবদুল আজিজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি যে ভাটার মালিক তা সবাই জানে। কিন্তু কী কারণে আমার শ্রমিককে মালিক বানিয়ে সাজা দেওয়া হয়েছে, তা আমার জানা নেই।’

তিনি জানান, তারেক গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে শ্রমিক হিসেবে তার ভাটায় কাজ করছেন। তিনি খুবই ভালো স্বভাবের একজন মানুষ।

তারেকের বাবা আবদুল মতিন বলেন, ‘অন্যায়ভাবে আমার নিরপরাধ ছেলেকে সাজা দেওয়া হয়েছে। এই সাজার বিরুদ্ধে আপিল করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের সইমোহর প্রয়োজন। যথানিয়মে সইমোহর পাওয়ার জন্য ২২ মার্চ আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সইমোহরের কাগজ দিতে গড়িমসি করছেন।’

তিনি জানান, গত ২৩ মার্চ সশরীরে আবদুল হালিমের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে সইমোহরের জন্য কান্নাকাটি করলে, আসল মালিককে তার (পরিচালক) সঙ্গে দেখা করতে বলে তাকে বিদায় করেন তিনি।

তারেকের স্ত্রী ফারজানা আক্তার (২৩) মোবাইলে জানান, ‘শ্রমিককে কেন মালিক বানিয়ে সাজা দেওয়া হল? আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।’

তিনি আরও বলেন, আমার পাঁচ বছরের শিশু আবদুল্লাহ ওর বাবার সঙ্গে ঘুমাতো। এখন বাবাকে ছাড়া ঘুমাতে চায় না। সারাক্ষণ বাবা বাবা বলে ডাকে আর কান্না করে।

তারেকের মা নাছিমা বেগম (৫০) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বাবারা, তোমরা আমার নিরপরাধ ছেলেকে মুক্ত করে দাও।’

বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুল হালিম বলেন, ‘ভাটাটি অবৈধ। তাই যাকে উপস্থিত পাওয়া গেছে, তাকেই মালিক হিসেবে ২০ লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।’

সাজার সইমোহর দিতে বিলম্ব কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে অফিসের সব কার্যক্রম বন্ধ। তাই সইমোহর দেওয়া যায়নি।’

Comments

The Daily Star  | English

Israel will take all of Gaza: PM

Strikes kill 52 more; WHO chief says 2 million 'starving'

4h ago