‘মোর ঘরোত খাবার নাই, এ্যালা মুই কি খাং’

Lalmonirhat beggars.jpg
রেজিয়া বেওয়া ও আয়েশা বেওয়া। ছবি: স্টার

‘এ্যালা হামাক কাইও ভিক্ষাও না দ্যায়’ করোনা পরিস্থিতিতে এমনভাবে নিজের দুর্দশার কথা বলছিলেন ভিক্ষাবৃত্তির ওপর নির্ভর করে চলা তিস্তাপাড়ের চর গোবর্ধানের রেজিয়া বেওয়া (৬৭)।

তিনি বলেন, ‘মুই বাড়ি থাকি বেড়াং দশ বাড়ি বেড়ায়া এ্যাকনা চাইল পাইম, কিন্তু এ্যালা আর অঞ্চলের মানুষ হামার আও না শুনে। সরকারি দশ কেজি চাইল আর দুই কেজি আলু পাইছোং তাকে দিয়া কয়দিন বাঁচলুং। ওইল্যা শ্যাষ হয়া গ্যাইছে এ্যালা মুই কি খাং।’

তিনি জানান, ভিক্ষা ছাড়া তার কোন উপায় নেই। কিন্তু সেই ভিক্ষাও এখন আর মিলছে না।

রেজিয়া বেওয়ার মতো তিস্তাপাড়ের বারোঘরিয়ার আর এক ভিক্ষুক আয়েশা বেওয়া (৬৮) জানান, তিনিও সরকারি দশ কেজি চাল ও দুই কেজি আলু পেয়েছেন। তবে তা শেষ হয়ে গেছে এবং এখন ঘরে কোনো খাবার নেই। তাই ভিক্ষার কাজে নেমে পড়েছেন। কিন্তু গ্রাম ঘুরে এক কেজি চালও আর ভিক্ষা মিলছে না। করোনার কারণে কেউ কেউ তাদের বাড়িতে ঢুকতে পর্যন্ত দিচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘হামরাগুলা ভিক্ষার জন্যে আও করলে বাড়ির মালিক বলে দ্যায় নাই, ভিক্ষা নাই। হামরা খালি হাতে আসি।’

‘করোনার আগোত তিন-চার ঘণ্টায় দশ বাড়ি বেড়াইলে ৫-৬ কেজি ভিক্ষার চাইল পাওয়া গ্যাছিল। এ্যালা সারাদিন ঘুরিয়াও এক কেজি চাইল পাবার নাহছোং না। মোর ঘরোত খাবার নাই, এ্যালা মুই কি খাং। দশ বাড়ি না বেড়াইলে তো মোর চলেই না’, বলেন তিনি।

তিস্তাপাড়ের অপর ভিক্ষুক ময়েজ উদ্দিন (৭৫) জানান, করোনার কারণে তারা ভিক্ষার জন্য বাইরে যেতে পারছেন না। আর বাইরে গেলেও মিলছে না ভিক্ষা। সব দোকানপাট বন্ধ থাকায় ভিক্ষার স্থানগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামের মানুষ নিজের খাবার যোগাতেই হিমশিম খাচ্ছে, তাই তারা ভিক্ষা দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন। এ অবস্থায় ভিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে জড়িত লোকজন নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন।

ময়েজ উদ্দিন জানান, তিনি সরকারি দশ কেজি চাল আর দুই কেজি আলু পেয়েছেন। কিন্তু তা দিয়ে আর কয়দিন চলে। শেষ হয়ে গেছে। ঘরে কোনো খাবার না থাকায় করোনার ভয় উপেক্ষা করে ভিক্ষাবৃত্তির কাজে গ্রাম ঘুরছেন, কিন্তু মিলছে না ভিক্ষা।

‘করোনার আগোত হামরা তিনজন ভিক্ষুক সাথে সাথে ঘুরছিলোং আর হামরা প্রত্যেককে ৭-৮ কেজি করি চাইল ভিক্ষা পাইছোং। এ্যালা এ্যাকলায় এ্যাবলায় ঘুরি তাও এক কেজি চাইলও পাবার নাগছোং না। মানুষ এ্যালা ভিক্ষাও দ্যায় না’, বলেন তিনি।

তিনি আরও জানান, করোনার আগে ভিক্ষুকরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেতেন, কিন্তু এখন আর অনুষ্ঠানও হয় না, দাওয়াতও পান না। আগে সপ্তাহে তিন-চারদিন দাওয়াত খেতেন। আর এখন একদিনও দাওয়াত মিলছে না।

‘হামরাগুলা ম্যালা সমস্যাত পড়ি আছি। প্যাটোত ভোগ আছে আর ঘরটাও ঠিক করা হয়নি। এ্যালা ঝড় তুফান হবার নাগছে’, বলেন তিনি।

মহিষখোঁচা গ্রামের বাসিন্দা নফের আলী (৫৫) বলেন, ‘এই সময়টাতে সবাই অভাবে পড়ে গেছেন। সংসার চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে, তাই বাড়িতে কোনো ভিক্ষুক আসলে, তাকে ভিক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না।’

লালমনিরহাট জেলা ভিক্ষুক সমিতির সভাপতি দিলবার হোসেন (৬৬) বলেন, ‘সারা জেলায় ছয় হাজারের বেশি ভিক্ষুক রয়েছেন। করোনা পরিস্থিতিতে অধিকাংশ ভিক্ষুকই সরকারি ত্রাণ পেয়েছেন, কিন্তু সে ত্রাণে আর কয়দিন চলে। ভিক্ষুকরা ভিক্ষার জন্য বের হলেও, ভিক্ষা না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন এবং তাদের অনেককে অনাহারে-অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে।’

‘আমাগো ভিক্ষুকদের এ্যাহোন দুর্দিন যাইতাছে। করোনা আমগোরে কেষ্টে হালাইছে। আমগো কথাও ক্যাডাও ভাবতাছে না’, বলেন এই ভিক্ষুক নেতা।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago