প্রবাস

করোনা মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়ার সাফল্য

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো অস্ট্রেলিয়াতেও নতুন করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঘটে। কিন্তু, সরকারের তৎপরতায় ভাইরাসটি দেশটিতে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েনি। করোনা মোকাবিলায় দক্ষতার সঙ্গেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান সরকার। যে কারণে সেখানে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে।
সিডনির হারবার ব্রিজ। ছবি: রয়টার্স

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো অস্ট্রেলিয়াতেও নতুন করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ঘটে। কিন্তু, সরকারের তৎপরতায় ভাইরাসটি দেশটিতে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েনি। করোনা মোকাবিলায় দক্ষতার সঙ্গেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে অস্ট্রেলিয়ান সরকার। যে কারণে সেখানে করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে।

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় অস্ট্রেলিয়া কতটা সফল হয়েছে, তা আরও স্পষ্ট হবে অন্যান্য উন্নত-ধনী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে।

জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটির করোনাভাইরাস রিসোর্স সেন্টারের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, অস্ট্রেলিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৯৬ জন। যুক্তরাষ্ট্রের এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৬৭ হাজার ৬৮৬ জন। জনসংখ্যার সঙ্গে সমন্বয় করে অনুপাত করলে অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুহার ৪৬ গুণের মতো বেশি।

ব্রিটেনে মারা গেছেন ২৮ হাজার ৫২০ জন। জনসংখ্যার সঙ্গে সমন্বয় করে অনুপাত করলে অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় সেখানে মৃত্যুহার ৯৬ গুণ বেশি। ফ্রান্স ও কানাডায় মারা গেছেন যথাক্রমে ২৪ হাজার ৯০০ জন ও ৩ হাজার ৭৯৫ জন। একইভাবে অস্ট্রেলিয়ার থেকে ফ্রান্স ও কানাডায় যথাক্রমে ৯২ ও ২০ গুণ বেশি।

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় একটি ব্যাপার সুস্পষ্ট হলো। সেটি হলো— এতদিন ধরে বিশ্বের এসব দেশগুলো তাদের নাগরিকদের সুরক্ষার যতসব প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছে, তার পরিকল্পনায় কত ফাঁকফোকর ছিল!

মহামারি করোনাকালে অস্ট্রেলিয়ায় নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য ২৪১ বিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ২৫০ বছরের ইতিহাসে এত বড় প্রণোদনা আর কখনো দেওয়া হয়নি। অন্যান্য দেশ যেখানে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিতেই যথেষ্ট সময় নষ্ট করেছে, সেখানে অস্ট্রেলিয়ান সরকার একটি মুহূর্তও নষ্ট করেনি। দ্রুততার সঙ্গেই প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। অস্ট্রেলিয়া সরকার দেখতে চায়নি যে, অনেক উন্নত দেশগুলোর মতো এখানকার হাসপাতালগুলোর সামনেও শত শত মরদেহবাহী ট্রাক অপেক্ষা করুক।

করোনাকে মোকাবিলায় বিরোধীদল লেবারকে সঙ্গে নিয়েই কাজ করেছে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টি। এই সংকটকালে দেশের নাগরিকরা বুঝতেও পারেননি কারা ক্ষমতায় আছেন আর কারা বিরোধীদলে! ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদল এক হয়েই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করেছে। কারণ তাদের উদ্দেশ্য একটাই। তা হলো— নাগরিকদের সুরক্ষার নিশ্চিত করা। সরকার ও বিরোধীদলের এই সমন্বয়টি ছিল নজিরবিহীন।

অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল সরকারে লিবারেল ও ন্যাশনাল পার্টির জোট ক্ষমতায় আছে। দেশের ছয়টি রাজ্য ও দুইটি টেরিটরির মধ্যে পাঁচটিতেই বিরোধীদল লেবার পার্টি সরকারে রয়েছে। করোনা মোকাবিলায় যে ‘ন্যাশনাল কেবিনেট’ গঠন করা হয়েছে, সেখানে ফেডারেল প্রধানমন্ত্রী, ছয়টি রাজ্যের প্রিমিয়ার ও দুইটি টেরিটরির চিফ মিনিস্টাররা রয়েছেন। ন্যাশনাল কেবিনেটে বিরোধীদল লেবার পার্টির প্রতিনিধিরাই সংখ্যায় বেশি। অথচ করোনা যুদ্ধে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ভুলে, সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে গিয়ে সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করেছেন নাগরিকদের জন্য।

ন্যাশনাল কেবিনেটে বিরোধীদল সংখ্যা গরিষ্ঠ হলেও কখনো তারা সরকারি দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেনি। ফেডারেল সরকার স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। ফ্রন্ট লাইনে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট, চিফ মেডিকেল অফিসার ব্রেন্ডন মারফি ও ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার পল কেলি। ন্যাশনাল কেবিনেটে সংখ্যা গরিষ্ঠতার দোহাই দিয়ে বিরোধীদল লেবার এই ফ্রন্ট লাইনের যোদ্ধাদের কখনো পেছনে টেনে ধরেনি।

করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে ৬৮ শতাংশ। রাজ্যপ্রধানদের জনপ্রিয়তাও বেড়েছে অনেক।

অস্ট্রেলিয়ার বেশ কয়েকটি রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা শূন্য। গোটা দেশে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা দ্রুত কমছে। দেশ জুড়ে লকডাউন শিথিল হয়েছে। খুব দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে নাগরিকরা। করোনা উত্তরকালে গোটা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক ধাক্কা আসবে তা স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়াকেও স্পর্শ করবে। কিন্তু, সেই ধাক্কা মোকাবিলার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ের এই মনোরম দেশটি।

আকিদুল ইসলাম: অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago