করোনার জিনোম তথ্য উদঘাটনে ভারত, পাকিস্তান ও নেপালের পিছনে বাংলাদেশ

দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ করোনাভাইরাসের প্রকৃতি এবং আচরণ আরও ভালোভাবে জানতে এর জিনোম সিকোয়েন্সিং করছে। তবে বাংলাদেশ এখনও জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ শুরু করেনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোস্তাক ইবনে আইয়ুব বলেন, ‘আমাদের দেশে ভাইরাসটি কত দিন থাকবে তা আমরা জানি না। আমরা জানি ভাইরাসটি ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন আচরণ করছে। এর প্রকৃতি বোঝার জন্য আমাদের জিনোম সিকোয়েন্সিং দরকার।’

দেশের বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের জিনোম সিকোয়েন্সিং সক্ষমতা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা যেতে পারে। আমাদের সংস্থান আছে এবং সেগুলো আমাদের ব্যবহার করতে হবে।’

জিনোম হলো কোনো জীবের সম্পূর্ণ জিনগত উপাদান।

জিনোম সিকোয়েন্সিং হচ্ছে জিনোমিক প্রেডিকশন নামে পরিচিত একটি প্রক্রিয়ায় রোগ সনাক্ত করার শক্তিশালী মাধ্যম। বিশেষজ্ঞরা জানান, ভাইরাসের যখন সংক্রমণ হয় তখন তার জিনগত পরিবর্তন শসনাক্ত করতে সহায়তা করে জিনোম সিকোয়েন্সিং।

এই সিকোয়েন্সিং বিজ্ঞানীদের ভাইরাসটির বিভিন্ন বিষয় বুঝতে সাহায্য করে। ভাইরাসটি কত দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে এবং কিভাবে এর ভ্যাকসিন তৈরি করা যেতে পারে সেটিও এর মাধ্যমে বোঝা যায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বায়োটেকনোলজির অধ্যাপক শরীফ আক্তারুজ্জামান জানান, এখন পর্যন্ত তিনটি সেরোটাইপ করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এগুলো হচ্ছে- এ, বি এবং সি।

তিনি বলেন, ‘ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রচুর সংখ্যক এ ও সি সেরোটাইপের করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোতে সবচেয়ে বেশি আছে বি সেরোটাইপ করোনাভাইরাস।’

জিনোম সিকোয়েন্সিং বিজ্ঞানীদের পরবর্তী সময়ের জন্য সঠিক কৌশল তৈরি করতে এবং প্রাদুর্ভাবের ভবিষ্যদ্বাণী করতে সহায়তা করে বলেও তিনি যোগ করেন।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানান, তারা এখন করোনা পরীক্ষা ও প্রাণহানি কমাতে মনোযোগী। জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের পরিকল্পনাও তাদের রয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমরা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কথা ভাবছি। তবে এখন আমাদের অগ্রাধিকার আরও বেশি করোনা পরীক্ষা করা এবং এর বিস্তার ও মৃত্যু কমানো।’

যেহেতু এই ভাইরাস খুব শিগগির দূর হবে না, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে আমরা সিকোয়েন্সিং করব,’ তিনি যোগ করেন।

প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান এবং নেপালের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রোগীর নমুনা থেকে ভাইরাসটির জিনোম সিকোয়েন্স করছে। নিউইয়র্কের বিজ্ঞানীরা ভাইরাসটির সিকোয়েন্সিং থেকে এই সিদ্ধান্ত উপনীত হয়েছেন যে শহরে যে সেরোটাইপ করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি তা ইউরোপ থেকে এসেছে।

কোভিড-১৯ এ পর্যন্ত বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলের পঁয়ত্রিশ লাখেরও বেশি মানুষে সংক্রমিত হয়েছে এবং প্রায় আড়াই লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে।

বাংলাদেশে প্রথম ৮ মার্চ করোনা রোগী শনাক্ত করা হয় এবং আজ সোমবার পর্যন্ত এই ভাইরাসে ১৮২ জন মারা গেছেন এবং শনাক্ত হয়েছেন ১০ হাজার ১৪৩ জন।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সূত্র থেকে জানা যায়, জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের এখনই কোনো পরিকল্পনা নেই তাদের।

আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এএসএম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়েছে। তবে কোনো বড় পার্থক্য পাওয়া যায়নি। আমরা শিগগির এটি করবো।’

তবে কবে নাগাদ জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের কাজ শুরু করবেন তা তিনি বলতে পারেননি।

Comments

The Daily Star  | English

Decision on AL’s registration after receiving govt ban order: CEC

The decision to ban was made at a special meeting of the council following three days of demonstrations demanding a ban on the party

1h ago