স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাড়ি নেই চালক আছে, অ্যাম্বুলেন্স আছে চালক নেই
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের তরং গ্রামের বাসিন্দা শামসুল আলম আখঞ্জী। গতকাল সোমবার বিকালে দুর্গম হাওর-নদী পেরিয়ে অসুস্থ চাচাকে নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চাচাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ওসমানী মেডিকেলের দূরত্ব প্রায় একশ কিলোমিটার। চালক না থাকায় তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা নিতে পারেননি। আশি বছরের মুমূর্ষু চাচাকে নিয়ে বিপাকে পড়েন ভাতিজা শামসুল আলম।
উপজেলায় সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে আর কোনো অ্যাম্বুলেন্স নেই। পরে এই দীর্ঘ পথ যেতে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ব্যবহার করেছেন শামসুল আলম।
জানা যায়, তাহিরপুর উপজেলার অভ্যন্তরীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ খারাপ ও ঝুঁকিপূর্ণ। দ্রুত যাতায়াতের প্রধান মাধ্যম হেমন্তে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল আর বর্ষায় বিভিন্ন ধরণের নৌযান।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স প্রদান করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এতে সুনামগঞ্জের হাওরাঞ্চলের বৃহদাংশের বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হয়। আশা ছিল- তাহিরপুর উপজেলা এবং ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও বিশম্ভরপুর উপজেলার একাংশের লোকজন স্বাস্থ্যসেবার প্রয়োজনে এই অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার করতে পারবেন। তবে প্রয়োজনে অ্যাম্বুলেন্সটি ব্যবহার করতে গিয়ে লোকেরা জানতে পারেন এর চালক নেই, তাই চলছে না অ্যাম্বুলেন্স।
অপরদিকে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো জিপগাড়ি না নেই, তবে চালক আছে। সেই চালক বর্তমানে প্রেষণে সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। যদিও চালকের বেতন তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকেই হচ্ছে।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচও) ইকবাল হোসেন জানান, করোনা পরীক্ষার জন্য উপজেলায় এখন পর্যন্ত ৪৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জনের ফল নেগেটিভ এসেছে। বাকি সাত জনের ফল আজ মঙ্গলবার হাতে আসবে।
তিনি বলেন, ‘সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার কাজ সম্পন্ন হচ্ছে। এ মুহূর্তে অ্যাম্বুলেন্সটি সচল রাখা একান্ত প্রয়োজন। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সটিতে আধুনিক সুযোগসুবিধা রয়েছে। করোনা রোগীদের চিকিৎসায় এটি কাজে লাগবে।’
শামসুল আলম আখঞ্জী বলেন, ‘আমি একজন গণমাধ্যম কর্মী। কিন্তু আমার জানা ছিল না, চারমাস আগে বহুল কাঙ্ক্ষিত অ্যাম্বুলেন্সটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলেও এর কোনো চালক নেই।’
তাহিরপুরের ‘খেলাঘর’ আসরের সাধারণ সম্পাদক মাকছুম মিয়া বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি হিসেবে অ্যাম্বুলেন্স আসলেও, চালক না থাকায় এটি একদিনও ব্যবহার হয়নি। চালক থাকলে হাওরাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ এর সুবিধা পাবে।’
তাহিরপুরের বাসিন্দা শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাজমুস শাকিব অভি বলেন, ‘হাওরবেষ্টিত উপজেলা তাহিরপুর। লোকজন দুর্গম হাওরপাড়ি দিয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসে। এই করোনা দুর্যোগে আমরা দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সটির জন্য চালক চাই।’
তাহিরপুরের ইউএইচও ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমি গতকাল চালক দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত পাঠিয়েছি। উপজেলা সমন্বয় সভায়ও বিষয়টি উত্থাপন করেছি। আশা করছি দ্রুতই চালক পাব।’
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ‘চালকের অভাবে আধুনিক অ্যাম্বুলেন্সটি অচল হয়ে আছে। শিগগিরই এটির জন্য চালক নিয়োগের ব্যবস্থা করব।’
Comments