করোনার প্রভাবে লোকসানে ধরলাপাড়ের কলা চাষিরা

করোনার কারণে বাইরে থেকে পাইকার না আসায় কলা বিক্রি করতে পারছেন না লালমনিরহাট সদর উপজেলার ধরলা নদীর বুকে জেগে উঠা ১০টি চরের শতাধিক কলা চাষি। লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার ধরলা নদীর চর ফলিমারির বাগান থেকে কলা নিয়ে বিক্রি করতে যাচ্ছেন এক চাষি। ছবি: স্টার

করোনার কারণে বাইরে থেকে পাইকার না আসায় কলা বিক্রি করতে পারছেন না লালমনিরহাট সদর উপজেলার ধরলা নদীর বুকে জেগে উঠা ১০টি চরের শতাধিক কলা চাষি। লোকসানের মুখে পড়েছেন তারা।

নগদ টাকার প্রয়োজন হওয়ায় স্থানীয় বাজারে কম দামে কলা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। এতে কোন রকমে পুঁজি উঠলেও লাভের মুখ দেখতে পারছেন না। আবার অনেককে গুনতে হচ্ছে লোকসানও।

ধরলা নদীর বুকে জেগে উঠা চর ফলিমারী, গোড়কমন্ডল, কুরুল, খাটামারী, মাঝের চর, খারুয়ার চর, চর কুলাঘাট, শিবেরকুটি, মন্ডলের চর ও উজানের চর। এসব চরে চাষিরা অন্য কোন ফসল আবাদ করেন না। তারা সারাবছরই কলা চাষ করে যা আয় করেন তা দিয়ে সংসার চলান।

চর ফলিমারীর চাষি আলতাফ হোসেন বলেন, ‘এবার কলার ফলন ভালো হয়েছে। কিন্তু, করোনার কারণে কলা বিক্রি করে ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না। করোনার আগে যে কলা প্রতি পিস ৪ থেকে ৫ টাকা বিক্রি করা হতো তা এখন ২ থেকে ৩ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।’

‘রমজান আসায় স্থানীয় বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘ধরলার চরে অন্য ফসল ভালো না হওয়ায় কলা চাষ করেই আয় করি।’

চর খারুয়ার কলা চাষি আব্দুল হালিম জানান, চরের কলা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়ে থাকে। পাইকাররা এসে চাষিদের বাগান থেকে কলা নিয়ে যায়। কিন্তু করোনার কারণে কোনো পাইকার আসছে না। চাষিরা কলা বিক্রি করে ন্যায্য দামও পাচ্ছেন না। করোনা পরিস্থিতির কারণে ধরলাপাড়ের কলা চাষিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন বলেও তিনি জানান।

একই চরের কলা চাষি আজাহার আলী জানান, একটি কলাগাছের পিছনে চাষির খরচ হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা আর কলা উৎপন্ন হয় ৪০ থেকে ৯০টি পর্যন্ত। কলার ধরন অনুযায়ী প্রতি পিস ২ টাকা থেকে ৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

তিনি এক হাজার কলা গাছ লাগিয়েছেন তার বাগানে। প্রায় সবগুলো গাছে কলা এসেছে। এ বছর কলার ফলন ভালো। কিন্তু দাম পাচ্ছেন না বলে জানান। বলেন, ‘করোনার মন্দ প্রভাবে কলা চাষ নিয়ে চাষিরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।’

একই চরের কলা চাষি আজিজুর রহমান জানান, ধরলার বুকে ১০টি চরে অন্তত ৫০০টি কলার বাগান রয়েছে। এসব বাগানের প্রত্যেকটিতে রয়েছে এক হাজার থেকে আড়াই হাজার পর্যন্ত কলা গাছ। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে চরের দুই হাজারের বেশি মানুষের জীবিকা। এসব চরে যে পরিমাণ কলা উৎপন্ন হয় তার ২০ শতাংশ দিয়ে স্থানীয় চাহিদা মেটে। বাকি আশি শতাংশ কলাই পাঠানো হয় অন্যান্য জেলায়।

লালমনিরহাট সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গেল এক যুগ ধরেই ধরলার চরে কলা চাষ হয়ে আসছে। এখানে অন্য ফসল ভালো না হওয়ায় চরের চাষিরা কলা চাষে ঝুঁকেন। করোনার কারণে এবার দাম সন্তোষজনক না থাকলেও বাম্পার ফলন হওয়ায় তারা খুশি আছেন।’

কৃষি বিভাগ থেকে চরে কলা চাষে পরামর্শ ও চাষের দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়ে থাকে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Teesta floods bury arable land in sand, leaving farmers devastated

40 unions across 13 upazilas in Lalmonirhat, Kurigram, Rangpur, Gaibandha, and Nilphamari are part of the Teesta shoal region

1h ago