‘পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় ওষুধের দাম ও উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে পেরেছি’
দেশব্যাপী চলমান লকডাউনের কারণে যখন অনেক সেক্টরেই স্থবির অবস্থা বিরাজমান, তখনও কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই দেশে ওষুধ উৎপাদন ও সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। এর পেছনে অবদান ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের। তাদের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনার কারণেই এটি সম্ভব হয়েছে।
‘এসব পরিকল্পনা করোনা পরিস্থিতিকালীন ওষুধের সংকট মোকাবিলার পাশাপাশি এটির মূল্যবৃদ্ধি ঠেকাতেও সহায়তা করেছে’— গতকাল বৃহস্পতিবার দ্য ডেইলি স্টারকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনটিই বলেন ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘এমন সময়ে ওষুধের স্বাভাবিক উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করা কঠিন ছিল। পূর্বপ্রস্তুতি থাকায় আমরা কোনো ধরনের বাধা-বিঘ্নতা ছাড়া ওষুধের দাম ও উৎপাদন স্বাভাবিক রাখতে পেরেছি। ফার্মাসিউটিক্যালই একমাত্র সেক্টর যারা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করতে পেরেছে।’
‘পরিস্থিতি আগাম বুঝতে পেরে জানুয়ারির শেষ দিক থেকেই কাজ শুরু করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। সে সময় থেকেই অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে কাঁচামাল আমদানি করা হবে, সেটিসহ নানা বিষয়েই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল’, যোগ করেন তিনি।
মহাপরিচালক বলেন, ‘ওষুধের কাঁচামাল মূলত চীন থেকে আমদানি করা হয়। কিন্তু, করোনাভাইরাস মহামারিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশই চীন। সেই কারণে বিকল্প দেশ খুঁজতে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএপিআই) সঙ্গে একাধিক বৈঠক করে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর।’
‘বর্তমানে ভারত ও ইউরোপের কিছু দেশ থেকে ওষুধের কাঁচামাল সংগ্রহ করছে বাংলাদেশ। ওষুধের স্বাভাবিক উৎপাদন ও সরবরাহ নিশ্চিত করতে কিছু নির্দেশিকা প্রণয়ন করাও আমাদের সিদ্ধান্তের অন্তর্ভুক্ত ছিল’, বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘যদিও কোভিড-১৯’র চিকিৎসায় নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নেই, তবুও সহায়ক কিছু ওষুধের উৎপাদন বাড়িয়েছে ওষুধ প্রশাসন। আমরা প্যারাসিটামল, ভিটামিন-সি, কিছু অ্যান্টিবায়োটিক, বিভিন্ন ভিটামিন পরিপূরকের উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। যাতে করে পরিস্থিতি আরও খারাপ হলেও কোনো ধরনের সংকট তৈরি না হয়।’
‘এ ছাড়াও, করোনার চিকিৎসায় সীমিত পরিসরে ব্যবহার করা রেমডেসিভির ও ফেভিপিরাভিরের মতো কিছু অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ উৎপাদনেও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আশা করছি, আগামী ২০ মের মধ্যে রেমডেসিভির বাজারে আসবে। ইতোমধ্যে দুইটি কোম্পানি এটির উৎপাদন শুরু করেছে। কোম্পানিগুলো যাতে সর্বাধিক উৎপাদন করতে পারে এবং উদ্যোক্তারা যাতে এগিয়ে আসে— এর জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা আমরা করছি।’
‘বাংলাদেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হওয়ার আগে দুই থেকে তিনটি কোম্পানি সীমিত পরিসরে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন উৎপাদন করতো। কিন্তু, বর্তমানে অন্তত ৩৫টি কোম্পানি এটি উৎপাদন করছে’, বলেন তিনি।
মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পারসোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্টের (পিপিই) সংকট দূর করতে এগুলোর আমদানি শুল্কমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছে ওষুধ প্রশাসন। বর্তমানে পিপিই তৈরির কাঁচামাল আমদানিতেও কোনো শুল্ক নেই।’
‘বর্তমানে স্থানীয় অনেক প্রতিষ্ঠানই পিপিই তৈরি করছে এবং আমরাও বিভিন্নভাবে তাদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। স্থানীয়ভাবে তৈরি ও আমদানি করা পিপিইর গুণগত মান পরীক্ষার জন্য আমরা ইতোমধ্যে পাঁচটি ল্যাবকে অনুমোদন দিয়েছি।’
দেশের এই সংকটে যেসব যোদ্ধারা সম্মুখভাগে কাজ করছেন, তাদের উৎসাহ দিতে, তাদের নিয়ে তথ্যপূর্ণ ও ইতিবাচক প্রতিবেদন গণমাধ্যমে প্রকাশ করা উচিৎ বলে মনে করেন মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান।
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। যাতে করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কার হওয়ার পরে সহজেই এটি দেশে উৎপাদন করে সরবরাহ করা যায়।’
‘প্রতি মাসে এক কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের চাহিদা পূরণের সক্ষমতা আমাদের রয়েছে। বাজারে কার্যকর ভ্যাকসিন আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা যেনো যত দ্রুত সম্ভব এটি পাই, সেই চেষ্টাই করছি’, যোগ করেন তিনি।
দেশে প্রচলিত ওষুধ সম্পর্কিত সব নিয়মকানুন তদারকি ও প্রয়োগ করে থাকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। একইসঙ্গে আমদানি সংশ্লিষ্ট কাজসহ কাঁচামাল ও মোড়কীকরণের সামগ্রী সংগ্রহ সংশ্লিষ্ট সব কাজও তারাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
Comments