খাদ্যের অভাবে ভালো নেই তিস্তাপাড়ের মানুষ
করোনা দুর্যোগকালে ভালো নেই তিস্তা পাড়ের লাখো মানুষ। এমনিতে অভাবের মধ্যেই তাদের বসবাস, তার ওপর করোনা দুর্যোগে কর্মহীন হয়ে পড়ায় দারিদ্র্যতা তাদের দুমড়েমুচড়ে ফেলছে। ঘরে খাবারের অভাব কিন্তু হাতে নেই কাজ, নেই কোনো রোজগার। অনেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে পরিবার চালাচ্ছেন।
তিস্তা নদীর চর পশ্চিম হরিণচওড়ার কৃষি শ্রমিক সোহরাব আলী (৫২) বলেন, চরের বেশিরভাগ পরিবারের লোকজন দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনমজুর-শ্রমিকের কাজ করে সংসার চালাতো। কিন্তু, এখন কারও কোনো কাজ নেই। এলাকাতেও নেই কোন রোজগারের ব্যবস্থা। পরিবারের সবাইকে নিয়ে খাবারের কষ্টে দিন কাটাতে হচ্ছে।
এ সময়ে সরকারি- বেসরকারি কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ভিক্ষাবৃত্তি করে জীবিকা নির্বাহকারী এই চরের বাসিন্দা আনোয়ারা বেওয়া (৫৫) একই অভিযোগ করে জানান, তিনিও এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি।
তিনি বলেন, চরে সবার বাড়িতে অভাব। খাবারের অভাব। তাই কেউ ভিক্ষাও দেয় না। করোনার আগে তার নাতি নারায়ণগঞ্জে কাজ করত, তাকে মাঝে মধ্যে কিছু টাকা পয়সা দিত। কাজ না থাকায় সেও বাড়িতে বসে আছে।
কালমাটি মাঝের চরের দিনমজুর আব্দুল ওয়াদুদ (৫৪) বলেন, ‘তিস্তা পাড়ের মানুষের খোঁজ কেউ রাখে না। নদীর বুকে থাকি আমরা। দুর্গম এলাকা হওয়ায়, না আসে জনপ্রতিনিধি, না আসে সরকারি লোক না আসে কোন দয়ালু মানুষ।’
তিনি বলেন, খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাদের। চরে সবার ঘরেই এখন অভাব। তাই কেউ কারো খবর রাখছে না, সহযোগিতা করতে পারছে না।
ঢাকায় শ্রমিকের কাজ করতেন আতিয়ার রহমান (৩৫)। বলেন, যা আয় করতাম তাই দিয়েই বাবা-মাসহ পাঁচ জনের সংসার চলত কোনোরকমে। করোনা পরিস্থিতিতে বাড়িতে চলে আসতে হয়েছে। কবে ফিরতে পারবেন তাও জানেন। হাতে কোন জমানো টাকা নেই। তাই, স্থানীয় সুদ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে চড়া সুদে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছিলেন, সেই টাকাও শেষ।
তিস্তা পাড়ের কেউ কেউ ত্রাণ সহায়তা পেলেও, অধিকাংশ পরিবারই এই সহায়তা পাননি বলে জানান তিনি।
লালমনিরহাটের পাঁচ উপজেলার ৪৫টি ইউনিয়নের মধ্যে তিস্তা পাড়েই ২২টি। এসব ইউনিয়নে তিস্তা নদীর ভাঙন ও বন্যা কবলিত পরিবারের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু তিস্তা পাড়ের ইউনিয়নগুলোতে সরকারিভাবে বিশেষ কোন বরাদ্দ নেই।
এ নিয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা পাড়ের ইউনিয়ন রাজপুরের চেয়ারম্যান মোফাজ্জল হোসেন মোফা বলেন, করোনা দুর্যোগকালে ১৯০০ পরিবারের জন্য সরকারিভাবে ১৯ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পেয়েছিলেন তিনি আর তা বিতরণও করেছেন।
তার ইউনিয়নে ৯ হাজারের বেশি পরিবারে ত্রাণের চাহিদা রয়েছে বলে জানান তিনি।
একই উপজেলার তিস্তা পাড়ের অপর ইউনিয়ন খুনিয়াগাছের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বলেন, তার ইউনিয়নের ১০ হাজার পরিবারের চাহিদার বিপরীতে তিনি ২০০০ পরিবারের জন্য ২০ মেট্রিক টন চাল পেয়েছেন এবং বিতরণ করেছেন।
তিস্তা পাড়ের ইউনিয়নগুলোতে বিশেষ বরাদ্দ থাকলে চরের মানুষের জন্য উপকারে আসত বলে তিনি মনে করেন।
জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, করোনা দুর্যোগকালে তিস্তা পাড়ের চরের জন্য বিশেষ বরাদ্দ দিতে সরকারি কোন নির্দেশনা না থাকায় দেওয়া হয়নি। তবে জনপ্রতিনিধিদের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো জানান, জেলায় এই পর্যন্ত ১০৪৯ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৪৯ লাখ ২৬ হাজার ৮৯৫ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা এক লাখ চার হাজার ৮৮১ পরিবারের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।
Comments