মে মাসের তৃতীয় বা শেষ সপ্তাহে চরম পর্যায়ে যেতে পারে করোনা সংক্রমণ

ঈদের কাছাকাছি সময়ে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব চরম পর্যায়ে যেতে পারে। এমনটিই জানিয়েছে সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। তবে একাধিক স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ বলছেন, এমন ভবিষ্যদ্বাণী করার মত সময় এখনও আসেনি।
ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম পরা এক দম্পতি এবং তাদের দুই সন্তান গতকাল শনিবার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করার পর একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। এই দম্পতির ভাষ্যমতে, তারা করোনা উপসর্গ নিয়ে কয়েক দিন ভোগার পর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে পরীক্ষা করাতে এসেছেন। ছবি: আমরান হোসেন

ঈদের কাছাকাছি সময়ে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব চরম পর্যায়ে যেতে পারে। এমনটিই জানিয়েছে সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি। তবে একাধিক স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ বলছেন, এমন ভবিষ্যদ্বাণী করার মত সময় এখনও আসেনি।

তারা আরও জানান, আরও বেশি করোনা পরীক্ষা ও করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে কঠোরভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলে নির্ভরযোগ্য ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব হত।

গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে জমা দেওয়া এক প্রতিবেদনে কমিটি জানিয়েছে, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ চরম আকার ধারণ করতে পারে এবং পরবর্তী বেশ কয়েক দিন এই পরিস্থিতি স্থির থাকতে পারে। তারা প্রত্যাশা করেছেন জুন মাসের শেষ নাগাদ সংক্রমণের মাত্রা অনেকাংশে কমে যাবে।

বাংলাদেশে মহামারির প্রবণতা বিশ্লেষণে সরকার গঠিত আট সদস্যের কমিটির একজন অধ্যাপক ড. শাহ মনির হোসেন বলেছেন, যদি বিধিনিষেধগুলো দ্রুত তুলে নেওয়া না হয় তাহলে জুনের শেষের দিকে কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার দ্রুত কমতে থাকবে বলে আশা করা যেতে পারে।

প্রতিবেদনে ২৫ জুনের পরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের সুপারিশসহ একটি প্রস্থান পরিকল্পনা সরকারকে দিয়েছে এই কমিটি।

মার্চের শেষের দিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি তদারকি, নিরীক্ষণ এবং প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার জন্য এই কমিটি গঠন করে।

দলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এমএ ফয়েজ, লিয়াকত আলী এবং ইকবাল আনোয়ারও রয়েছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সিনিয়র কনসালটেন্ট অধ্যাপক মনির বলেন, ‘আমাদের দলের পূর্বাভাস, সংক্রমণ চরম আকার ধারণ করার সময় করোনায় আক্রান্তর সংখ্যা ৫০ হাজারের বেশি হতে পারে।’

তিনি আরও জানান, জুনের শেষে পরিস্থিতি যখন সহনীয় মাত্রায় পৌঁছবে তখনও নতুন রোগী শনাক্ত হবে।

কমিটির মতে সংক্রমণ একেবারে বন্ধ হওয়ার জন্য বেশ কিছুটা সময় লাগবে।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আমাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারি তাহলে আমাদের ভবিষ্যদ্বাণীটি সঠিক প্রমাণিত হবে। কিন্তু, আমরা যদি নিষেধাজ্ঞা তুলতে শুরু করি তাহলে ভবিষ্যদ্বাণী ভুল প্রমাণিত হবে।’

স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝার জন্য পরীক্ষার সক্ষমতা বাড়িয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ হাজার করার আহ্বান জানিয়েছেন। এর সঙ্গে, তারা করোনাভাইরাসের কারণে আরোপিত বিধিনিষেধ শিথিল না করার আহ্বান জানান।

সরকারি কমিটির একজন সদস্যও স্বীকার করেছেন যে আরও বেশি পরীক্ষা করা হলে ভবিষ্যদ্বাণীগুলো আরও বেশি নির্ভরযোগ্য হত।

এপ্রিলের শেষের দিকে কয়েকশ পোশাক কারখানা পুনরায় চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে বেড়েছে নতুন করোনা আক্রান্তর সংখ্যা।

এ ছাড়া, সরকার ইতিমধ্যে মসজিদ ও শপিংমলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে এবং আজ থেকে সীমিত আকারে আরও অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আবার তাদের কার্যক্রম শুরু করতে চলেছে।

আরও পরীক্ষা

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল হক গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যতক্ষণ না আমরা প্রতিদিনের পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে পারবো, ততক্ষণ আমরা সংক্রমণের প্রকৃত হার এবং সংক্রমণের প্রকৃত সংখ্যা বলতে পারব না। আমরা পাঁচ হাজার থেকে ছয় হাজার পরীক্ষার মধ্যে আটকে আছি। প্রতিদিন কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষের পরীক্ষা করতে হবে। আর পরীক্ষা সারা দেশেই করা উচিত।’

তিনি যোগ করেন, ‘এরপরে আমাদের সংক্রমণের হার বৃদ্ধি লক্ষ্য করে ভবিষ্যদ্বাণী করা উচিত। তার আগে নয়।’

সরকারকে করোনাভাইরাসের কারণে দেওয়া বিধিনিষেধ আর শিথিল না করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘শপিংমলগুলোর মতো কিছু চালু করার অনুমতি না দিয়ে সরকারের উচিত বিধিনিষেধের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা।’

করোনা মোকাবিলায় জনগণকে এগিয়ে আসা এবং জড়িত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক মোজাহেরুল হক।

সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিদওয়ানুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষার সংখ্যা অপ্রতুল হলেও আমরা প্রতিদিনই দেখছি সনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে। করোনা আক্রান্ত রোগীর প্রকৃত সংখ্যা অবশ্যই আরও অনেক বেশি।’

সাধারণত প্রতিদিন নতুন রোগী বাড়তে থাকলে তিন বা চার সপ্তাহে এই সংখ্যা চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় জানিয়ে তিনি বেলেন, ‘তবে, আমরা লকডাউনটি শিথিলভাবে প্রয়োগ করছি। মানুষ আংশিকভাবে লকডাউন মেনে চলেছে। তাই, আমাদের কাছে (সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী করার) তেমন একটা সুযোগ নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্বের কোথাও এভাবে লকডাউন প্রয়োগ করা হয়নি। করোনা মোকাবিলায় শুধু লকডাউনই যথেষ্ট নয়, আমাদের খুঁজে বের করতে হবে করোনা রোগীদের এবং তাদের আইসোলেশনে রাখতে হবে।’

জানতে চাইলে অধ্যাপক শাহ মনির বলেন, ‘পরিস্থিতি কতটা খারাপ হতে পারে সে সম্পর্কে ধারণা দিতে এবং আগে থেকেই পরিকল্পনা তৈরি করতে সহায়ক হিসেবে এ ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রয়োজন রয়েছে।’

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

19m ago