নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুরে স্বাস্থ্যকর্মী, দুই শিশুসহ আরও ১৬ জনের করোনা শনাক্ত
নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরে আরও ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দুই জেলায় ১০৯ জনের করোনা শনাক্ত হলো।
নোয়াখালী সিভিল সার্জন ডা. মো. মোমিনুর রহমান ও লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল গাফফার আজ সোমবার দুপুরে দ্য ডেইলি স্টারকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তারা আরও জানান, নোয়াখালীতে নতুন করে ১৪ জন শনাক্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই শিশু রয়েছে। এছাড়াও, লক্ষ্মীপুরে এক স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘উপজেলার নদোনা ইউনিয়নের পাঁচ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে একই পরিবারের ৫৫ বছর বয়সী ও ২৩ বছর বয়সী দুই জন রয়েছেন।’
‘এছাড়াও, একই পরিবারের ১২, ১০ ও ২ বছর বয়সী তিন শিশু রয়েছে’ উল্লেখ করেন তিনি আরও বলেন, ‘আক্রান্তরা সবাই ঢাকাফেরত। গত ৪ তারিখে তারা ঢাকা থেকে নদোনার নিজ বাড়িতে আসেন। পুলিশের তথ্যের ভিত্তিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল টিম ওই পাঁচ জনের বাড়িতে গিয়ে গত ৫ মে নমুনা সংগ্রহ করেন। নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ আসে।’
‘করোনা শনাক্ত হওয়ার পর তাদের শরীরে উপসর্গ না থাকায় তাদেরকে নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে,’ যোগ করেন তিনি।
আগামীকাল মঙ্গলবার আক্রান্তদের পরিবারের অন্য সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলেও তিনি জানান।
সোনাইমুড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা টিনা পাল জানান, একটি ইউনিয়নের পাঁচ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ার পর আক্রান্তদের বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। তাদের শারীরিক অবস্থা বুঝে হাসপাতালে পাঠানো হবে।
বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার দাস জানান, উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নে একই পরিবারের ৯০ বছর বয়সী একজন ও তার ৩০ বছর বয়সী পুত্রবধূ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বলেন, ‘করোনার উপসর্গ নিয়ে তারা গত ৭ মে হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষার জন্য দিয়ে যান। পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ আসে। অপরদিকে, মিরওয়ারিশপুরে ৩৮ বছর বয়সী নির্মাণ শ্রমিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। চৌমুহনী হাজিপুর এলাকার বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সী ব্যবসায়ী যুবক গত ৬ মে স্বেচ্ছায় নমুনা পরীক্ষার জন্য দিয়ে যান। তার পরীক্ষার ফলাফল পজেটিভ আসে।’
তিনি আরও জানান, চৌমুহনী পৌরসভা এলাকার ৭০ বছর ও ৬০ বছর বয়সী ব্যবসায়ী, ২৯ বছর বয়সী যুবক ও নাজিরপুর এলাকার সার্জিক্যাল প্রোডাক্ট বিক্রেতা (৩০) করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।
‘আক্রান্তদের শারীরিক বাহ্যিক উপসর্গ না থাকায় তাদেরকে নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তাদের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে কারো শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাদেরকে তাৎক্ষণিক নোয়াখালী শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে স্থাপিত করোনা হাসপাতালে পাঠানো হবে।’
বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহাবুব আলম বলেন, ‘আজ সোমবার দুপুরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বাড়ি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিবার ও তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজনদের চিহ্নিত করে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।’
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘জেলার ২০ বছর বয়সী এক কলেজ শিক্ষার্থী করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ৩ মে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে আসেন। সেখানে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা সংগ্রহের ফলাফল পজেটিভ আসে। তাকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তার বাড়িটি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে।’
লক্ষ্মীপুরে করোনা
অপরদিকে, লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলায় এক স্বাস্থ্যকর্মী ও এক ব্যবসায়ী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন জানান, উপজেলার ৬ নং ইউনিয়নের বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। গত ২ মে তিনি হাসপাতালে আসেন। তাকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে তার করোনা পজেটিভ আসে। এ ঘটনায় তার বাড়িটি লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে।
পরিবারে সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।
অপরদিকে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২৮ বছর বয়সী ওয়ার্ড-বয় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাকে হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল গাফফার বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জেলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬১ জন। তাদের মধ্যে সদর উপজেলায় ২৩ জন, রামগঞ্জে ১৯, কমলনগরে সাত, রামগতিতে আট ও রায়পুর উপজেলায় চার জন।’
Comments