বাংলাদেশে করোনা পরীক্ষার হার হাজারে মাত্র ০.৭১ জনের

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল সোমবার ঘোষণা করে ২৪ ঘণ্টায় দেশে এক হাজার ৩৪ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত একদিনে এটাই রেকর্ড পরিমাণ করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা। এ নিয়ে দেশে মোট রোগীর সংখ্যা সাড়ে ১৫ হাজার পার করেছে। নতুন ১১ জনের মৃত্যুতে মোট মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ২৩৯ জনে।
পিসিআর ল্যাব, রামেক

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর গতকাল সোমবার ঘোষণা করে ২৪ ঘণ্টায় দেশে এক হাজার ৩৪ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত একদিনে এটাই রেকর্ড পরিমাণ করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা। এ নিয়ে দেশে মোট রোগীর সংখ্যা সাড়ে ১৫ হাজার পার করেছে। নতুন ১১ জনের মৃত্যুতে মোট মৃত্যু দাঁড়িয়েছে ২৩৯ জনে।

গতকালের স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানায় করোনা পরীক্ষার সুবিধা ধীরে ধীরে আরও বাড়ছে। গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে ঘোষিত তথ্যে জানা যায় দেশে নতুন একটি ল্যাবসহ মোট ৩৭টি ল্যাবে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে সাত হাজার ২০৮টি। এ নিয়ে ২৮ জানুয়ারি থেকে গতকাল পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা এক লাখ ২৯ হাজার ৮৬৫টি।

পরীক্ষার সংখ্যা লাখের ঘরে পৌঁছলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে দেশের জনসংখ্যা এবং অন্যান্য করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশের তুলনায় আমাদের পরীক্ষার সংখ্যা এখনও অপ্রতুল।

তারা বারবার বলছেন পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পরীক্ষার মাধ্যমেই করোনা রোগী শনাক্ত করা এবং শনাক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা ও আইসোলেশনের মাধ্যমে করোনার বিস্তার রোধ সম্ভব।

আওয়ার ওয়ার্ল্ড ইন ডাটা ডট ওআরজি-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে গত শনিবার পর্যন্ত প্রতি এক হাজারে পরীক্ষা করা হয়েছে শূন্য দশমিক ৭১ জন। এই হার ভারত ও পাকিস্তানে আরও বেশি। ভারতে এই হার প্রতি হাজারে এক দশমিক ১৭ জন এবং পাকিস্তানে এক দশমিক ২৮ জন। স্পেনে এই হার হাজারে ৩৪ জন, ইতালিতে ৪১ জন, ফ্রান্সে ১২ দশমিক সাত জন, তুরস্কে ১৫ দশমিক আট জন এবং যুক্তরাজ্যে ১৮ দশমিক ৭১ জন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০০০ জনে ২৬ জনেরও বেশি মানুষের পরীক্ষা করা হচ্ছে। যা কানাডায় ২৮ দশমিক তিন।

ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে, আইসল্যান্ড প্রতি হাজারে ১৫৬ জনের পরীক্ষা করে তালিকার শীর্ষে রয়েছে। এই হিসেবে, অন্যান্য দেশ প্রায় সাড়ে তিন লাখ জনসংখ্যার এই নর্ডিক দেশটির তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

প্রতিদিন বাংলাদেশে যে পরিমাণে পরীক্ষা হচ্ছে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রোগটি কত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে তা এই সংখ্যা থেকে অনুমান করা কঠিন ব্যাপার।

মেডিসিন ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিদওয়ানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘প্রকৃত অবস্থা জানার জন্য পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। এটা না করা হলে আমরা সামনের দিনগুলোর জন্য সঠিক পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত নিতে পারব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভাইরাসটি সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়ায় যত বেশি পরীক্ষা করা হবে, তত বেশি (করোনাভাইরাস) শনাক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

একই ধরণের মত পোষণ করেন কোভিড-১৯ জাতীয় প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির (এনটিএসি) সদস্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে যে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তার ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব না। আমাদের অবিলম্বে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ হাজার পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পরীক্ষা বাড়লে শনাক্ত সংখ্যাও বাড়বে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গত রোববার পরীক্ষা করা নমুনার প্রায় ১৫ দশমিক চার শতাংশ করোনা পজিটিভ এসেছে। আজ (গতকাল সোমবার) এই হার ১৪ দশমিক তিন। এর অর্থ সংক্রমণের হার কমেনি।’

উভয় বিশেষজ্ঞই উল্লেখ করেছেন যে, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ পরীক্ষার সুবিধা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে করোনা শনাক্তর সংখ্যাও।

তারা বলেছেন, মারাত্মক এই ভাইরাসের কারণে অনেকেই সংক্রমিত হচ্ছেন এবং মারা যাচ্ছেন যা জানা যাচ্ছে না।

তারা আরও দাবি করেন যে চলমান শাটডাউন দেশে সংক্রমণের হার কমাতে সহায়তা করলেও রোগী কার মাধ্যমে সংক্রমিত হচ্ছেন তা খুঁজে বের করতে না পারার কারণে যথাযথ সুবিধা পাওয়া যায়নি।

তারা হুঁশিয়ার করে জানান, পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে দেশকে এর জন্য অনেক বেশি মূল্য দিতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago