যুগকাল ধরে তারা হাসপাতালের স্বেচ্ছাশ্রম কর্মী, করোনায় বেড়েছে কর্মতৎপরতা

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে গেলে চোখে পড়বে শেখ সাদি, মিজানুর রহমান, মজিদুল ইসলাম, রশিদা বেগম, স্বপন কুমার মোহন্তসহ ৩৬ জন ছেলে-মেয়ে সর্বদা কর্মব্যস্ত। এদের কেউ কাজ করছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে, কেউ অপারেশন থিয়েটারে, কেউ সার্জারি ওয়ার্ডে, কেউ শিশু ওয়ার্ডে, কেউ ঔষধ বিতরণে আবার কেউ ডাক্তারের চেম্বারে রোগীদের সিরিয়াল ও ভিড় সামলাতে। এদের কাজের অন্ত নেই। সকলেই তারা হাসপাতালের কর্মী কিন্তু চাকরির সুবাদে নন। সবাই এখানে স্বেচ্ছাশ্রমে হাসপাতাল কর্মী।
এভাবেই লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে স্বেচ্ছাশ্রমে হাসপাতাল কর্মী হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ৩৬ জন ছেলে-মেয়ে। ছবি: স্টার

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে গেলে চোখে পড়বে শেখ সাদি, মিজানুর রহমান, মজিদুল ইসলাম, রশিদা বেগম, স্বপন কুমার মোহন্তসহ ৩৬ জন ছেলে-মেয়ে সর্বদা কর্মব্যস্ত। এদের কেউ কাজ করছেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগে, কেউ অপারেশন থিয়েটারে, কেউ সার্জারি ওয়ার্ডে, কেউ শিশু ওয়ার্ডে, কেউ ঔষধ বিতরণে আবার কেউ ডাক্তারের চেম্বারে রোগীদের সিরিয়াল ও ভিড় সামলাতে। এদের কাজের অন্ত নেই। সকলেই তারা হাসপাতালের কর্মী কিন্তু চাকরির সুবাদে নন। সবাই এখানে স্বেচ্ছাশ্রমে হাসপাতাল কর্মী।

এদের কেউ এক যুগ আবার কেউ দেড় যুগ ধরে এভাবেই স্বেচ্ছাশ্রমে হাসপাতাল কর্মী হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

করোনা দুর্যোগকালে তাদের দায়িত্ব বেড়েছে। ঝুঁকি নিয়ে তারা হাসপাতালে নিয়মিত কর্মতৎপর থাকছেন, সেবা দিচ্ছেন রোগীদের। ঝুঁকি সত্ত্বেও তাদের মধ্যে একজনও হাসপাতালে আসা বন্ধ করেননি।

গত তিন মাস ধরে হাসপাতালের উন্নয়ন তহবিল থেকে এসব স্বেচ্ছাশ্রম কর্মীদের মাসে এক হাজার থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে। এর আগে কিছুই পেতেন না তারা। একদিন তাদের চাকরি সরকারি হবে, এই আশায় বুক বেঁধে হাসপাতালে স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন এই মানুষগুলো। কিন্তু তারা জানেন না কবে তাদের চাকরি সরকারিকরণ হবে। তাই মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে যুগকাল ধরে থাকা হাসপাতালের এই স্বেচ্ছাশ্রম কর্মীদের।

এমনই একজন স্বেচ্ছাশ্রম কর্মী শেখ সাদি বলেন, ‘চাকরির আবেদন করার বয়সও শেষ হয়ে গেছে। এখন আর কোথায় যাব? তাই হাসপাতালকেই আঁকড়ে ধরে আছি, যদি কোনো দিন আমাদের প্রতি সরকার সদয় হয়। আমরা মানবেতর জীবনযাপন করছি কিন্তু হাসপাতালে এসে হাসিমুখে থাকি। কারণ আমাদের হাসিই রোগীদের সুস্থ করতে সহায়তা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কখনো কাজ ফাঁকি দেই না। করোনা দুর্যোগকালে আমাদেরকে আরও বেশি কাজ করতে হচ্ছে। কাজটা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও দায়িত্ব পালন করছি মনোবল নিয়ে।’

আরেকজন স্বেচ্ছাশ্রম কর্মী স্বপন কুমার মোহন্ত বলেন, ‘হাসপাতালে ডিউটি শেষে আমাদের অনেকে বিভিন্ন ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডিউটি করে আয় করে। গত তিন মাস ধরে হাসপাতাল থেকে যা পাচ্ছি তা পকেট খরচ মাত্র। পরিবারের বাঁধা উপেক্ষা করেই করোনাকালে ঝুঁকি নিয়ে ডিউটি করছি। এখনো স্বপ্ন দেখি, একদিন না একদিন আমাদের হাসপাতালের চাকরিটা সরকারিকরন হবে।’

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে স্বেচ্ছাশ্রম কর্মী হিসেবে কাজ করছেন রশিদা বেগম। প্রত্যাশার কথা জানিয়ে রশিদা বেগম বলেন, ‘চাকরিটা সরকারি হবে এমন আশায় আজ-কাল করেই যুগ পার হয়ে গেছে। এখনো আশায় আছি। করোনার ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত ডিউটি পালন করছি। যদি কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হয়ে আমাদের প্রতি সদয় হন সেই আশায়।’

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আপাতত স্বেচ্ছাশ্রম কর্মীদের যা দেওয়া হচ্ছে তা অতি নগণ্য। তাদের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’

লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘করোনা দুর্যোগকালে স্বেচ্ছাশ্রম কর্মীরা অনেক বেশি দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের বিষয়ে ভাবার সময় এসেছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। যাতে তাদের চাকরি সরকারিকরনে জন্য সরকার ইতিবাচক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

8h ago