করোনা কেড়ে নিয়েছে কুটিরশিল্পী ফুলো বালাদের মুখের হাসি
ক্ষুধার্ত তাই মুখে হাসি আসে না ফুলো বালার। মুখ দিয়ে কথাও ঠিকমতো বের হতে চায় না। অন্যের কথাও শুনতে অনীহা আসে। করোনা কেড়ে নিয়েছে সদা হাস্যোজ্জ্বল কুটিরশিল্পী ফুলো বালার।
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের হররাম কসালতলা গ্রামের ৭৫ বছর বয়সি ফুলো বালা বাস করেন তার বিধবা মেয়ে মাধবী বালার সংসারে। তার ছেলে ভারত চন্দ্র বর্মণ দিনমজুর। পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন আলাদা সংসারে।
বাঁশ দিয়ে খাঁচা, ডালি, কুলো বানিয়ে নিজেই হাটে গিয়ে বিক্রি করে আয় করেন তিনি। যা আয় হয় তা দিয়ে কোনরকমে জীবিকা নির্বাহ করেন ফুলো বালা। পাচ্ছেন সরকারের বয়স্ক ভাতা।
কিন্তু, করোনা পরিস্থিতির পর থেকে তিনি বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন না। হাটে গিয়ে বিক্রিও করতে পারছেন না তার বানানো বাঁশের জিনিসপত্র। তাই পড়েছেন অর্থ-কষ্টে। তার বিধবা মেয়ে মাধবী বালা একজন কৃষি শ্রমিক। তিনিও কর্মহীন হয়ে বাড়িতে থাকছেন।
ফুলো বালা সরকারি ত্রাণ হিসেবে পেয়েছেন ১০ কেজি চাল ও দুই কেজি আলু। অনেক আগেই শেষ হয়েছে এ খাবার। এখন ঘরে খাবার নেই। হাতে টাকাও নেই যে বাজার থেকে খাবার কিনবেন।
ফুলো বালা বলেন, ‘ক্ষুধার জ্বালায় ছটফট করি। সঞ্চয় নেই।’
ফুলো বালার মতোই গ্রামে-গঞ্জে চলছে মানুষের জন্য কষ্ট ও বেদনার দিনকাল। এখন কোন রকমে বেঁচে থাকলেও আগামী দিনগুলোর জন্য বেশি আতঙ্কিত তারা। এসব মানুষের অনেকেই থাকেন অন্যের জমিতে। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলোর অবস্থা দিন দিন আরও শোচনীয় হয়ে পড়ছে।
ফুলো বালার স্বামী বিপিন্দ্র নাথ বর্মণ স্বাধীনতা যুদ্ধের আট বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর ছিল আবাদি জমি, পুকুর, গোয়ালঘর ভর্তি গরু, সবজি-ফলের বাগান, বসতভিটায় ছিল কয়েকটি ঘর। কিন্তু, আজ কিছুই নেই তার। স্বাধীনতা যুদ্ধে অনেক কিছু হারিয়ে যায় তার। এরপর আস্তে আস্তে স্বামীর রেখে যাওয়া সবকিছুই হারিয়ে যায়। গত বিশ বছর ধরে তিনি কুটিরশিল্পী হয়ে বেঁচে আছেন।
Comments