উপকূল অতিক্রমের সময় ‘আম্পান’র গতি ১৩০-১৪০ কিলোমিটার থাকতে পারে
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সর্বশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় ‘আম্পান’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি আজ রাত ০৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬১০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে ২০ মে বিকাল/সন্ধ্যার মধ্যে সুন্দরবনের কাছ দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-বাংলাদেশ উপকূল অতিক্রম করতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৮৫ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ২০০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ২২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
সতর্ক সংকেত:
মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
ঘূর্ণিঝড় জনিত জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা:
ঘূর্ণিঝড় এবং অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-১০ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
ঝড়ো হাওয়ার সতর্কতা:
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী ও চট্টগ্রাম জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ১৪০-১৬০ কিলোমিটার বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
জেলেদের জন্য সতর্কতা:
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছধরার নৌকা ও ট্রলারকে অতিসত্বর নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরে কর্মরত আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনকে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান সাগরের মধ্যে সিডরের মতো বা তার চেয়েও বেশি শক্তিশালী ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলের দিকে আসার সময় এতো শক্তিশালী থাকবে না। তবে এটি ঘূর্ণিঝড় আকারেই উপকূল অতিক্রম করবে।’
তিনি বলেন, ‘এর আগে, আমরা ২৫ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলাম- আম্পানের সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২৪৫ কিলোমিটার। কিন্তু সর্বশেষ ২৮ নম্বর বিজ্ঞপ্তিতে সেটি কমে ২২০ কিলোমিটারে চলে এসেছে। আমরা আশা করছি যে, উপকূল অতিক্রমের সময় এর গতিবেগ আরও কমে আসবে।’
‘বর্তমান গতিতে আম্পান উপকূল অতিক্রম করলে প্রলয়ঙ্করী অবস্থার সৃষ্টি হবে। কিন্তু আমরা ধারণা করছি যে, সেটি হবে না। তবে উপকূল অতিক্রমের সময় এর গতিবেগ ১৩০-১৪০ কিলোমিটারের মতো থাকবে’, যোগ করেন তিনি।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানকে প্রথমদিকে প্রবল, পরে অতি প্রবল, তারপর সুপার ঘূর্ণিঝড় অখ্যায়িত করার পর এখন আবার বলা হচ্ছে শুধু ঘূর্ণিঝড়, বিষয়টি কেন? জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ আরিফ হোসেন বলেন, ‘আম্পান এখনও অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ই আছে। সাধারণ মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হওয়ার কারণে আমরা বিজ্ঞপ্তিতে শুধু ঘূর্ণিঝড় বলেছি।’
‘তবে কাল ভোরের দিকে সতর্কতা সংকেতসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো আরও বাড়িয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এখন যেসব অঞ্চলের জন্য ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া আছে, সেটি বেড়ে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত এবং যেসব অঞ্চলের জন্য ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া আছে, সেটি বেড়ে ৯ নম্বর মহাবিপৎসংকেত হবে। আট নম্বর সংকেতটি আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য নয়’, বলেন তিনি।
Comments