আম্পান: সীমানা জটিলতা ঝুঁকি বাড়িয়েছে খুলনার

Amphan_Khulna1_19May2020.jpg
খুলনায় ৯৯৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ১৭ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত। ছবি: স্টার

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলা খুলনার উপকূলীয় এলাকায় ভোররাত থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাব শুরু হয়েছে। আজ বুধবার সকালে জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে চার ফুট বেড়ে যেতে পারে। সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে দাকোপ ও কয়রা উপজেলা।’

তবে গবাদি পশু ও ফসল রেখে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না কেউ। দাকোপ উপজেলার কামারখোলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পঞ্চানন মণ্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি শতভাগ মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিতে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই যেতে রাজি হচ্ছেন না। দাকোপ উপজেলার দেড় লাখ মানুষের মধ্যে মাত্র ৩০ হাজারের কিছু বেশি মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে গেছেন।’

উপজেলার কোণাখাটাইল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘পুলিশ-চেয়ারম্যান এসে বললো আপনার বাড়ি নদীর ধারে, আপনি আশ্রয়কেন্দ্রে যান। আমার পাঁচটা গরু আছে, ভেড়া আছে। সেগুলো রেখে আমি কীভাবে যাব! তারা বলেছে, গরু-ভেড়া আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার ব্যবস্থা করবে। তাই আমি আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে রাজি হয়েছি।’

কয়রা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা বলেন, ‘অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে চাচ্ছেন না। আজ ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত আমি ১০ হাজার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্র আনার ব্যবস্থা করেছি।’

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন অভিযোগ করেন, সিডরসহ অন্যান্য ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়রা উপজেলা। কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া— দুটি বড় নদীর পাড়ে ১৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত। অথচ সীমানা জটিতলায় সমাধান হচ্ছে না। বাঁধের জায়গাটি খুলনার হলেও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের।

এই অভিযোগ স্বীকার করেন শিমুল কুমার সাহা। তিনি বলেন, ‘সমন্বয় সভায় আমরা তাদের পাই না। যেহেতু তারা অন্য জেলার, তাদের সমন্বয় সভাতেও আমরা থাকি না।’

কয়রা উপজেলার দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নের চারপাশ ঘিরে রয়েছে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদী। নদীর অন্য পাশে সুন্দরবন। আইলার আঘাতে বেড়িবাঁধের ২৭ কিলোমিটারের মধ্যে ২৯টি জায়গায় ভেঙে গিয়েছিল। ২০১৩ সালে মেরামত করা হলেও স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ওই এলাকার জোড়শিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিএম মশিউর রহমান বলেন, ‘বর্তমানে বাঁধের অবস্থা এতোটাই নাজুক যে কোথাও কোথাও এক ফুট চওড়া বাঁধ নেই। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে মাত্র দুই ফুট পানির উচ্চতা বাড়লেই তলিয়ে যাবে পুরো ইউনিয়ন। আর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে যে ধরনের জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা করা হচ্ছে যদি তার অর্ধেকও হয়, এই এলাকার মানুষদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। বুলবুলের আঘাত এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি।’

জানতে চাইলে খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ-১ ও বিভাগ-২ এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানার্জী বলেন, পুরো খুলনা জেলায় ৯৯৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে কয়রার ১০ কিলোমিটার বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। অন্য যেসব এলাকায় বাঁধের সমস্যা ছিল তা জরুরি ভিত্তিতে সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু আইলার মতো ৫ থেকে ৭ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হয় তাহলে অনেক জায়গায় পানি আটকে রাখা সম্ভব হবে না।

Comments

The Daily Star  | English

How Chattogram built its economic legacy

Picture a crowded harbour where the salty seabreeze carries whispers of far-off lands, where merchants of all creed and caste haggle over silks and spices, and where towering ships of all varieties – Chinese junks, Arab dhows, and Portuguese carracks – sway gently in the waters of the Bay of Bengal.

12h ago