বস্তিতে স্বস্তির হাসি

আশ্রয়ন প্রকল্পে নতুন ঘর পাচ্ছে শতাধিক গৃহহীন পরিবার

Mymensingh slum people
ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে থানারঘাট বস্তির শতাধিক পরিবার আশ্রয়ন প্রকল্পে নতুন ঘরের তালিকাভুক্ত হয়েছেন। ছবি: স্টার

করোনা মহামারির এ দুঃসময়ে আশ্রয়ন প্রকল্পে নতুন ঘরের জন্য নাম তালিকাভুক্ত হওয়ায় ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে থানারঘাট বস্তিতে শতাধিক পরিবারের মুখে ফুটেছে স্বস্তির হাসি।

উপজেলা প্রশাসন গত ১৯ মে সরেজমিনে এই তালিকা করেছেন। ঈদের পরই তারা নতুন ঘরের চাবি বুঝে পাবেন বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

কমলা খাতুন গত প্রায় ৫০ বৎসর যাবৎ ময়মনসিংহ শহরে ভাসমান জীবনযাপন করছেন। স্বাধীনতার পর বিয়ে হয় কমলার। বিয়ের কিছুদিন পর কমলা দিনমজুর স্বামীর সঙ্গে ফুলপুর উপজেলার রূপসী গ্রাম থেকে ময়মনসিংহে চলে আসেন।

বর্তমানে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে থানারঘাট বস্তিতে আরও প্রায় শতাধিক পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন ৬৫ বছরের এই নারী।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার খাগডহর ইউনিয়নের দুলালের চর এলাকায় নির্মিত সরকারের আশ্রয়ন প্রকল্পে নতুন ঘরের জন্য নিজের নাম তালিকাভুক্ত হওয়ায় আবেগ আপ্লুত কমলা বলেন, ‘জীবনেও আশা করিনি যে আমার নিজের ঘর হবে।’

‘ভাসমান জীবন খুব কষ্টের, অসম্মনের, বারবার বিতাড়িত হতে হয়,’ যোগ করেন তিনি।

প্রায় ৪০ বৎসর থেকে থানারঘাট বস্তিতে বসবাস করছেন ছালেহা বেগম (৫০)। তিনি অন্যের বাসাবাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করেন। সদর উপজেলার ঢাকিরকান্দা গ্রাম থেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে ময়মনসিংহ শহরে তার বস্তিজীবন শুরু হয়।

তিন সন্তানের জননী ছালেহা বলেন, ‘আমাদের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। ঈদের পরপরই নতুন ঘরে উঠতে পারবো বলে জানানো হয়েছে।’

‘গত কয়েকমাস আগে এই থানার ঘাট সরকারি জায়গা থেকে আমাদের উচ্ছেদ করা হয়েছিল। এখন নতুন ঘরের বরাদ্দ পেয়ে আমরা খুবই খুশি,’ বললেন খোদেজা খাতুন।

নতুন ঘরের জন্য তালিকাভুক্ত হওয়াও খোদেজা জানান, তিনি গত ২৫ বছর ধরে ভাসমান জীবনযাপন করে আসছিলেন। নিজেকে সৌভাগ্যবান দাবি করে খোদেজা বলেন, ‘আমাদের নিজের ঘর হবে। আমরা আর উচ্ছেদের আতঙ্কে থাকব না। এর চেয়ে আনন্দ আর কী হতে পারে।’

এক সন্তনের জননী শিল্পী আক্তর (২০) বলেন, ‘আমার সন্তান বস্তিজীবন থেকে মুক্তি পাবে।’ সে অন্যের বাড়িতে কাজ করে সন্তানকে লেখাপড়া শেখাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন।

আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ দিতে তাদের কাছে গিয়ে নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য ময়মনসিংহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ হাফিজুর রহমানকে তারা বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাফিজুর রহমান ১৯ মে সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রায় ১০০ জনের নাম তালিকাভুক্ত করেন। সেসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. সাজ্জাদুল হাসান ও ভূমি কর্মকর্তা আনিসুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

এ প্রতিনিধির সঙ্গে আলাপকালে শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘খাগডহর ইউনিয়নের দুলালের চর এলাকায় নির্মিত আশ্রয়ন প্রকল্পে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাসহ ২৪০টি ঘরের কাজ শেষ হয়েছে। এখন বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলছে।’

‘আসছে জুন মাসের প্রথমদিকে সবগুলো ঘর হস্তান্তর করা যাবে’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সদর উপজেলায় আরও দুটি গুচ্ছ গ্রামের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এই প্রস্তাব দুটি পাস হয়ে কাজ শেষ হলে এই উপজেলায় আরও প্রায় ৬০০ গৃহহীন পরিবার ঘর পাবে।’

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago