হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন করোনায় মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে
করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন প্রয়োগ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা চলছে। করোনার চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন আদৌ কাজ করে কী না, এর উত্তর খুঁজে চলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ইউনিভার্সিটি হসপিটাল জুরিখের সর্বশেষ একটি গবেষণা বলছে, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারে করোনার রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে দেখা গেছে।
আজ শুক্রবার মেডিকেল জার্নাল ‘দ্য ল্যানসেট’-এ প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং ক্লোরোকুইন দিয়ে করোনা চিকিৎসার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় বিপজ্জনক হার্ট অ্যারিথিমিয়া রোগের সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।
সিএনএন জানায়, গবেষকরা ৬৭১টি হাসপাতালের ৯৬ হাজারেরও বেশি রোগীর তথ্য যাচাই করেছেন। এদের প্রত্যেকেই ডিসেম্বর থেকে এপ্রিলের মধ্যে হাসপাতাল ছেড়েছেন অথবা করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এদের মধ্যে প্রায় ১৫ হাজার রোগীকে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন কিংবা ক্লোরোকুইন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়েছে। অনেককে এই দুই ওষুধের যেকোনো একটির সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিক মিশিয়ে ফর্মুলা তৈরি করে চিকিৎসা করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই চার ধরনের ফর্মুলা ব্যবহার করে চিকিৎসা যাদেরকে দেওয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশই মৃত্যু ঝুঁকিতে পড়েছেন। প্রতি ১১ জনের মধ্যে একজনের শারীরিক অবস্থা ভালো ছিল।
ক্লোরোকুইনের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের মিশ্রণ ফর্মুলা দিয়ে চিকিৎসা করা প্রতি পাঁচ জন রোগীর একজন মারা গেছেন। হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের মিশ্রণ ফর্মুলায় প্রতি চার জন রোগীর একজন মারা গেছেন।
গবেষণা সহকারী ও ইউনিভার্সিটি হসপিটাল জুরিখের হার্ট সেন্টারের পরিচালক ডা. ফ্র্যাঙ্ক রুশিৎজকা বলেন, ‘এর আগে ছোট পরিসরের গবেষণাগুলো এই চিকিৎসার সার্বিক উপকারিতার প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে। আমাদের এই পরীক্ষাটি বড় পরিসরের। এই গবেষণা থেকে আমরা দেখেছি যে, কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে এই ধরনের চিকিৎসার সুফল খুবই কম।’
এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ প্রতিরোধে অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ড্রাগের ব্যবহারের সফলতা নিয়ে কোনো গবেষণা প্রকাশিত হয়নি।
মেডিকেল জার্নাল দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত এ গবেষণায় এই চার ফর্মুলার চিকিৎসায় রোগীদের মধ্যে গুরুতর কার্ডিয়াক অ্যারিথিমিয়াও দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি ছিল হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যান্টিবায়োটিক মিশ্রণ ফর্মুলায় চিকিৎসা দেওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে। এই গ্রুপের প্রায় আট শতাংশ রোগীর গুরুতর হার্ট অ্যারিথিমিয়া দেখা গেছে। অন্যান্য গ্রুপে এই হার ছিল শূন্য দশমিক তিন শতাংশ।
বিশ্বের অনেক নেতাই হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন দিয়ে করোনাভাইরাস চিকিৎসার প্রতি জোর দিয়ে আসছেন।
এই সপ্তাহের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য তিনি প্রতিদিন হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন সেবন করছেন।
Comments