ঝুঁকি নিয়েই ঈদ করতে বাড়ির পথে মানুষ

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়েই ঈদ করতে বাড়ির পথে ছুটছে মানুষ। যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ পালন করতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই নানা উপায়ে মহাসড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের। পিকআপ ভ্যান কিংবা পণ্যবাহী ট্রাকে চড়েও অনেকে বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। মহাসড়কে পুলিশ চেকপোস্টে পণ্যবাহী যানবাহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব যানবাহনের নামে মামলাও হচ্ছে। অনেকে তাই পায়ে হেঁটেও পাড়ি দিচ্ছেন অনেকটা পথ। ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে দ্য ডেইলি স্টারের টাঙ্গাইল ও গাজীপুর সংবাদদাতারা বাড়ি ফেরা এসব মানুষের চিত্র তুলে এনেছেন।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ধরে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন অনেকেই। ছবি: স্টার

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় ঝুঁকি নিয়েই ঈদ করতে বাড়ির পথে ছুটছে মানুষ। যাতায়াতের প্রতিবন্ধকতা থাকা সত্ত্বেও স্বজনদের সঙ্গে ঈদ পালন করতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই নানা উপায়ে মহাসড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে ঘরমুখো মানুষদের। পিকআপ ভ্যান কিংবা পণ্যবাহী ট্রাকে চড়েও অনেকে বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। মহাসড়কে পুলিশ চেকপোস্টে পণ্যবাহী যানবাহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব যানবাহনের নামে মামলাও হচ্ছে। অনেকে তাই পায়ে হেঁটেও পাড়ি দিচ্ছেন অনেকটা পথ। ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক থেকে দ্য ডেইলি স্টারের টাঙ্গাইল ও গাজীপুর সংবাদদাতারা বাড়ি ফেরা এসব মানুষের চিত্র তুলে এনেছেন।

টাঙ্গাইল

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে সরেজমিনে গিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত চেকপোস্ট থেকে শত শত মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য উপায়ে আসা হাজারো ঘরমুখো মানুষকে ফেরত পাঠিয়েছে পুলিশ।

গোড়াই হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান জানান, মহাসড়কে আজ শুক্রবার সকাল থেকেই প্রাইভেটকারসহ ব্যক্তিগত যানবাহনের আধিক্য লক্ষ্য করা গেছে। রাতের দিকে মহাসড়কে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

যোগাযোগ করা হলে টাঙ্গাইলের ট্রাফিক পরিদর্শক (প্রশাসন) সাজেদুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত কয়েকদিন শতশত গাড়ি ফেরত পাঠাতে আমাদের অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। আসলে মানুষ সচেতন না হলে তো করার কিছু নেই।’

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের ১৬টি ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাঁচটিসহ মোট ২৬টি জেলার ১২২টি রুটের যানবাহন চলাচল করে। এই মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে ঘরমুখো মানুষেরা। শত শত নারী-পুরুষকে পায়ে হেঁটে মহাসড়ক পাড়ি দিয়ে বাড়ি যেতে দেখা গেছে।

এ ছাড়াও, বিভিন্নস্থানে ইঞ্জিন-সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে মানুষ বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপ্রান্তে আসছে। এরপর, ঘাট থেকে নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যমুনা নদী পাড়ি দিয়ে সিরাজগঞ্জ যাচ্ছে। সেখান থেকে আবার অন্য কোনো বাহনে কিংবা পায়ে হেঁটেই বাড়ি যাচ্ছেন তারা।

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নদী পাড় হতে অপেক্ষায় থাকা বগুড়াগামী সহবত মিয়া, পঞ্চগড়গামী শফিকুল ইসলাম ও সিরাজগঞ্জগামী আসাবুর রহমান জানান, মহাসড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তারা আবদুল্লাহপুর ও বাইপাইল থেকে ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন বাহনে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসেন। এরপর ১৫ কিলোমিটার পায়ে হেঁটে বেলটিয়াবাড়ি যমুনার ঘাটে পৌঁছান। এভাবে পরিবহন বদলে ভেঙে ভেঙে বাড়ি যেতে গণপরিবহনের চেয়ে তাদের পাঁচ থেকে সাত শ টাকা অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে।

তারা আরও জানান, করোনা সংক্রমণের ভয় মাথায় নিয়েই তারা বাড়ি যাচ্ছেন। কারণ, ঢাকায় থাকার আর উপায় ছিল না। অনেকের প্রতিষ্ঠান ছুটি দিয়েছে, অনেকেরই আবার কাজ ছিল না, কারো কারো টাকা ছিল না, কারো আবার থাকার জায়গা বন্ধ হয়ে গেছে। তাই, কষ্ট করে হলেও, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন তারা।

ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বাড়ি যাওয়ায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। ছবিটি ঢাকা ময়মনসিংহ হাইওয়ে থেকে তোলা। ছবি: স্টার

গাজীপুর

একই চিত্র ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কেও। আজ শুক্রবার মহাসড়কে সরেজমিনে গিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের গাজীপুর সংবাদদাতা জানান, সড়কের বিভিন্ন অংশে পুলিশ চেকপোস্ট দিয়ে যাওয়ার সময় পণ্যবাহী গাড়িতে যাত্রী থাকলে, তাদের নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসব যানবাহনের নামে মামলাও করা হয়েছে।

ঘরমুখো এসব যাত্রীদের বেশিরভাগই পোশাকশ্রমিক। গাজীপুর সদর উপজেলার শিরিরচালা এলাকার মেঘনা নিট কম্পোজিট লিমিটেডের প্যাকিং অপারেটর ইসমাইল হোসেন ময়মনসিংহে তার বাড়ির পথে ছিলেন। আজ বিকালে তিনি জানান, বানিয়ারচালা থেকে মাস্টারবাড়ি পর্যন্ত আট কিলোমিটারের বাস ভাড়া ১০ টাকা। অটোরিকশায় করে ওই আট কিলোমিটার ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে তিনি এসেছেন। ময়মনসিংহ যেতে আরও ৭৮ কিলোমিটার পথ কীভাবে পাড়ি দেবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।

শ্রীপুর উপজেলার গড়গড়িয়া এলাকার একটি কারখানার স্বাস্থ্য সহকারী আবুল কালাম আজাদ গড়গড়িয়া থেকে রওনা হয়েছেন বাড়ির পথে। ময়মনসিংহের ভালুকা মাস্টারবাড়ি পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার দূরত্ব যেতে একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়েছেন। মাঝপথে পুলিশ চেকপোস্ট কীভাবে পার হবেন, তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে তার।

যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক দক্ষিণ) পীযূষ কুমার দে বলেন, ‘গাজীপুর এলাকায় যাত্রীবাহী পরিবহনের চাপ তেমন একটা নেই। পিকআপ ভ্যানে বা পণ্যবাহী ট্রাকে চড়ে যাত্রী পরিবহনের ঘটনাও তেমন চোখে পড়ছে না। আর এরকম হলে পণ্যবাহী পরিবহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যাত্রীরা সাধারণত পায়ে হেঁটে চলাচল করছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় মহাসড়ক ছেড়ে বিভিন্ন এলাকার ভেতর দিয়ে সিএনজি বা অটোরিকশায় করে শহর থেকে বের হচ্ছে।’

তিনি জানান, যাত্রীবাহী পরিবহন বা পণ্যবাহী পরিবহনে যাত্রী পারাপারের ঘটনাসহ চলাচলে অননুমোদিত ঘটনা পর্যবেক্ষণে মহানগরের প্রবেশ বা বহির্গমন স্থানগুলোতে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। চেকপোস্টে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পণ্যবাহী গাড়ির গতি কিছুটা কমে যাচ্ছে। তবে, থেমে থাকছে না।

গাজীপুর হাইওয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. মনোয়ার হোসাইন জানান, গাজীপুর জেলার মহাসড়কের সীমান্ত ও প্রধান প্রধান স্থানগুলোতে চেকপোস্ট বসিয়ে ঈদ উপলক্ষে বাড়ি যাওয়া মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতিতে যাত্রীবাহী যানবাহনের অনুমতি না থাকায় তা বিশেষ সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, পণ্যবাহী ট্রাক বা পিকআপে কোনো যাত্রী পাওয়া গেলে তাদের নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নিয়ম না মানা এরকম কিছু যানবাহনের নামে মামলাও করা হচ্ছে।

তবে, গতকাল থেকে প্রাইভেট কার, মোটরসাইকেল বা মাইক্রোবাসে গাজীপুর ছেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা নেই বলেও জানান তিনি।

Comments