তারা সামাজিক দূরত্ব মানছে না

ঢাকায় যখন সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগী ও মৃত্যু সংখ্যা বেড়েই চলেছে, তখনও কিছু মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন না।
শহীদ ফারুক সড়কে মাত্র ২০০ মিটার ব্যবধানে তিন জন কবিরাজকে রাস্তার উপর এসব বুজরুকি চিকিৎসা দিতে দেখা যায় গতকাল শুক্রবার। ছবি: স্টার

ঢাকায় যখন সবচেয়ে বেশি করোনায় আক্রান্ত নতুন রোগী ও মৃত্যু সংখ্যা বেড়েই চলেছে, তখনও কিছু মানুষ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন না।

জন্ডিস রোগী আজমত বেপারীর কথাই ধরি। দুই হাতে চুন মেখে ঘষে, মাথা নিচু করে এগিয়ে দিলেন এক কবিরাজের কাছে। কবিরাজ মাথায় পানি ঢালেন এবং মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে ‘বিলিরুবিন নামিয়ে দেন’।

এর মধ্যেই গোটা বিশেক মানুষ জটলা করে আছেন এই বুজরুকি সেবা নেওয়ার আশায়। ঘটনাটি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায়। জটলা করা এসব মানুষের অনেকেরই মুখে ছিল না কোনো মাস্ক। তাদের ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই গোটা বিশ্বে করোনা মহামারি বলে কিছু আছে, যা পাঁচ মাসেরও কম সময়ে প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।

দেশে গতকাল শুক্রবার করোনায় মৃত্যুর নতুন রেকর্ড হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন ২৪ জন এবং নতুন আক্রান্ত ১ হাজার ৬৯৪ জন।

যদিও সরকার, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ও স্বেচ্ছাসেবীরা মানুষকে বারংবার বলে আসছে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে, কিন্তু কিছু মানুষ সেকথা কানেই তুলছেন না। কবিরাজের কাছে ভিড় জমানো এই মানুষগুলোই তার প্রমাণ।

সমস্ত দেশের তুলনায় ঢাকায় রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ এবং যাত্রাবাড়ী এলাকা সর্বোচ্চ আক্রান্ত এলাকার তালিকায় দ্বিতীয়। তথাপি প্রতি সকালে মানুষ ভিড় করেন এইসব কবিরাজের কাছে। শহীদ ফারুক সড়কে মাত্র ২০০ মিটার ব্যবধানে তিন জন কবিরাজকে রাস্তার উপর এসব বুজরুকি চিকিৎসা দিতে দেখা যায় গতকাল।

সূত্র মতে, গাছের বাকল ভিজিয়ে রাখা পানি যখন হাতের থাকা চুনের সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটে তখন তাতে কিছুটা হলদেটে ভাব আসে। মানুষ মনে করে তার জন্ডিস পানির সঙ্গে বের হয়ে যাচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী রাজু আহমেদ বলেন, ‘তারা মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে করোনাকালে এই ভিড় এবং যে পন্থায় তারা চিকিৎসা দিচ্ছেন।’

একটি শোরুমে কর্মরত রাজু বলেন, ‘যে পানি মাথা থেকে মুখ ও নাক গড়িয়ে পড়ছে, তা আশেপাশের ভিড় করে থাকা মানুষের গায়ে লাগছে। আমরা জানি না কার করোনা আছে আর কার নেই। যেকোনো সুস্থ মানুষ এখান থেকে করোনা নিয়ে ফিরতে পারেন, এমনকি পথচারীও।’

কবিরাজ আলীম অবশ্য জানান, ‍তিনি দীর্ঘদিন যাবত এই চিকিৎসা দিয়ে মানুষকে সুস্থ করে তুলছেন। তার মতে, ‘করোনা ছড়ানোর কোনো সম্ভাবনাই নেই এইখান থেকে।’

অন্যদিকে আরেক কবিরাজ ফিরোজা বেগম তার ভক্তদের সামনে জোর গলায় বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যে করোনা তাকে ছুঁতে পারবে না।

মূলত শহরের অশিক্ষিত জনগণই এইসব কবিরাজদের মূল টার্গেট।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মুজাহেরুল হকের মতে মানুষকে সঠিকভাবে সচেতন করা যায়নি।

তিনি বলেন, ‘আমরা তাদেরকে এই সময়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদ্বুদ্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছি।’

সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

5h ago