পানিতে ডুবে আছে খুলনার ৭০ গ্রাম

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে খুলনায় পানির নিচে ডুবে আছে ৭০টিরও বেশি গ্রাম। এর মধ্যে শুধু কয়রা উপজেলাতেই পানির নিচে আছে ৬০টির বেশি গ্রাম।
ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে খুলনার কয়রা উপজেলার ৬০টির বেশি গ্রাম পানিতে ডুবে আছে। ছবি: দীপংকর রায়

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে খুলনায় পানির নিচে ডুবে আছে ৭০টিরও বেশি গ্রাম। এর মধ্যে শুধু কয়রা উপজেলাতেই পানির নিচে আছে ৬০টির বেশি গ্রাম।

পানিবন্দি দুই লাখের বেশি মানুষ অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। দুর্গত এসব এলাকায় নদীর লবণাক্ত পানি ঢুকে খাবার পানির আধারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে অনেকেই পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা আজজুল হক জোয়াদ্দার বলেন, এই ঝড়ে জেলার ৯টি উপজলার চারটিতে ৭০ এর বেশি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়রা উপজেলাতেই পানির নিচে আছে ৬০ এর বেশি গ্রাম।

গত শনিরার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা, গোবরা, ঘাটাখালি, উত্তর বেদকাশি এবং মহারাজপুর ইউনিয়নের মদিনাবাদ, মাঝের আইট, লোকা, কালনাসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা যায় এসব গ্রামের  প্রায় শতভাগ বাড়ি পানির নিচে। কোনও কোনও বাড়িতে দেখা যায় পানি ঘরের চাল ছুঁই ছুঁই করছে। ভাটার সময় পানি কিছুটা কমলেও জোয়ারে তা আবার বেড়ে যাচ্ছে। অনেকেই  প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, গরু, ছাগল, হাঁস নিরাপদ জায়গায় অন্যত্র রেখে আসছেন।

কয়রা সদর ইউনিয়নের দুই নং কয়রা গ্রামের বাসিন্দা মো. ঈমান আলী শেখ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘১৯৯৮ সালে বাড়ি করার পর এ পর্যন্ত ৬ বার প্লাবিত হয়েছে। এর কি কোনও স্থায়ী সমাধান নেই, না কি এভাবে ডুবতে থাকবো আমরা?’

কয়রা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. জাফর রানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, আম্পনের প্রভাবে এখানে কপোতাক্ষ ও সাকবাড়ীয়া নদীর ২১ টি জায়গায় ভাঙ্গনের ফলে তিনটি ইউনিয়নের ৫২টি গ্রাম সম্পূর্ণ এবং অন্য দুইটি ইউনিয়নের ১৭টি গ্রাম আংশিক ডুবে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ১ লাখ ৮২ হাজারেরও বেশি মানুষ। শুধু এই উপজেলাতেই নষ্ট হয়েছে ৪১ হাজার ঘরবাড়ি।

কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জি এম শামসুর রহমান বলেন, ‘এই ইউনিয়নের পানিবন্দি মানুষেরা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। কোনও সাহায্য সহযোগিতা এখনো আসেনি।’

ঘূর্ণিঝড়ে পাইকগাছা উপজলার লতা, দেলুটি, লস্করসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

ভেঙ্গেছে বাঁধ, ভেসে গেছে মাছের ঘের, পুকুর

কয়রা মহারাজপুর ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের ক্ষুদ্র চাষী মতিয়ার রহমান এবার ২৪ বিঘা জমিতে চিংড়ি চাষ করেছিলেন। ঘেরে প্রায় ৫ লাখ টাকার চিংড়ি ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ে বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় তার ঘের, পুকুর সব ভেসে গেছে।

এর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়রা উপজেলার চাষীরা। শুধু কয়রাতেই ৩ হাজার ১০৫টি ঘের ও পুকুর ভেসে গেছে। যার আয়তন ৪ হাজার ৭০৫ হেক্টর। যা জেলার মোট ক্ষতিগ্রস্ত ঘেরের অর্ধেক।

মৎস্য অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, আম্পানে বাঁধ ভেঙ্গে ও বাঁধ উপচে পানি ঢুকে  ভেসে গেছে  ৮ হাজার ৪৫০ হেক্টর জায়গার ৬ হাজার ৬১০টি চিংড়ি ঘের। ঘেরের প্রায় ৪৪ কোটি ১৮ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

এছাড়া বাঁধ ভেঙ্গে ও জোয়ারের পানিতে ২ হাজার ৬৫৮টি পুকুর ও দিঘীর মাছ ভেসে গেছে। এতে ৬০৪ হেক্টর জমির ১৮ কোটি ৯৭ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। নষ্ট হয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মাছের পোনা, ৯৫ লাখ টাকার কুচিয়া এবং ১ কোটি ২৪ লাখ টাকার চিংড়ি পিএল।

খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ জানান, বাঁধ ভেঙ্গে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হওয়ায় চিংড়ি ঘের, পুকুর ও দিঘী সব একাকার হয়ে গেছে। ঘূর্ণিঝড় আইলার পর এতো বড় ক্ষতি আর হয়নি। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের তালিকা তৈরির চেষ্টা করছি।

খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য আক্তারুজ্জামান বাবু বলেন, আইলার থেকেও বেশি ক্ষতি হয়েছে কয়রা উপজেলাবাসীর। বেড়িবাঁধ চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে গেছে। এর আগে যারা তদারকি করেছে সেসময় ঠিকভাবে দেখভাল হয়নি। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মানুষের।

Comments