‘আমি নিজের করোনা পজিটিভ রিপোর্টে নিজে স্বাক্ষর করেছি’

ডা. শাকিল আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিকাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) ল্যাবরেটরি ইনচার্জ অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ গত শনিবার থেকে অসুস্থ বোধ করছিলেন। কিন্তু এই কর্তব্যপরায়ণ চিকিৎসক এই অসুস্থতাকে তেমন একটা আমলে না নিয়ে নিজের কর্তব্য পালন করে যাচ্ছিলেন। তিনি চট্টগ্রামে কোভিড-১৯ টেস্ট পরিচালনায় নিয়োজিত একটি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

গতকাল মঙ্গলবার তিনি নিজেই ল্যাবরেটরিতে তার নমুনা পরীক্ষা করেন এবং জানতে পারেন যে তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ।

বিকেলে বিষয়টি জানতে পারলেও তৎক্ষণাৎ তিনি ল্যাবরেটরি ত্যাগ করেননি। বরং ল্যাবরেটরিতে জমে থাকা নমুনাগুলো পরীক্ষা শেষ করতে রাত ১১টা পর্যন্ত কাজ করেন। একে একে শেষ করেন জমে থাকা মোট ৩৩১টি নমুনা পরীক্ষা। পরীক্ষার শেষে রিপোর্টে স্বাক্ষর করা শেষ করে ল্যাব থেকে বের হন আইসোলেশনে যাওয়ার জন্য।

অধ্যাপক শাকিল বলেন, ‘কোভিড-১৯ পজিটিভ জানার পরও আমি কাজ চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কারণ আমি যদি বিকেলেই ল্যাব থেকে চলে আসতাম তাহলে অনেকগুলো নমুনা পরীক্ষার কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যেতো।’

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে আরও বলেন, ‘রোগীরা নমুনা পরীক্ষার ফলাফল জানতে তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে আছেন। এগুলো না পেলে তাদের চিকিৎসা বিলম্বিত হবে। তাই আমি চিন্তা করলাম মঙ্গলবারের জন্য নির্ধারিত সব নমুনার পরীক্ষা শেষ করে তবেই আমি ল্যাব থেকে বের হবো। গতকাল আমরা মোট ৩৩১টি নমুনা পরীক্ষা করেছি, যার মধ্যে ৫১টি নমুনাতে কোভিড-১৯ পজিটিভ আসে।’

এই ৫১টি নমুনার মধ্যে তার নমুনাটিও ছিল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি নিজের করোনা পজিটিভ রিপোর্টে নিজে স্বাক্ষর করেছি। এটা আসলে অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা।’

এক প্রশ্নের জবাবে বিআইটিআইডি ল্যাব থেকে তিনি আক্রান্ত হননি জানিয়ে বলেন, ‘আমার ধারণা আমি আমাদের হাসপাতাল কম্পাউন্ডে কোনো করোনা রোগীর মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছি। আমাদের হাসপাতালে এখন প্রচুর রোগী। তাদের অনেকেই আবার মুখে মাস্কটাও ঠিকমতো পড়েন না। আমাকে ল্যাবে দিনে প্রায় ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। এর মধ্যে কয়েকবার বাইরে বের হতে হয়। হয়তো কোনো রোগীর মাধ্যমে আমি সংক্রমিত হয়েছি। তাছাড়া ল্যাব থেকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। কারণ ল্যাবে আমরা সবাই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করেই কাজ করি।’

সবার কাছে নিজের সুস্থতার জন্য দোয়া চেয়ে অধ্যাপক শাকিল বলেন, ‘দোয়া করবেন যেনো তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে আবারও কাজে যোগ দিতে পারি। আমি যতদিন আইসোলেশনে থাকবো অন্য একজন মাইক্রোবায়োলজিস্ট দায়িত্ব পালন করবেন। তবে আমি ফোনে সবসময় তদারকি করবো।’

অধ্যাপক শাকিল অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন এবং আইসোলেশনে থাকাকালীন সময়েও রোগীদের সেবা দিয়ে যাওয়ার অঙ্গিকার ব্যক্ত করলেন। যা এক বিরল দৃষ্টান্ত।

বিআইটিআইডি হচ্ছে চট্টগ্রামের প্রথম প্রতিষ্ঠান যেখানে কোভিড-১৯ পরীক্ষা শুরু হয় ২৫ মার্চ থেকে। এরপর চট্টগ্রাম বিভাগের কমপক্ষে ছয়টি জেলার নমুনা এই পরীক্ষাগারে সম্পন্ন হয়ে আসছিল ডা. শাকিলের নেতৃত্বে। এরপর আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নমুনা পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে প্রতিষ্ঠানটির উপর চাপ কিছুটা কমে। তবে এখনও গড়ে দৈনিক ২৫০ থেকে ৩০০টি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago