জাস্টিস ফর ফ্লয়েড: উত্তাল মিনিয়াপোলিস, সিএনএনের সাংবাদিক আটক
যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিসে পুলিশ হেফাজতে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর ঘটনার প্রতিবাদে উত্তাল গোটা শহর। টানা তৃতীয় দিনের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচি বৃহস্পতিবার রাতে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও তুমুল ধ্বংসযজ্ঞে রূপ নিয়েছে। শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি সংবাদ প্রচারের সময় আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনের এক সাংবাদিকসহ কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ।
সিএনএন জানায়, রাতে বিক্ষোভকারীরা মিনিয়াপোলিসের একটি থানায় আগুন জ্বালিয়ে দেয়। ওই অগ্নিসংযোগের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগে ছড়িয়ে পড়েছে।
মিনিয়াপোলিসের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া কয়েক হাজার আন্দোলনকারীর অনেককে কিছু ভবনের ছাদে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
স্থানীয় অনেক গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা একটি গাড়ি এবং অন্তত তিনটি ভবনে আগুন জ্বালিয়েছে। টানা দ্বিতীয় রাতের মতো দোকানে লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে।
বৃহস্পতিবার ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ঠেকাতে মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ শহরটিতে অতিরিক্ত ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী মোতায়েন করলেও প্রতিবাদকারীদের শান্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে খুব বেশি তৎপর হতে দেখা যায়নি।
সিএনএনের এক প্রতিবেদক জানান, ‘একদিকে থানার ভেতরে ফায়ার অ্যালার্ম বেজে চলছে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা উল্লাস করছে। পুলিশের বেষ্টনী ঘিরে লোকজন আতশবাজি করছে। তবে, কোনও সাইরেনের শব্দ পাওয়া যায়নি। তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের কোনো তৎপরতাও দেখা যায়নি।’
সিএনএনের সংবাদিক আটক
মিনিয়াপোলিসের বিক্ষোভ নিয়ে শুক্রবার সকালে টেলিভিশনে সরাসরি খবর প্রচারের সময় সিএনএনের এক প্রতিবেদকসহ তিন কর্মীকে আটক করেছে মিনেসোটা স্টেট প্যাট্রোল। কোনো কারণ না বলেই কৃষ্ণাঙ্গ ওই প্রতিবেদককে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সিএনএন।
ওমর জিমিনেজ নামের ওই প্রতিবেদক টেলিভিশনে সরাসরি কয়েকজন আন্দোলনকারীকে প্রায় ছয় জন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ আটক করছেন এমন চিত্র দেখাচ্ছিলেন। তখন তাকে হাতকড়া পড়িয়ে আটক করা হয়।
আটকের আগে তিনি পুলিশকে বলেছিলেন, আমি এখান থেকে সরে যাচ্ছি। আপনারা যেখানে বলবেন সেখানে দাঁড়িয়েই রিপোর্ট করবো।
হাতকড়া পরানোর সময়ও তিনি পুলিশকে জিগ্যেস করেন, ‘আমাকে কেন আটক করা হচ্ছে, স্যার?’
আটকের প্রায় এক ঘণ্টা পর মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ জানান, এ ঘটনার জন্য তিনি ক্ষমাপ্রার্থী। অবিলম্বে তাদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি দেখছেন।
‘জাস্টিস ফর ফ্লয়েড’
গত ২৫ মে পুলিশ হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েড নামের ৪৬ বছর বয়সী এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যুর পরপরই এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।
এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা ১০ মিনিটের একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হাঁটু দিয়ে এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তির গলা চেপে ধরে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে এক শ্বেতাঙ্গ পুলিশ সদস্য।
নিহত ব্যক্তি নিরস্ত্র ছিলেন। নিঃশ্বাস নিতে না পেরে তাকে কাতরাতে দেখা যায়। তিনি বারবার শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসারকে বলছিলেন, ‘আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছি না।’
ওই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পরই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
আন্দোলনকারীদের দাবি, বর্ণবিদ্বেষের বলি হয়েছেন জর্জ ফ্লয়েড। এ ঘটনার প্রতিবাদে প্রথমে স্থানীয়রা রাস্তায় নামলেও পরে দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঢল নামে। যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো, ইলিনয়েস, লস অ্যাঞ্জেলসে, ক্যালিফোর্নিয়া, মেম্ফিস, টেন্নেসেতে ওই হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। অনেক জনপ্রিয় তারকাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘জাস্টিস ফর ফ্লয়েড’ হ্যাশট্যাগের মাধ্যমে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
জর্জ ফ্লয়েডের সঙ্গে যা ঘটেছে তা ‘আপত্তিকর’ বলে উল্লেখ করেছেন মিনেসোটার সেন্ট পল এলাকার মেয়র মেলভিন কার্টার। আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভকে ‘বোধগম্য’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। মিনিয়াপোলিসের মেয়র জ্যাকব ফ্রে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার পুলিশকে কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করেছেন।
প্রাথমিক ভাষ্যে পুলিশ জানায়, ফ্লয়েডের গাড়িতে জাল নোট থাকার খবর পেয়ে সোমবার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তারা ফ্লয়েডকে গাড়ি থেকে নেমে সরে যেতে বললে তিনি কর্মকর্তাদেরকে বাধা দেন এবং আটক এড়ানোর চেষ্টা করেন।
এদিকে, স্থানীয়, অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্রীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। ফ্লয়েডের মৃত্যুর ঘটনার তদন্ত চলছে জানিয়ে দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করারও আশ্বাস দিয়েছেন তারা।
ট্রাম্পের হুঁশিয়ারি
মিনিয়াপোলিসে অরাজকতা ঠেকাতে মেয়র জ্যাকব ফ্রের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ।
টুইটে তিনি বলেন, ‘মেয়র শহরের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী পাঠিয়ে ‘সব ঠিক করা হবে’।’
বৃহস্পতিবার রাতে আরেকটি টুইটে তিনি বলেন, ‘যখন লুটপাট শুরু হবে, তখন গুলিও শুরু হবে।’
Comments