গালে কলম চেপে রেখে লিখেই মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হলো মাসুদ
গালে কলম চেপে রেখে লিখেই মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হলো নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার মাসুদুর রহমান। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর পরিবারের অনুপ্রেরণায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় উপজেলার নবারুণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৩.৬৭ পেয়ে উত্তীর্ণ হলো সে।
উপজেলা দুর্গাপুরের চণ্ডীগড় ইউনিয়নের নাগেরগাতী গ্রামের দিনমজুর সাহেব আলীর সাত সন্তানের ছোট ছেলে মাসুদ। জন্ম থেকেই তার দুই হাতের কব্জি নেই। কিন্তু পড়াশোনার প্রতি তার আগ্রহ প্রবল। শুরুতে পা দিয়ে লেখার চেষ্টা করলেও বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পায়ের বদলে গালে কলম রেখে ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে সে লেখার অভ্যাস শুরু করে। এভাবে একটু একটু করে প্রাথমিকের গণ্ডি পার হয়ে ভর্তি হয় মাধ্যমিকে।
হাত না থাকায় অন্য পড়ালেখা করতে বেগ পেতে হয়েছে তাকে। তার অদম্য ইচ্ছাশক্তির উপর ভর করেই অন্য সবার সাথে তাল মিলিয়ে সে এই সফলতা অর্জন করেছে।
শুধু পড়ালেখা নয়, খেলাধুলাতেও নাম আছে তার। বিকেল হলেই পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে মাঠে ছুটে ফুটবল খেলতে। তার এই সফলতায় মা-বাবাসহ পুরো গ্রামের মানুষ খুশি। এরই মধ্যে অনেকেই তাকে শুভকামনা জানিয়ে গেছেন।
এই প্রতিবেদককে মাসুদ জানায়, পড়ালেখায় প্রতিনিয়ত বাবা-মা, স্কুলের শিক্ষক ও সহপাঠীরা তাকে সাহস যুগিয়েছেন। সে লেখাপড়া করে সম্মানজনক জীবন যাপন করতে চায়। পাশাপাশি খেলাধুলাও চালিয়ে যেতে চায়।
মাসুদের বাবা সাহেব আলী জানান, ছোট থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ তার ছেলের। কিন্তু হাতের কব্জি না থাকায় সবাই চিন্তিত ছিল তাকে নিয়ে। তারপরও নিজের আত্মবিশ্বাসে ভর করে সে এতদূর এসেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অশোক কুমার ভাদুড়ী জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে তার এই ফলাফলে আমরা গর্বিত। ফল প্রকাশের পর উপজেলার গণ্যমান্য অনেকেই তাকে অভিনন্দিত করেছে।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ফারজানা খানম জানান, তার এই ফলাফলে পুরো উপজেলাবাসী খুশি হয়েছেন। তার পরিবারের জন্য সরকারি অর্থায়নে একটি ঘর বরাদ্দ করা হয়েছে। তার লেখাপড়া চালিয়ে নেওয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন আর্থিক সহযোগিতা করবে।
Comments