করোনা আপডেট: দিনাজপুর, যশোর, নোয়াখালী, মানিকগঞ্জ, চট্টগ্রাম, শরীয়তপুর, পাবনা, ফেনী

দিনাজপুরে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত ২৫৫ জনকে শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। সুস্থ হয়েছেন ৫৫ জন ও মারা গেছেন দুই জন। যশোরে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। অধিকাংশ নমুনা যাচ্ছে খুলনা মেডিকেল কলেজ ল্যাবে। অতিরিক্ত চাপের কারণে ফলাফল পেতে দেরি হচ্ছে। করোনায় নোয়াখালীতে আরও একজনের মৃত্যু। সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে শরীয়তপুরে একজন মারা গেছেন। মানিকগঞ্জে করোনার উপসর্গ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু। স্বাস্থ্যবিধি না মানায় চট্টগ্রামে বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি।
মৃত্যুর তিন দিন পর জানা গেল কোভিড পজিটিভ
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় মারা যাওয়া ৩২ বছর বয়সী নারী পোশাক কর্মী করোনায় আক্রান্ত ছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগ। আজ বুধবার সকালে জেলা সিভিল সার্জন মো. আব্দুল কুদ্দুছ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত তিন দিন আগে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে ওই পোশাক কর্মীর মৃত্যুর হয়। তার বাড়ি উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়া গ্রামে। গাজীপুরের শ্রীপুর এলাকায় একটি পোশাক কারখানায় তিনি কাজ করতেন।
চিরিরবন্দর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আজমল হক বলেন, ‘মারা যাওয়ার আগে বেশ কিছু দিন ধরে তিনি জ্বর, সর্দি ও কাশিতে ভুগছিলেন। গত ৩০ মে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দিনাজপুর এম. আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই তিনি মারা যান। করোনা সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় হাসপাতাল থেকে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
ডা. আব্দুল কুদ্দুছ আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার ফলাফল আমাদের হাতে আসে। এ নিয়ে দিনাজপুর জেলায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে দুই জনের মৃত্যু হলো।’
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দিনাজপুরে করোনায় আক্রান্ত ২৪ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ২৫৫ জনে দাঁড়িয়েছে। ইতোমধ্যেই ৫৫ জন সুস্থ হয়েছেন। বর্তমানে হোম আইসোলেশনে আছেন ১৬০ জন, প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে আছেন ২৮ জন, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১০ জন ও মারা গেছেন দুই জন।
করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে পালিয়েছেন ২ নারী
যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে দুই নারী পালিয়ে গেছেন। আজ বুধবার হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. আরিফ আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘গতকাল রাতে ২৭ বছর বয়সী এক নারী পালিয়ে গেছেন। তার বাড়ি যশোর উপশহরের এলাকায়। সন্ধ্যায় ২৫ বছর বয়সী এক নারী পালিয়ে যান। রেজিস্ট্রারে উল্লেখ আছে, তার বাড়ি সদর উপজেলার বসুন্দিয়া গ্রামে। তারা দুজনই গত ৩১ মে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে আসেন। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি নেন।
তিনি বলেন, ‘গতকাল যশোর থেকে ৭৯টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২টি নমুনা পাঠানো হয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে, বাকি ৫৭টি নমুনা পাঠানো হয়েছে খুলনা মেডিকেল কলেজ ল্যাবে। যশোর, নড়াইল, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার নমুনা যাচ্ছে খুলনায়। অতিরিক্ত চাপের কারণে নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পেতে দেরি হচ্ছে।’
নোয়াখালীতে করোনায় মোট ১৯ জনের মৃত্যু
বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টিভির নোয়াখালী প্রতিনিধি মোতাসিম বিল্লাহ সবুজের বাবা কাজী মো. সোলায়মানসহ করোনায় আক্রান্ত চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১৯ জনের মৃত্যু হলো।
কাজী মো. সোলায়মানের বাড়ি চৌমুহনী পৌর এলাকার হাজীপুরে। বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা অসীম কুমার দাস বলেন, ‘মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কাজী মো. সোলায়মানের মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর। সোমবার তার করোনা শনাক্ত হয়েছিল। তাকে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।’
মানিকগঞ্জে করোনার উপসর্গ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু
মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা সফিউদ্দিন (৭৪) মারা গেছেন। আজ বুধবার দুপুরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আরশ্বাদ উল্লাহ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গতকাল বিকাল ৫টায় জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। আজ ভোররাত সাড়ে ৪টায় তিনি গেছেন। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না তা নিশ্চিত হতে সকালে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সাভার প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে।’
সফিউদ্দিনের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার বণ্যা গ্রামে। তিনি ১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলা কমান্ডার ছিলেন। তবে দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবার নিয়ে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার ঠাকুরকান্দি গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছিলেন।
ঘিওর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আইরিন আক্তার বলেন, ‘বিকাল ৫টায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার দাফন সম্পন্ন হবে। করোনা সংক্রমণের উপসর্গ থাকায় তার নামাজে জানাজা ও দাফন স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী হবে।’
মানিকগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, ‘মানিকগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে তিন জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের বাড়ি হরিরামপুর উপজেলায়। এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন ১৭৬ জন।’
করোনায় আক্রান্ত হয়ে কাস্টমস কর্মকর্তার মৃত্যু
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা জসীম উদ্দিন মজুমদার করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আজ ভোররাত পৌনে ৩টার দিকে ঢাকার আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল।
চট্টগ্রাম কাস্টস হাউসের সহকারী কমিশনার নূর-এ হাসনা আনুসূয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাধারণ ছুটির মধ্যে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছেলেন। এখন পর্যন্ত ২১ জন কাস্টমস কর্মকর্তার কভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে।’
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফকরুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সাধারণ ছুটির মধ্যেও সব ধরনের আমদানি-রপ্তানি পণ্য খালাসে ২৪ ঘণ্টা সচল ছিল চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। আমরা সচেতন আছি, তারপরও সব সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। ভিড় কমাতে কর্মকর্তাদের দুই শিফটে কাজ করানো হয়েছে। সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোয়ারেন্টিনে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
শরীয়তপুরে করোনার উপসর্গ নিয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে ৬০ বছর বয়সী একজনের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার ভোররাতে উপজেলার মূলনা ইউনিয়নের মিরাসার গ্রামে বাড়িতেই তার মৃত্যু হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘গতকাল জ্বর, ঠান্ডা, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে তিনি হাসপাতালে এসেছিলেন। তাকে চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সংক্রমণের উপসর্গ থাকায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে আজ তার দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।’
পাবনায় করোনার উপসর্গ নিয়ে ১ জনের মৃত্যু
পাবনায় করোনার উপসর্গ নিয়ে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের একজনের বাড়ি সুজানগর ও অন্য জনের বাড়ি চাটমোহর উপজেলায়। আজ বুধবার ভোররাতে তাদের মৃত্যু হয়।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক আবুল হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত ১ জুন সর্দি, জ্বর ও কাশির নিয়ে সুজানগর উপজেলা থেকে ৬৫ বছর বয়সী এক ব্যক্তি পাবনা জেনারেল হাসপাতালে আসেন। তাকে আইসোলেশন ওয়ার্ডে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। তার নমুনা সংগ্রহ করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়েছে, ফলাফল এখনো আমাদের হাতে আসেনি।’
ফেনীতে মোট ১৮৯ জনের করোনা শনাক্ত
ফেনীতে নতুন করে ১৪ জনসহ মোট ১৮৯ জনের করোনা শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এদের মধ্যে তিন জন মারা গেছেন। সুস্থ হয়েছেন ৬১ জন।
ফেনীর জেলা সিভিল সার্জন মো. সাজ্জাদ হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বর্তমানে সাত জন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। ১১১ জনকে হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
Comments