বেনাপোলে কাস্টমস হাউসের নামে

বাইক বিক্রির ভুয়া ফেসবুক পেইজ খুলে প্রতারণা, আটক ১

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের নামে খোলা হয়েছে ‘বাইক সেল অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ’। বলা হয়েছে— এটি বেনাপোল কাস্টমস হাউসের বাইক বিক্রির অফিসিয়াল পেইজ।
arrest logo
প্রতীকী ছবি। স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের নামে খোলা হয়েছে ‘বাইক সেল অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ’। বলা হয়েছে— এটি বেনাপোল কাস্টমস হাউসের বাইক বিক্রির অফিসিয়াল পেইজ।

বিশ্বাস জাগাতে পেইজের প্রোফাইল পিকচারে দেওয়া হয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোডের্র সাবেক চেয়ারম্যানসহ কাস্টমস হাউসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর গ্রুপ ছবি। দলিলাদিসহ স্বল্প দামে বাইক বিক্রি করা হবে বলে দেওয়া হয়েছে বিজ্ঞাপন।

বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ভারতীয় মোটরসাইকেল স্বল্প দামে পাওয়া যাবে। একটি মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়েছে। অনেকের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে বুকিং মানি।

কাস্টমস হাউস সূত্র জানায়, বাইক বিক্রি করতে হলে বিধি মেনে নিলাম করতে হয়। প্রক্রিয়া শেষে নিলামে অংশগ্রহণকারী মোটরসাইকেল নিতে পারেন। এখানে বুকিং মানি নেওয়ার কোনো ব্যবস্থাই নেই।

মূলত সীমান্তের চোরাই মোটরসাইকেল বিক্রির একটি চক্র এ জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে উল্লেখ করে সূত্র জানায়, বুকিং মানি দিয়ে প্রতারণার শিকার অনেকেই এনবিআরের দ্বারস্থ হয়েছেন। এনবিআর বেনাপোল কাস্টমস হাউসকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেয়।

কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরীর নির্দেশে অতিরিক্ত কমিশনার ড. নেয়ামুল ইসলাম বিষয়টি খতিয়ে দেখার কাজ শুরু করেন। প্রাথমিক ধাপ হিসেবে গত ১৯ মে বেনাপোল বন্দর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়।

বেনাপোল কাস্টমস হাউসের রাজস্ব কর্মকর্তা (প্রশাসন) মো. নঈম মীরন বেনাপোল বন্দর থানায় ভুয়া ফেসবুক পেইজ অকার্যকর করাসহ ব্যবস্থা নিতে এ সাধারণ ডায়েরি করেন।

এতে বলা হয়, ‘জনৈক ব্যক্তি বেনাপোল কাস্টমস হাউসকে সংশ্লিষ্ট করে ‘বাইক সেল অফিসিয়াল পেইজ’ নামে ফেসবুকে একটি পেইজ খুলে মোটরসাইকেল বিক্রয়ের ব্যবসা করে যাচ্ছে। এ পেইজে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর (০১৬৪১৯৫৪৮৬০) উল্লেখ রয়েছে। যা এ দপ্তরের কোনো শুল্ক কর্মকর্তার নম্বর নয়।’

এতে আরও বলা হয়, বেনাপোল কাস্টমস হাউসকে সংশ্লিষ্ট করে বাইক সেল এর কর্তৃপক্ষ মিথ্যা দাবি করছেন যে, তাদের বিক্রয়কৃত মোটরসাইকেলগুলোর সঙ্গে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। এবং এ পণ্যের বিপরীতে এ হাউস কর্তৃপক্ষ সরকারিভাবে বৈধ দলিলাদি প্রদান করছে। প্রকৃত পক্ষে তাদের এ দাবির পক্ষে ন্যূনতম কোনো সত্যতা নেই। বরং এ ধরনের মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবি করে তারা দেশের সাধারণ জনতাকে প্রভাবিত করছে।

কাস্টমস হাউস মনে করে যে, এ হাউসের সঙ্গে তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন দাবির মধ্য দিয়ে তা সীমান্তের চোরাই পথে অবৈধভাবে আনা মোটরসাইকেলের বিপরীতে কাস্টমস হাউসের নামে মিথ্যা ও জাল দলিলাদি সরবরাহ করে জনতাকে প্রভাবিত করছে।

আরও বলা হয়, এ কাস্টমস হাউস একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান বিধায় কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এর কোনো ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা নেই বা থাকাও সম্ভব নয়। এ অবস্থায় এ দপ্তরকে সম্পৃক্ত করে বাইক সেল কর্তৃপক্ষের ফেসবুক পেইজ খোলা, প্রচারণা চালানো এবং এ নামে চোরাই পথে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে অন্য মোটরসাইকেল বিক্রয় করার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে বেআইনি ও সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চক্রান্ত মাত্র।

ভুয়া ফেসবুক পেইজটি অকার্যকর করার আবেদনও করা হয়।

কাস্টমস হাউস সূত্র জানায়, সাধারণ ডায়েরির পর থেকে পুলিশ প্রতারক চক্রকে শনাক্ত করতে কাজ শুরু করে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট কাজ শুরু করে।

গত ১ জুন আরমান হোসেন (৩২) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি কুমিল্লার আমড়াতলীর ভুবনগড় গ্রামের শাহ আলমের ছেলে। বর্তমানে তিনি রাজধানীর ভাটারা এলাকার থাকেন।

এ বিষয়ে বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি মামুন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আরমান হোসেনকে ঢাকার ফার্মগেট থেকে আটক করে বেনাপোলে আনা হয়। পরে তাকে যশোর আদালতে পাঠানো হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানের নামে প্রতারণার অভিযোগে গত ১ জুন রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নঈম মীরন বাদি হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৬ ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করেন।’

উল্লেখ, বেনাপোল কাস্টমস হাউস মোটরসাইকেল নিলামে তোলার জন্য পত্রিকায় ও অনলাইনে বিজ্ঞাপন দেয়। এছাড়াও, এ হাউসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে মোটরসাইকেল বিক্রির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়। নিলাম প্রক্রিয়া শেষে মোটরসাইকেল খালাস দেওয়া হয়।

Comments