আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস

পর্যটক শূন্য লাউয়াছড়ায় বন্যপ্রাণীর প্রাণচাঞ্চল্য

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণার পর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংরক্ষিত এই বনে পর্যটকের উপস্থিতি না থাকায় এবং বনের ভেতরে সড়ক ও রেলপথে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে বন্যপ্রাণীরা।
Lawachhara
ছবি: মিন্টু দেশোয়ারা

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণার পর লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বন্ধ করে দেওয়া হয়। সংরক্ষিত এই বনে পর্যটকের উপস্থিতি না থাকায় এবং বনের ভেতরে সড়ক ও রেলপথে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে পেয়েছে বন্যপ্রাণীরা।

উল্লুকের চেঁচামেচি, বানরের লাফালাফি, পাখির কিচিরমিচিরে নতুন রূপে ফিরতে শুরু করেছে লাউয়াছড়া।

সরেজমিন ঘুরে লাউয়াছড়া বনের গাছে গাছে বন্যপ্রাণীদের লাফালাফি, খাবারের সন্ধানে তাদের অবাধ বিচরণ দেখা যায়।

বনের ভেতরে বসবাসকারীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। গত কয়েক দশকে প্রাকৃতিক বনের গভীরতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে।

প্রাচীনতম গাছগাছালি চুরি হয়ে যাওয়া, মাগুরছড়ায় গ্যাসকূপে বিস্ফোরণ, বনের ভেতর দিয়ে উচ্চ শব্দে রেলপথে ট্রেন চলাচল, সড়কপথে যানবাহনের যাতায়াত, গাড়ির হর্ন, অত্যধিক দর্শনার্থীর বিচরণ, হইহুল্লোড়, পার্শ্ববর্তী টিলাভূমিতে হোটেল, কটেজ ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম— সব মিলিয়ে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে বন ও বন্যপ্রাণী।

তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা ও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বনে পর্যটকদের কোনো উপস্থিতি নেই। পাশাপাশি ট্রেন ও যানবাহন চলাচল না থাকায় বনের প্রাণীগুলোর মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।

তারা আরও জানান, এখন প্রতিনিয়ত উৎফুল্ল প্রাণীদের লাফালাফি, অবাধ বিচরণ ও খাবারের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানোর চিত্র চোখে পড়ে।

লাউয়াছড়া পুঞ্জির বাসিন্দা সাজু মারছিয়াং ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই বনে প্রতিনিয়ত পর্যটকদের ভিড় দেখা যেত, করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর উদ্যান বন্ধ ঘোষণা করায় লাউয়াছড়া বন যেন ফিরে এসেছে নতুন রূপ।’

‘সকাল থেকে উল্লুকের আওয়াজ, বিভিন্ন প্রজাতির বানরের লাফালাফি, পাখির কিচিরমিচির শব্দ, সন্ধ্যায় বন মোরগের ডাকে বনটিতে ফিরে এসেছে হারানো প্রাণ।’

‘এভাবে বনকে দেখতে পাবো তা ছিল কল্পনার বাইরে,’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সরকার যদি আরও কয়েক মাসের জন্য উদ্যানটি বন্ধ ঘোষণা করে তাহলে বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতির জন্য খুবই ভালো হবে।’

লাউয়াছড়া বন্যপ্রাণী বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯১৭ সালে আসাম সরকার পশ্চিম ভানুগাছের ১,২৫০ হেক্টর এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে।

পরবর্তীতে ১৯২৩ ও ১৯২৫ সালে পর্যায়ক্রমে কালাছড়া ও চাউতলী এলাকাকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করে। বনের চারপাশ ঘিরে চা বাগান, হাওর, সংরক্ষিত বন ও গ্রাম রয়েছে।

১৯৯৬ সালে ১,২৫০ হেক্টর জায়গা নিয়ে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ঘোষণা করা হয়।

লাউয়াছড়ায় রয়েছে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রজাতির উভচর প্রাণী, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী।

এদের মধ্যে উল্লুক, হনুমান, ছোট লেজি বানর, লজ্জাবতি বানর, সজারুসহ বিরল প্রজাতির প্রাণী রয়েছে।

মৌলভীবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. বদরুল হুদা ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানটিতে পুরনো প্রাকৃতিক গাছগুলো ক্রমাম্বয়ে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কাঠচোর চক্রের অপতৎপরতাসহ নানাবিদ কার্যক্রমের ফলে এই বনের অবস্থা সংকটাপন্ন।’

‘বন ফাঁকা হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য।’

‘তবে সম্প্রতি সময়ে জনমানব শূন্য ও যানবাহনের চলাচল না থাকায় বনটি নতুন রূপ ধারণ করছে,’ মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আসলে দিনেরবেলা মানুষের চলাচলের কারণে প্রাণীরা অবাধ চলাচলে ভয় পেত। এখন মানুষের চলাচল না থাকায় স্বাচ্ছন্দে রয়েছে বন্য প্রাণীরা।’

Comments

The Daily Star  | English
Islami Bank's former managing director Abdul Mannan

How Islami Bank was taken over ‘at gunpoint’

Islami Bank, the largest private bank by deposits in 2017, was a lucrative target for Sheikh Hasina’s cronies when an influential business group with her blessing occupied it by force – a “perfect robbery” in Bangladesh’s banking history.

8h ago