শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশি হামলায় ‘হতাশ’ মার্কিন কূটনীতিক-কর্মকর্তারা
![](https://bangla.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/us-protest.jpg?itok=nPcmzhOy×tamp=1591355610)
জর্জ ফ্লয়েড হত্যার প্রতিবাদে চলমান সহিংস আন্দোলন ও পুলিশি হামলা নিয়ে উদ্বেগ এবং হতাশা জানিয়েছেন মার্কিন কূটনীতিক ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
সিএনএন জানায়, হোয়াইট হাউসের সামনে আন্দোলনকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছোঁড়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বেইজিংয়ের তিয়ানআনমেন স্কয়ারের গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।
ওই বৈঠকে উপস্থিত এক আন্দোলনকর্মী জানান, বৈঠকে ওয়াশিংটনসহ গোটা যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বিক্ষোভ সম্পর্কে কোনো আলোচনা হয়নি।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মী বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দেয়। এখন মার্কিন নেতাদের পক্ষে খুব কঠিন সময়।’
মার্কিন কূটনীতিকরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের চলমান ঘটনাগুলো ‘ভীতিকর’ ও ‘হতাশাজনক’। যা কী না দেশটির নৈতিকতা ও ধ্যান-ধারণাকেও ক্ষুণ্ণ করে।
বুলগেরিয়ার সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি ম্যাকেল্ডনি বলেন, ‘যে পরিস্থিতিতেই হোক না কেন, তিয়ানআনমেন স্কয়ারের গণহত্যা থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ একটি চমৎকার বিষয়। আমরা তখন (তিয়ানআনমেন স্কয়ার বিক্ষোভ) আন্দোলনকারীদের সমর্থন দিয়েছি। আমরা ইউক্রেন, তেহরান ও হংকংয়ের আন্দোলনকারীদেরও সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতির পর সেটা কতখানি সম্ভব?’
মিনিয়াপোলিসে পুলিশি হেফাজতে জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে জনবিক্ষোভ যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। গোটা ইউরোপ এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়া থেকেও একদল কর্মী আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন।
অনেকে আবার মার্কিন নেতাদের সমালোচনাও করেছেন। হংকংয়ের প্রধান ক্যারি ল্যাম জানান, চলমান আন্দোলনে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমুখী মনোভাব প্রকাশ পাচ্ছে।
এর আগে, প্রয়োজনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশে সেনা মোতায়েন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে আন্দোলনকর্মীদের পাশাপাশি সাংবাদিকদের ওপরেও হামলা করেছে পুলিশ। ওয়াশিংটনে অস্ট্রেলিয়ার এক টেলিভিশনকর্মীর ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন।
ন্যান্সি ম্যাকেল্ডনি বলেন, ‘ট্রাম্পের বক্তব্য ও অদক্ষ প্রতিক্রিয়ার কারণে বিশ্বজুড়ে মার্কিন কূটনীতিকরা এখন জটিলতায় পড়েছেন। অতীতে যুক্তরাষ্ট্রকে মানবাধিকারের বাহক হিসেবে বিবেচনা করা হতো। বর্তমানে এর পরিবর্তে আমরা উপহাস ও উদ্বেগের বিষয়ে পরিণত হয়েছি।’
দেশটির পররাষ্ট্র বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, চলমান পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক অবস্থানকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। ২০০৮ সালে আর্মেনিয়ায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশি সংঘর্ষের সময় যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রশিক্ষণ ও সংস্কারের জন্য সহায়তা করে।
তিনি বলেন, ‘১৩০টিরও বেশি দেশের পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় আমরা মানবাধিকার যাতে লঙ্ঘন না হয় ও এই বিষয়ে যেন কঠোরভাবে তদন্ত করা হয় সেসব শেখাই। আমরা তাদেরকে মানবাধিকার রক্ষার কথা বলেছি, শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা না চালিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই তার প্রতিক্রিয়া জানাতে বলেছি। কিন্তু, সাম্প্রতিক ঘটনার পর আমরা কি আর এ কথাগুলো অন্য দেশের পুলিশ বাহিনীকে বলতে পারব?’
দেশটির পররাষ্ট্র বিভাগের আরেক কর্মকর্তা জানান, ‘সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো খুবই “হৃদয়বিদারক”। যুক্তরাষ্ট্রের ঐক্য ও সম্প্রীতির বাণীগুলো এখন আমাদের কাছে, আমাদের কৃষ্ণাঙ্গ বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে এক ধরনের বিশ্বাসঘাতকতা মনে হচ্ছে। আমরা সবাই শান্তি চাই। আমাদের মধ্যে অনেকেই বর্ণ ও সম্প্রদায়ের মতো বিষয়কে জটিল ইস্যুতে পরিণত করে সুবিধা নিচ্ছে, সহিংস হয়ে উঠছে। এটা নিষ্ঠুরতা। এতে করে আমরা সবাই একা হয়ে পড়েছি। আমরা নিজ দেশে থেকেও যেন হারিয়ে গেছি।’
Comments