বৈচিত্র্য ছাড়া ক্রিকেট ভাবাই যায় না: আইসিসি

সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে লিখেছে, বৈচিত্র্য ছাড়া ক্রিকেট ভাবাই যায় না।
icc and england
ছবি: এএফপি (সম্পাদিত)

বর্ণ বিদ্বেষসহ যেকোনো ধরনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে আইসিসি সবসময় কঠোর অবস্থান নিয়ে থাকে। পুলিশি নির্যাতনে আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুর পর গোটা বিশ্ব যখন প্রতিবাদে উত্তাল, তখন সংস্থাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে লিখেছে, বৈচিত্র্য ছাড়া ক্রিকেট ভাবাই যায় না।

গেল ২৫ মে যুক্তরাষ্ট্রের মিনিয়াপোলিস রাজ্যে এক পুলিশ কর্মকর্তা অপরাধী সন্দেহে পথ আটকে নির্যাতন চালান কৃষ্ণাঙ্গ ফ্লয়েডের উপর। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ‘আমি শ্বাস নিতে পারছি না’ বলে সাহায্য চাইছিলেন তিনি। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

বর্ণ বিদ্বেষের মানসিকতা থেকেই ফ্লয়েডকে ‘হত্যা’ করা হয়েছে দাবি করে বিক্ষোভে ফুঁসছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের লাখ লাখ মানুষ। দেশটিতে প্রায়ই পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গরা নিপীড়নের শিকার হওয়ায় এবার প্রতিবাদে হয়েছে বিস্ফোরণ। করোনাভাইরাসের মহামারির মাঝেই বিভিন্ন শহরে লকডাউন ও কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে এসেছেন আন্দোলনকারীরা।

প্রতিবাদের ঢেউ ছুঁয়েছে ক্রীড়া দুনিয়াকেও। প্রাক্তন বাস্কেটবল খেলোয়াড় ফ্লয়েডের জন্য ন্যায় বিচার চেয়েছেন বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন অঙ্গনের ক্রীড়াবিদরা। তারা প্রতিবাদকারীদের সঙ্গে প্রকাশ করেছেন সংহতি। কয়েক দিন আগে ফিফাও দিয়েছে বিবৃতি, ‘বর্ণ বিদ্বেষ ও সব ধরনের বৈষম্যকে আমাদের না বলতে হবে। নৃশংসতাকে না বলতে হবে, যেকোনো রকমের নৃশংসতাকে।’

এবার ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসিও নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। শুক্রবার অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে গেল ২০১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালের রোমাঞ্চকর শেষ মুহূর্তগুলো নিয়ে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে সংস্থাটি। সেখানে দেখা গিয়েছে, ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভূত জোফরা আর্চারের করা সুপার ওভারের শেষ বলটির পর বিশ্বজয়ের আনন্দে মেতেছেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা।

ভিডিওটির ক্যাপশনে আইসিসি লিখেছে, ‘বৈচিত্র্য ছাড়া ক্রিকেট কিছুই নয়, বৈচিত্র্য ছাড়া আপনি পুরো ছবিটা দেখতে পাবেন না।’

ক্রিকেট যে সত্যিই বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ, তার সবচেয়ে আদর্শ উদাহরণ হতে পারে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা ইংল্যান্ড দলটি। তাদের অধিনায়ক ওয়েন মরগ্যান একজন আইরিশ। আয়ারল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও খেলেছেন। বিশ্বকাপে দলটির সেরা পারফর্মার ছিলেন নিউজিল্যান্ডের জন্মগ্রহণকারী অলরাউন্ডার বেন স্টোকস। দুই স্পিনার মইন আলি ও আদিল রশিদ পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। আসরজুড়ে ইংলিশদের দুর্দান্ত শুরু এনে দেওয়া ওপেনার জেসন রয়ের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়।

এমনকি শিরোপা জয়ের পরে ইংলিশ দলনেতা মরগ্যান বলেছিলেন যে, বৈচিত্র্যের ভেতরেই একতা খুঁজে পেয়েছিলেন তারা এবং সেটাই ছিল তাদের সাফল্যের গোপন রহস্য।

বর্ণ বৈষম্যের প্রতিবাদ জানিয়ে এর আগে সরব হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই তারকা ক্রিকেটার ক্রিস গেইল ও ড্যারেন স্যামি। আগ্রাসী বাঁহাতি ব্যাটসম্যান গেইল জানান, ‘সারা দুনিয়ায় ভ্রমণ করি আমি। আমিও বর্ণ বিদ্বেষের শিকার হয়েছি। আমার গায়ের রঙের কারণেই বিদ্বেষের শিকার হতে হয়েছে। বর্ণ বিদ্বেষ ফুটবলেই আবদ্ধ নেই, ক্রিকেটেও তা আছে। এমনকি দলের ভেতরও। শুধু গায়ের রঙ কালো বলে অনেক সময় আমি দোষী হয়েছি। কিন্তু আমি বলতে চাই, আমি কৃষ্ণাঙ্গ এবং আমি শক্তিশালী।’

অধিনায়ক হিসেবে দুবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জেতা স্যামি বর্ণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে আইসিসি ও বাকি সব ক্রিকেট বোর্ডকে চুপ না থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘গলায় হাঁটু দিয়ে চেপে ধরার ওই ভিডিও দেখার পরও যদি ক্রিকেটবিশ্ব সরব না হয়, তবে বলতে হবে তোমরাও এই সমস্যার অংশ।’

Comments

The Daily Star  | English
expediency

Expediency triumphs over principle in electoral politics

It appears that all of the ruling party’s efforts revolve around the next election, not considering longer-term ramifications for the itself.

4h ago