করোনা আপডেট: টাঙ্গাইল, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর ও নোয়াখালী
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার চেয়ারম্যানসহ জেলায় আরও ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। লক্ষ্মীপুরে পুলিশ, ব্যাংকারসহ আরও ১২ জন, ফেনীতে একই পরিবারে পাঁচ জনসহ আরও ২৩ জন ও চাঁদপুরে নতুন করে আরও ১৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া, নোয়াখালীতে এ পর্যন্ত অর্ধশত পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দ্য ডেইলি স্টারের স্থানীয় সংবাদদাতারা এ সব তথ্য জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইলে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ ১৬ জনের করোনা শনাক্ত
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার চেয়ারম্যানসহ জেলায় আরও ১৬ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ২৩৫ জনের করোনা শনাক্ত হলো। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াহীদুজ্জামান আজ শনিবার দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, নতুন শনাক্তদের মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চার জন, মির্জাপুরের আট জন, কালিহাতীর তিন জন ও ঘাটাইলের একজন রয়েছেন। তাদের মধ্যে মির্জাপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর এনায়েত হোসেন মন্টু রয়েছেন বলে তিনি জানান।
তিনি আরও জানান, জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত ২৩৫ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৬৩ জন। আর মারা গেছেন পাঁচ জন।
লক্ষ্মীপুরে পুলিশ, ব্যাংকারসহ আরও ১২ জনের করোনা শনাক্ত
লক্ষ্মীপুরে আরও ১২ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে পুলিশ, ব্যাংকার ও চিকিৎসক পরিবহনের গাড়ি চালক রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ২৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হলো।
লক্ষ্মীপুরের সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল গাফফার আজ শনিবার দুপুরে দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, জেলায় নতুন শনাক্ত ১২ জনের মধ্যে রামগঞ্জে সাত জন, রায়পুরে দুই জন, সদরে একজন, কমলনগরে একজন ও রামগতিতে একজন রয়েছেন।
রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. গুণময় পোদ্দার জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রামগঞ্জে সাত জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই জন পুলিশ সদস্য বলে তিনি জানান। আক্রান্তদেরকে রামগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ নিয়ে উপজেলায় করোনায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫৫ জন।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জাকির হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রায়পুরে দুই পুলিশ সদস্যের করোনা শনাক্ত হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুর রহিম জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের বহনকারী গাড়ি চালকের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আবু তাহের জানান, কমলনগর সোনালী ব্যাংক শাখার এক কর্মকর্তার করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে এবং তিনি যে বাড়িতে থাকতেন সেটি লকডাউন করে সাত জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ পর্যন্ত করোনা রোগীর সংখ্যা ২৬৭ জন। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১২২ জন, রামগঞ্জে ৫৫ জন, কমলনগরে ২২ জন, রামগতিতে ২২ জন ও রায়পুরে ৪৬ জন রয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬৯ জন। হোম আইসোলেশনে আছেন ৬০ জন। এ ছাড়া, সুস্থ হয়েছেন ১৪২ জন ও মারা গেছেন পাঁচ জন।
ফেনীতে একই পরিবারের ৫ জনসহ ২৩ জনের করোনা শনাক্ত
ফেনীতে একই পরিবারে পাঁচ জনসহ আরও ২৩ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ২৪৮ জনের করোনা শনাক্ত হলো। জেলা সিভিল সার্জন মো. সাজ্জাদ হোসেন আজ শনিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, নতুন শনাক্তদের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলার একই পরিবারে পাঁচ জনসহ আট জন, সোনাগাজীতে সাত জন, পরশুরামে তিন জন, ছাগলনাইয়ায় তিন জন, দাগনভূঁঞায় ও ফুলগাজী উপজেলায় একজন করে রয়েছেন।
তিনি আরও জানান, জেলায় মোট শনাক্ত ২৪৮ জনের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় রয়েছেন ৯১ জন, দাগনভূঁঞায় ৭৮ জন, ছাগলনাইয়ায় ২৬ জন, সোনাগাজীতে ২৯ জন, পরশুরাম ১০ জন ও ফুলগাজীতে নয় জন। বাকি পাঁচ জন প্রতিবেশী উপজেলা মিরসরাই, চৌদ্দগ্রাম ও সেনবাগের বাসিন্দা।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জেলায় এ পর্যন্ত চার জন করোনায় মারা গেছেন। সুস্থ হয়েছেন ৬৭ জন। সাত জন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ও ১৬৩ জন স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বাকি সাত জনকে অন্যত্র স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
চাঁদপুরে আরও ১৭ জনের করোনা শনাক্ত
চাঁদপুরে নতুন করে আরও ১৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. সাখাওয়াত উল্লাহ আজ শনিবার বিকেলে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আজ দুপুরে জেলার ৫৭ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট এসেছে। তাদের মধ্যে ১৭ জনের রিপোর্ট পজিটিভ। এর মধ্যে চাঁদপুর সদরে রয়েছে ছয় জন, মতলব দক্ষিণে চার জন, হাজীগঞ্জে তিন জন, ফরিদগঞ্জে তিন জন ও হাইমচরে একজন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় এ নিয়ে ২৭৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ করোনা উপসর্গ নিয়ে জেলায় এ পর্যন্ত ৫২ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে নমুনা পরীক্ষা করে ২১ জনের পজিটিভ, আর ২৩ জনের নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। বাকি আট জনের রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি।
এ দিকে, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাজীগঞ্জ সার্কেল) আফজাল হোসেন জানান, আজ শনিবারসহ গত দুই দিনে হাজীগঞ্জে করোনা উপসর্গ জ্বর, শ্বাসকষ্ট নিয়ে নয় জন মারা গেছেন। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তি করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা যান। তাদের সৎকার কাজে এলাকাবাসী বাঁধা দিলে একজনকে মাটিতে দাফন করা হয়। অপরজনকে পৌর এলাকার শ্মশানে এনে দাহ করার ব্যবস্থা করা হয়।
হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শোয়েব আহমেদ বলেন, উপজেলায় এ পর্যন্ত ২২ জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে তিন জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে, আর, ছয় জনের নেগেটিভ। বাকিদের রিপোর্ট এখনও আসে নি বলে তিনি জানান।
নোয়াখালীতে অর্ধশত পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত
গতকাল নোয়াখালীতে নয় পুলিশ সদস্যের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত নোয়াখালী জেলায় করোনায় আক্রান্ত পুলিশের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২ জন।
নোয়াখালী জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের করোনা ফোকাল পার্সন ও জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নোয়াখালী জেলায় প্রায় ১৪শ পুলিশ রয়েছেন। তাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫২ জন। আক্রান্ত পুলিশ সদস্যরা জেলার বিভিন্ন থানা ও পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত আক্রান্তদের মধ্যে ছয় জন সুস্থ হয়েছেন। তাদেরকে নোয়াখালী পুলিশ লাইনস হাসপাতালে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। বাকীরা হোম আইসোলেশন ও কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হসপিটাল নোয়াখালীতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।'
তিনি জানান, সুধারাম মডেল থানাধীন সোনাপুর পুলিশ ফাঁড়িতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৭ জন পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুই জন পুলিশ পরিদর্শক রয়েছেন বলে জানান তিনি। বেগমগঞ্জ থানায় ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ ছাড়া, চৌমুহনী পুলিশ ফাঁড়ির ১১ জন, চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ চার জন, বেগমগঞ্জ সার্কেল কার্যালয়ের তিন জন, কবিরহাট থানার একজন ও পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) একজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র বেগমগঞ্জের চৌমুহনী। চৌমুহনী বাজারকে করোনা রেড জোন চিহ্নিত করে লকডাউন করা হয়েছে। এ লকডাউন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় ৫২ পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। সার্বক্ষণিক যেখানে মানুষের সমাগম সেখানেই পুলিশ কাজ করছে। কোথাও লকডাউন কার্যকর করতে, কোথাও করোনায় আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিদের দাফন করতে এবং আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করতেও পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, আক্রান্ত পুলিশ সদস্যদের ব্যাপারে তিনি নিয়মিত খোজ খবর রাখছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসার নেতৃত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
পুলিশ সুপার জানান, করোনা আক্রান্ত পুলিশ সদস্য সুস্থ হলে, তাদেরকে বরন করে নেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা করার জন্য পুলিশ হেড কোয়াটারে চিঠি দেওয়া হয়েছে বলেও তিনি জানান।
Comments