মণিরামপুরের প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত

ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত অসহায়-দরিদ্রদের ঘরবাড়ি মেরামত করার জন্য এই উপজেলায় ঢেউটিন ও নগদ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। তবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামতের জন্য এখনো কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মেরামতের কাজও শুরু করা যায়নি অর্থের অভাবে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে মণিরামপুর উপজেলায় ৩৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় দেড় হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। রইচ উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসা, দুর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মণিরামপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হোগলাডাঙ্গা-কোটামারা-কাজিরগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, চাঁদপুর মাঝিয়ালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, টেংরামারী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মণিরামপুর কারিগরি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট, সবুজপল্লী কলেজ, ধলিগাতী আলিম মাদ্রাসাসহ প্রায় অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব প্রতিষ্ঠান মেরামতের জন্য সরকার এখনো কোন অর্থ বরাদ্দ দেয়নি। ফলে অর্থাভাবে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।
টেংরামারী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রী প্রভাস চন্দ্র বলেন, ‘গত ২০ মে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে বিদ্যালয়ের পাঁচটি কক্ষ ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। কিন্তু, স্কুলের ফান্ডে টাকা না থাকায় মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না।’
দুর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল বাশার ফিরোজ বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে জরাজীর্ণ স্কুলভবনের বেশ কয়েকটি কক্ষের চাল উড়ে গেছে এবং দেয়ালও ভেঙে গেছে। এগুলো ঠিক করতে না পারলে স্কুল খুললে শিক্ষার্থীদের পাঠদান দেওয়া সম্ভব হবে না।’
রইচ উদ্দিন দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবুল হাসান জানান, ঘূর্ণিঝড়ে তাদের মাদরাসার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে, মেরামতের জন্য এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ পায়নি।
বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুললে শ্রেণিকক্ষের অভাবে মণিরামপুরের এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের খোলা আকাশের নিচে ক্লাস নিতে হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘আম্পানের কারণে উপজেলার প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মোট ৩৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা আমাদের কাছে এসেছে। সেই তালিকা ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো মেরামতের জন্য এখনো কোনো অর্থ বরাদ্দ আসেনি।’
উপজেলা উপ-সহকারী প্রকৌশলী সরোয়ার হোসেন বলেন, ‘দরিদ্রদের ঘরবাড়ি মেরামতের জন্য ৩০০ বান ঢেউটিন ও ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ এসছে। তবে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য বরাদ্দ আসেনি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, ‘দরিদ্র-অসহায় ব্যক্তিদের ঘরবাড়ি মেরামতে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। যেহেতু বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, তাই পরে বরাদ্দ পাওয়া গেলে এগুলো মেরামত করা হবে।’
Comments