পুরোপুরি লকডাউন হবে ‘রেড জোন’
![](https://tds-images-bn.thedailystar.net/sites/default/files/styles/big_202/public/feature/images/untitled-1_90.jpg?itok=mNSJWSCx×tamp=1591524008)
দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান ভাবে বেড়ে চলেছে কোভিড-১৯ এ মৃত্যু ও সংক্রমণের সংখ্যা। এরই প্রেক্ষিতে সরকার আজ রোববার থেকে ঢাকাসহ চারটি জেলার কয়েকটি অঞ্চল ‘রেড জোন’ ঘোষণা করে পাইলট ভিত্তিতে পুরোপুরি লকডাউন কার্যকর করবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সংক্রমণ ছড়ানো বন্ধ করতে আক্রান্ত সকলকে আইসোলেশন সেন্টারে নেওয়া হবে এবং কার্যকরভাবে আক্রান্তদের সংস্পর্শে যারাই এসেছেন তাদের খুঁজে বের করা হবে।
প্রথম পর্যায়ে রাজধানীর রাজাবাজার ও ওয়ারী ‘রেড জোন’ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হওয়ায় রেড জোনের জন্য থাকছে কঠোর বিধিনিষেধ।
নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও নরসিংদীর কয়েকটি অঞ্চলেও কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করা হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। ঢাকার পর এই জেলাগুলোতেই আক্রান্তর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
গতকাল শনিবার সচিবালয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এলজিআরডি মন্ত্রী, ঢাকার দুই মেয়র এবং সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন বলে গতকাল রাতে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান সভার একজন সদস্য।
এর আগে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান খান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজ থেকে পাইলট ভিত্তিতে লকডাউন চালু করা হবে। ‘যদি এটি সফল হয় তাহলে আমরা অন্যান্য জায়গাতেও এটি বাস্তবায়ন করব।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মিডিয়া সেলের প্রধান হাবিবুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যুর হারের ভিত্তিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলকে লাল (রেড), হলুদ (ইয়েলো) এবং সবুজ (গ্রিন) অঞ্চলে ভাগ করার কাজ একই সঙ্গে চলতে থাকবে।
তিনি জানান, কাউকে ‘রেড জোনে’ প্রবেশ বা বের হওয়া অনুমতি দেওয়া হবে না। ‘ইয়েলো জোনে’ সর্ব সাধারণ ও যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ থাকবে। ‘গ্রিন জোনে’ তেমন কোনো বিধিনিষেধ থাকবে না। ‘রেড জোন’ এবং ‘ইয়েলো জোন’ থেকে কাউকেই ‘গ্রিন জোনে’ প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
তিনি কোনো এলাকার নাম উল্লেখ না করে বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে জোনগুলো আলাদা করবো।’
হাবিবুর রহমান জানান, তারা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ, সিটি করপোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলর এবং পুলিশের কাছ থেকেও সহায়তা নেবেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের করোনা পরিস্থিতি তদারকি ও সহযোগিতার জন্য গঠিত সরকারের আট সদস্যের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের একজন সদস্য, চিকিৎসা বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ডা. লিয়াকত আলী জানান, এটা বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ, এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবীসহ সমাজের সকল সদস্যের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন।
গ্রামীণ অঞ্চলেও জোনগুলো কার্যকর করা যেতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র একটি সরকারি আদেশ জারি করে এটা বাস্তবায়ন করা যাবে না।’
গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৫ জনসহ দেশে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে মোট মারা গেছেন ৮৪৬ জন। নতুন করে শনাক্ত হওয়া ২ হাজার ৬৩৫ জনসহ মোট শনাক্ত হয়েছেন ৬৩ হাজার ২৬ জন।
১ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের সভাপতিত্বে এবং তিন শহরের মেয়রদের সমন্বয়ে গঠিত একটি উচ্চ পর্যায়ের সরকারি বৈঠকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার অনুযায়ী দেশকে তিনটি জোনে ভাগ করার বিষয়ে আলোচনা হয়।
৩১ মে থেকে করোনা বিস্তার রোধে সরকার ঘোষিত ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে এই জোন ভিত্তিক ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। দেশের অর্থনীতি এবং জনজীবন সচল রাখার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই ছুটি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।
জোন পদ্ধতি
আট সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটি সরকারের কাছে একটি খসড়া প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে। তার একটি কপি হাতে এসেছে দ্য ডেইলি স্টারের।
কমিটির একজন সদস্য জানান, খসড়াটি পেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কিছু পরামর্শ দিয়েছিলেন। কমিটি এই পরামর্শগুলো অন্তর্ভুক্ত করে দু-একদিনের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।
খসড়া সুপারিশ অনুসারে, একটি ওয়ার্ডে শনাক্ত সংখ্যা, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং মানুষের জীবনযাপনের মানের ভিত্তিতে গ্রিন, ইয়েলো এবং রেড জোন চিহ্নিত করা হবে।
একজনও কোভিড-১৯ সংক্রমিত হয়নি যেসব এলাকায় সেগুলোকে ‘গ্রিন জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে।
যেসব এলাকায় ৪০ জনের কম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন সেগুলো হবে ‘ইয়েলো জোন’। যদি অঞ্চলটি ঘন বসতিপূর্ণ হয় এবং বেশিরভাগ মানুষের জীবনযাপনের মান কম থাকে তাহলে ‘ইয়েলো জোন’ ঘোষণার জন্য শনাক্ত রোগীর সংখ্যা হবে ৩০।
৪০ জনের বেশি যে এলাকায় রোগী শনাক্ত হয়ে থাকলে তা ‘রেড জোন’ হিসেবে বিবেচিত হবে। খসড়া সুপারিশ অনুসারে জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হলে এই সংখ্যা হওয়া উচিত ৩০।
বাস্তবায়ন
কিভাবে এই জোনগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব সে সম্পর্কে সুপারিশও দিয়েছে কমিটি।
এতে বলা হয়েছে, সকল করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত করে তাদের আইসোলেশন সেন্টারে নিতে হবে। আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে স্থানীয় স্কুল, কলেজ এবং কমিউনিটি সেন্টার ব্যবহার করা যেতে পারে। এই কাজটি এনজিওসহ বেসরকারি ব্যবস্থাপনার সহায়তায় স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা করতে পারেন।
কমিটি আরও পরামর্শ দিয়েছে যে যাদের আইসোলেশন সেন্টারে পাঠানো হবে তাদের পরিবারকে অবশ্যই খাদ্য এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রদান করতে হবে।
এই কমিটির সদস্যরা সংক্রামিতদের সংস্পর্শে যারাই এসেছে তাদের সবাইকে খুঁজে বের করার উপর জোর দিয়েছেন। এর মাধ্যমে বের করা ব্যক্তিদের যারাই করোনা পজিটিভ হবেন তাদের সবাইকে আইসোলেশনে নিয়ে যেতে হবে।
এর পাশাপাশি তারা সঠিকভাবে করোনা রোগী শনাক্ত করা জন্য নমুনা সংগ্রহ বুথ স্থাপন এবং প্রশিক্ষিত নমুনা সংগ্রহকারী মোতায়েন করার পরামর্শ দিয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বেসরকারি সহায়তায় এগুলো পরিচালনা করতে পারেন বলে তারা উল্লেখ করেছেন।
তারা যোগ করেছেন, সমাজের সদস্যদের এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতন করতে হবে। জোন ভিত্তিক স্বাস্থ্য নির্দেশাবলীর লিখিত এবং চিত্রযুক্ত বিবরণ অবশ্যই প্রতিটি এলাকার দৃশ্যমান স্থানে স্থাপন করতে হবে।
প্রত্যেকটি মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে এবং অত্যন্ত দরিদ্রদের বিনা খরচে অ্যাম্বুলেন্স সেবা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছে কমিটি।
অন্যান্য সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করা।
Comments