পাবনার ‘করোনাযোদ্ধা’ বাবা-মেয়ের গল্প
করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্য বিভাগের নানা সংকট ও অব্যবস্থাপনার মাঝেও জীবন বাজি রেখে দৃঢ় মনোবল নিয়ে ফ্রন্টলাইনে থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন অনেক চিকিৎসক। কেউ কেউ এ যুদ্ধে নেমেছেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে।
করোনাযুদ্ধে মানুষের সেবায় এমনই দৃষ্টান্ত গড়েছেন পাবনার চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান ও তার মেয়ে ডা. মায়িশা ফাহমিদা এশা।
এরই মাঝে সেবা দিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ডা. মোস্তাফিজ। ঝুঁকিতে রয়েছেন ডা. এশাও।
ডা. মোস্তাফিজ পাবনা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই সদর উপজেলায় গঠিত মেডিকেল টিমের নেতৃত্ব তার কাঁধে।
করোনা মোকাবিলায় শুধু নির্দেশনা নয়, করোনা উপসর্গ নিয়ে সাহায্যপ্রার্থীদের ত্রাণকর্তায় পরিণত হয়েছিলেন তিনি। আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ, চিকিৎসার ব্যবস্থা, বাড়ি লকডাউন থেকে শুরু করে প্রতিটি কাজে নিজে উপস্থিত থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
পরিবারের সদস্যদের মায়া ত্যাগ করে রাত-দিন কাজ করেছেন দেশ-মানবতার জন্যে।
সতকর্তা অবলম্বন করলেও করোনাভাইরাস থেকে রেহাই পাননি তিনি। জ্বর-ঠান্ডার উপসর্গ দেখা দিলে গত সপ্তাহে আইসোলেশনে চলে যান মোস্তাফিজ। গতকাল রোববার তার রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
তবে, আক্রান্ত হলেও মানসিক ও শারীরিকভাবে ভালো আছেন ডা. মোস্তফিজুর রহমান। উপসর্গ এখন অনেকটাই নেই। বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, ‘আশা করছি, দ্রুতই সুস্থ হয়ে আবারো কাজে ফিরতে পারবো।’
ডা. মোস্তাফিজের বড় মেয়ে ডা. মায়িশা ফাহমিদা এশা ঢাকার হলিক্রস মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে চিকিৎসক হিসেবে যোগ দিয়েছেন সেখানকার হাসপাতালে।
করোনা চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল টিম বি ফোরের হয়ে কাজ করছেন তিনি। গত ১০ দিন টানা হাসপাতালের করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন শেষে এখন ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন এশা।
দেশের জন্য কাজ করা করোনাযোদ্ধা স্বামী ও মেয়ের জন্য এখন গর্বিত ডা. মোস্তাফিজের স্ত্রী মেহের সুলতানা। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মানবতার এ ক্রান্তিলগ্নে আমার স্বামী, মেয়েসহ চিকিৎসকরা করোনার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে জয়ী হবে বলেই বিশ্বাস করি।’
‘প্রথম প্রথম একটু ভয় লাগত। কিন্তু মানুষের প্রতি মোস্তাফিজ ও এশার ভালোবাসা আমাকে মুগ্ধ করেছে। সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে। ওদের জন্য সত্যিই গর্ববোধ করি,’ যোগ করেন তিনি।
Comments