অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ‍্য অর্থমন্ত্রীর

করোনাকে পরাস্ত করতে দেশ আর বৈশ্বিক লকডাউনের মূল্য দিয়েছে বাংলাদেশের শিল্পোৎপাদন, কেড়ে নিয়েছে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান আর উপার্জন।

করোনাকে পরাস্ত করতে দেশ আর বৈশ্বিক লকডাউনের মূল্য দিয়েছে বাংলাদেশের শিল্পোৎপাদন, কেড়ে নিয়েছে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান আর উপার্জন।

সেইসঙ্গে গত ৩০ বছরে এই প্রথম দারিদ্র্য রেখা উর্ধ্বমুখী, যেটি ১৯৯২ সাল থেকে নিম্নমুখী ছিল।

বিপদের এখানেই শেষ নয়।

করোনাভাইরাসের কারণে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থনীতির সবচেয়ে নাজুক অবস্থায়, দেশে বৈদেশিক অর্থায়নের দুটো গুরুত্বপূর্ণ উৎস- রপ্তানি ও রেমিট্যান্সের বড় পতন হয়েছে।

ইকোনোমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি) দেশের ১০২টি কারখানার ওপর এক জরিপ চালায়। তাতে দেখা যায়, গত বছরের মে মাসের তুলনায় ২০২০ সালের মে মাসে ৯৭ দশমিক ৩ শতাংশ কারখানার ক্রয়াদেশ বাতিল কিংবা চাহিদা কমেছে। কোম্পানিগুলো মাত্র ৫৮ দশমিক ৮ শতাংশ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে।

ইআরজির গত ৬ জুন তাদের প্রকাশিত জরিপের সারাংশে জানায়, জুন মাসের ক্ষেত্রে এই চিত্র ধারণাতীত এবং বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানই অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হবে।

এমন পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রী এ এইচ এম মুস্তাফা কামাল আজ ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করছেন।

সত্তরোর্ধ্ব এই অর্থমন্ত্রীর এটি দ্বিতীয় বাজেট। পুরো দেশ গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার, সুরক্ষা এবং নতুন কর্মসংস্থান তৈরি এবং লাখো মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের ঘেরাটোপ থেকে বের করে আনতে তিনি কী উপায় নিয়ে আসেন।

১৯৮০ সালের পর জিডিপি প্রবৃদ্ধির সবচেয়ে কম পূর্বাভাসের কথা বলা হচ্ছে। এই সপ্তাহের শুরুতেই বিশ্বব্যাংক ২০২০ সালে ১ দশমিক ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে, গত বছর যেখানে ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ।

গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এবারের বাজেট গতানুগতিক ধারার নয়।

এতে বলা হয়, অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা শিরোনামে এবারের বাজেট সরকারের অতীত অর্জন ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে স্বাস্থ্য ও কৃষিখাতে। সেইসঙ্গে খাদ্য উৎপাদন ও কর্মসংস্থানকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প এবং কর্মসংস্থান তৈরিতে আগামী অর্থবছরের বাজেটে বিভিন্ন প্রস্তাব থাকবে বলেও জানিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়।

আগামী অর্থবছরে আয়, চাকরি ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থার বিষয়ে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে রাজস্ব বিভাগ ও অর্থমন্ত্রণালয়।

প্রত্যাশিত পদক্ষেপের মধ্যে একটি হলো নন লিস্টেড কোম্পানির কর্পোরেট করহার কমানো। দেশ ও বিশ্ব বাজারে চাহিদা কমার কারণে তাদের যে ক্ষতি তা থেকে সরকার তাদের সহায়তা করতে চায়।

তালিকাভুক্ত নয় এমন প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানের ৩৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্স থেকে আড়াই শতাংশ কমবে বলে আশা করছে। রাজস্ব বোর্ডের তথ্যে দেখা যায়, গত ৬ বছর ধরেই এই করহার অপরিবর্তিত রয়েছে।

এমন এক সময়ে এই পদক্ষেপ আসছে, যেখানে গত ২৬ মার্চের সাধারণ ছুটির পর বেশিরভাগ কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে এবং ব্যবসা হারিয়েছে।

ইআরজির সেই জরিপে আরও দেখা যায়, সরকারের ৪৫ দিনের সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পরও ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ কারখানা আর খোলেনি। এক চতুর্থাংশের বেশি কোম্পানি জানিয়েছে, মে মাসের পর তারা শ্রমিকদের বেতন দিতে পারবে না এবং ৮০ শতাংশ পারবে না সেপ্টেম্বরের পর থেকে।

সম্প্রতি সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ৪২টি কারখানার ওপর এক জরিপ চালায়। সিপিডি জানায়,  প্রত্যেকটি কারখানা জানিয়েছে করোনার কারণে রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে এবং ৭৩ শতাংশ কারাখানা জানায় তাদের উৎপাদন ও আমদানিতে প্রভাব পড়েছে।

বিনিয়োগে উৎসাহ ও ব্যবসায়ীদের স্বস্তি দিতে, সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক টার্নওভার ট্যাক্স রেট ৫০ লাখ থেকে ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত কমিয়ে আনতে পারে।

অর্থনীতিতে মুদ্রা প্রবাহ বাড়াতে অপ্রদর্শিত আয়কে বৈধ করার সুযোগ দেওয়া হতে পারে, যেখানে ১০ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ বৈধ করা যেতে পারে।

আয়ের উৎস নিয়ে কোনো সংস্থা যাতে প্রশ্ন না তুলতে পারে সেজন্য সরকার সাধারণ ক্ষমা প্রস্তাবের পরিকল্পনা করছে।

বেসরকারি বিনিয়োগ উৎসাহে অর্থমন্ত্রী নতুন আরও সাতটি খাতে কর মওকুফের বিবেচনা করছেন। এই খাতের মধ্যে রয়েছে ট্রান্সফরমার ও ন্যানো টেকনোলজিভিত্তিক শিল্প।

আয়কর মুক্ত আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। গত পাঁচ বছর ধরে যা আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত রয়েছে।

করের নিম্নসীমায় পাঁচ শতাংশ ট্য্যক্স স্ল্যাব যোগ হচ্ছে, যা গত দুই দশক ধরে ১০ শতাংশ ছিল।

উচ্চ করসীমায় করের হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হতে পারে। যা গত ৬ বছর ধরে একই অবস্থানে ছিল।

রেজিস্ট্রেশন ও ফিটনেস নবায়নের সময় প্রাইভেট কার ও জিপ মালিকদের আগের চেয়ে বেশি হারে কর দিতে হবে।

করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনীতি স্লথ হয়ে যাওয়ার কারণে  জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। বিদায়ী অর্থবছরে যা ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা ছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Don’t stop till the job is done

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday urged key organisers of the student-led mass uprising to continue their efforts to make students’ and the people’s dream of a new Bangladesh come true.

5h ago