করোনা আপডেট: ফরিদপুর, লালমনিরহাট, মানিকগঞ্জ, ফেনী, ময়মনসিংহ, পটুয়াখালী, কক্সবাজার
ফরিদপুরে একদিনে সর্বোচ্চ ১০২ জনের করোনা শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ সেকেন্দার আলীর স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪৮) মারা গেছেন। মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনুমানিক ৬০ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। ফেনীতে নতুন করে ৪৬ জনের করোনা শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ময়মনসিংহে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১২ শ ছাড়িয়ে গেছে। জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় এক মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজারে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল হোছাইন (৫৫) মারা গেছেন।
ফরিদপুরে একদিনে সর্বোচ্চ ১০২ জনের করোনা শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৯৫২ জনে দাঁড়িয়েছে। আজ বুধবার সকালে জেলা সিভিল সার্জন মো. ছিদ্দীকুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নতুন শনাক্ত ১০২ জনের মধ্যে র্যাব-৮ এর আট জন সদস্য, ছয় পুলিশ সদস্য, গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মী, কৃষি কার্যালয়ের কর্মী ও উপজেলা কার্যালয়ে কর্মী আছেন। নতুন শনাক্ত ১০২ জনের মধ্যে ফরিদপুর সদর উপজেলায় ৪৩ জনের বাড়ি। এ ছাড়া, ভাঙ্গা ও বোয়ালমারী উপজেলার ২৮ জন, সালথা উপজেলার ১০ জন, মধুখালী উপজেলার নয় জন, আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ছয় জন, নগরকান্দা উপজেলার তিন জন, সদরপুর উপজেলার দুই জন ও চরভদ্রাসন উপজেলায় একজনের বাড়ি। এদের মধ্যে ২৩ জন নারী ও ৭৯ জন পুরুষ।’
সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে শনাক্ত রোগীর স্ত্রীর মৃত্যু
লালমনিরহাট শহরের খোচাবাড়ি এলাকায় করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে সাবেক পৌর কাউন্সিলর ও জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ সেকেন্দার আলীর স্ত্রী আলেয়া বেগম (৪৮) মারা গেছেন।
গতকাল রাত সাড়ে ১১টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। আলেয়া বেগমের ভাই আলমগীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
লালমনিরহাট জেলা সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, ‘সেকেন্দার আলী নিজেও করোনায় আক্রান্ত। তাকে হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গতকালই আলেয়া বেগমের নমুনা সংগ্রহ করে রংপুর মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।’
মানিকগঞ্জে আইসোলেশন ওয়ার্ডে অজ্ঞাতপরিচয় বৃদ্ধার মৃত্যু
মানিকগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনুমানিক ৬০ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার সকাল সোয়া ৭টার দিকে তিনি মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আরশ্বাদ উল্লাহ।
তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত ৬ জুন এক ব্যক্তি অচেতন অবস্থায় ওই নারীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এসেছিলেন। চিকিৎসক তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণের পর কোভিড-১৯ ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। চিকিৎসক ও নার্স যথাযথভাবে তার সেবা দিয়ে আসছিলেন। তারপরও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’
‘হাসপাতালে ভর্তি নেওয়ার পর থেকে কেউ তাকে দেখতে আসেননি। বিন্যাডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায় তিন দিন অসুস্থ অবস্থায় পড়ে থাকেত দেখে পুলিশের সহায়তায় ৬ জুন তাকে প্রথমে সিংগাইর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেওয়া হয়। সেখান থেকে গোলাইডাঙ্গা স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং পরে জেলা সদর হাসপাতালে আনা হয়। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না তা এখনো জানা যায়নি। গত শুক্রবার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য সাভারে প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে, ফলাফল এখনো হাতে আসেনি’— বলেন ডা. আরশ্বাদ উল্লাহ।
এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. আনোয়ারুল আমিন আখন্দ বলেন, ‘মানিকগঞ্জের বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে প্রতিদিন শতাধিক নমুনা প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠানো হচ্ছে। গত ৫ দিন ধরে কোনো রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না।’
ফেনীতে ৪৬ জনের করোনা শনাক্ত, মোট শনাক্ত ৬০৯
ফেনীতে নতুন করে ৪৬ জনের করোনা শনাক্ত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ৬০৯ জনে দাঁড়িয়েছে। আজ বুধবার দুপুরে ভারপ্রাপ্ত সিভিল এসএম মাসুদ রানা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘৪৬ জনের মধ্যে ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলায় ১৫ জনের বাড়ি। একজনের মৃত্যুর পরে জানা গেছে তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। সদর উপজেলার ২৫ জন, সোনাগাজীর দুই জন, ফুলগাজীর তিন জন ও ফেনী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অন্য জেলার একজন। মোট শনাক্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১২ জন মারা গেছেন। সুস্থ হয়েছেন ১২৪ জন। ২০ জন ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। বাকিদের হোম আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’
গত ১৬ এপ্রিল ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের পশ্চিম মধুগ্রামে প্রথম এক যুবকের করোনা শনাক্ত হয়। তিনি ঢাকায় মোহাম্মদপুর এলকায় একটি মোবাইল ফোন সেন্টারে চাকরি করতেন। গত বৃহস্পতিবার থেকে তিনটি উপজেলার আটটি এলাকায় লকডাউন শুরু হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘মানুষ যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
১২০০ ছাড়ালো ময়মনসিংহে শনাক্তের সংখ্যা
ময়মনসিংহে করোনা শনাক্তের সংখ্যা ১২ শ ছাড়িয়ে গেছে। নতুন করে ১৪৫ জনসহ জেলায় মোট শনাক্ত বেড়ে ১২০৪ জনে দাঁড়িয়েছে। আজ বুধবার জেলা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম মশিউল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘নতুন শনাক্তদের মধ্যে সদর উপজেলায় ১১০ জনের বাড়ি। এ ছাড়া, ত্রিশালের ১৪ জন, ধোবাউড়ার ১০ জন, নান্দাইলের চার জন, গফরগাঁওয়ের চার জন, ভালুকার চার জন ও ফুলপুর উপজেলায় একজনের বাড়ি। এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন মোট ৩৫০ জন।
করোনার উপসর্গ নিয়ে মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যু
জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় এক মাদরাসা শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১২টার দিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৪৫ বছর।
তিনি উপজেলার বড় জামে মসজিদের পাশে একটি আলিম মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। তার বাড়ি পৌর শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায়।
গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে ওই ব্যক্তি গতকাল রাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। একপর্যায়ে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন কি না নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে তাকে দাফন করা হয়েছে। ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা গিয়েছিলেন, তাদের সবাইকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজারে করোনার উপসর্গ নিয়ে ইউপি সদস্যের মৃত্যু
কক্সবাজারে করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে কুতুবদিয়া উপজেলার দক্ষিণ ধুরুং ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবুল হোছাইন (৫৫) মারা গেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিয়াউল হক মীর বলেন, ‘আজ ভোররাত সাড়ে ৩টায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে তার নামাজে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়েছে। করোনা সংক্রমণের উপসর্গ নিয়ে মারা যাওয়ায় তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। আবুল হোছাইনের বাড়ে আলীফকির ডেইল পাড়ায়। কয়েকদিন থেকে তিনি তীব্র জ্বর, সর্দি, কাশি ও গলা ব্যথায় ভুগছিলেন। বাড়িতেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।’
Comments