বাংলাদেশে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের ভূমিকা
বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) আঘাত লেগেছে অনেক পরে। চীন, ইরান, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোর সংক্রমণের গতি এখন অনেকটাই নিম্নগামী। কিন্তু, বাংলাদেশ ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সংক্রমণের উর্ধ্বমুখি গতি সবে শুরুর দিকে।
ইতালি, স্পেন কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতে সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে মাত্রাতিরিক্ত রোগীর চাপে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের মতো জনবহুল ও সীমিত স্বাস্থ্য অবকাঠামোর দেশে বিপুল সংখ্যক সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসবে।
যদিও সংক্রমণ ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। সংখ্যার বিবেচনায় এখনও প্রাথমিক পর্যায়ই বলা যায়। তাই, বৃহৎ আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার মতো সময় এখনও ফুরায়নি।
মহামারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে সরকারের সাম্প্রতিক ‘জোনিং’ উদ্যোগ প্রশংসনীয়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে বিভিন্ন দেশ নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োগ করছে। এখানে এক দেশের পদ্ধতি আরেক দেশের সঙ্গে নাও মিলতে পারে। কিন্তু, সবার উদ্দেশ্য একটাই। তা হলো, সংক্রমণের গতি কমানো। সংক্রমণের গতি কমাতে চাইলে প্রথম যে ধাপটি আসে তা হলো সংক্রমিত মানুষকে সুস্থ মানুষ থেকে আলাদা করা। এ কাজটি করতে গেলেই দরকার পর্যাপ্ত পরীক্ষা করানো।
এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ সংক্রমণ নির্ণয় করতে গ্রহণযোগ্য পরীক্ষা হচ্ছে রিভার্স ট্রান্সক্রিপশন পলিমারেজ চেইন রিয়েকশন (আরটি-পিসিআর/RT-PCR)। এই পরীক্ষাটি উচ্চ প্রযুক্তি-নির্ভর, সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় নিম্ন ও মধ্যম আয়ের অনেক দেশই প্রয়োজনের তুলনায় ন্যূনতম সংখ্যক পরীক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছে।
পিসিআর পরীক্ষাটি সময় সাপেক্ষ হওয়ায় পরীক্ষাগারে নমুনা পৌঁছানোর পর একটি পরীক্ষার ফল পেতেই সময় লেগে যায় প্রায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। তাই বিশাল সংখ্যক নমুনা দ্রুত পরীক্ষা করার মতো কারিগরি অবকাঠামো অনেক দেশেরই নেই।
গত ১৮ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র প্রতি এক হাজার মানুষের বিপরীতে মোট পরীক্ষা করেছে ৭১টি। সেখানে ভারত ও বাংলাদেশে সে সংখ্যা যথাক্রমে চার ও তিন।
বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে বিপুল সংখ্যাক পরীক্ষা করতে চাইলে RT-PCR এর সঙ্গে সমন্বয় করে অন্য র্যাপিড টেস্টকেও (যেসব পরীক্ষার ফলাফল মাত্র কয়েক মিনিটে পাওয়া সম্ভব) কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে।
কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ নির্ণয়ে RT-PCR এর পাশাপাশি সেরোলজি টেস্ট (অ্যান্টিজেন বা অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নির্ণয়ের জন্য যে টেস্ট করা হয়) ব্যবহার করে আরও দ্রুত ও স্বল্প খরচে যাতে বেশি সংখ্যাক টেস্ট করা যায় সে জন্যে বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও কোম্পানি ইতোমধ্যে শ খানেক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে। এসবের অনেক টেস্টকেই ডায়াগনস্টিক ও রিসার্স কাজে ব্যবহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) অনুমোদন দিয়েছে।
বাংলাদেশের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের গবেষকরাও এরকম একটি র্যাপিড টেস্ট পদ্ধতি আবিষ্কারের কথা বলেছেন। যদিও সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণে কিটটি কার্যকর নয়।
অনেকেই ভাবতে পারেন স্বল্প-খরচে করা যায় এমন র্যাপিড টেস্ট আমরা কেন ব্যবহার করছি না? সে উত্তর পেতে RT-PCR ও সেরোলজি টেস্টের বিষয়টি একটু বিশদ জানা দরকার।
RT-PCR এর মাধ্যমে সরাসরি ভাইরাসের নিউক্লিক এসিডের (বংশগতির ধারক ও বাহক) উপস্থিতি খুব সূক্ষ্মভাবে নির্ণয় করা যায়। আর সেরোলজি টেস্টের মাধ্যমে মানবদেহে ভাইরাসের অ্যান্টিজেন (ভাইরাসের দেহাংশ) উপস্থিতি অথবা ভাইরাস সংক্রমণের চিহ্নস্বরূপ মানবদেহের অ্যান্টিবডির অস্তিত্ব দেখে ধারণা করা যায় যে ঐ ব্যক্তি ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত ছিলেন কিনা। তাই সেরোলজি টেস্ট হয় দুই ধরণের: অ্যান্টিজেন টেস্ট ও অ্যান্টিবডি টেস্ট।
যেহেতু মানবদেহে কোভিড-১৯ এর ভাইরাস প্রবেশের ৫ থেকে ৭ দিন পর অ্যান্টিবডি তৈরি হয় তাই অ্যান্টিবডির উপস্থিতি দেখে সংক্রমণের শুরুতে রোগ নির্ণয় প্রায় অসম্ভব।
তাছাড়া, র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টের মাধ্যমে দেহে ভাইরাসের বর্তমান উপস্থিতি সুনির্দিষ্ট করে বলা যায় না। অ্যান্টিবডি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নির্ণয়ও যথোপযুক্ত নয়। সেক্ষেত্রে, দেহে ভাইরাসের অ্যান্টিজেনের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারে এমন টেস্টই সংক্রমণ নির্ণয়ে ভূমিকা রাখবে, এ ধরনের পরীক্ষাকে বলা হয় অ্যান্টিজেন টেস্ট।
এখন পর্যন্ত সেরোলজি যত পরীক্ষা আবিষ্কার হয়েছে তার অধিকাংশই র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট। তাই এদের কোনটাই কোভিড-১৯ সংক্রমণ নির্ণয়ে বা ডায়াগনোসিসের কাজে ব্যবহার করা হয় না। তবে অ্যান্টিবডি টেস্টকে কাজে লাগিয়ে এটি জানা সম্ভব যে একটি অঞ্চলের কতো সংখ্যক মানুষ এ ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছিলেন বা কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তির শরীরে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি আছে কিনা।
খুব সম্প্রতি বেশ কয়েকটা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। তাদের মধ্যে গত ৯ মে যুক্তরাষ্ট্রের FDA প্রথম একটি র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টকে অনুমোদন দেয়। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখনো কোনো র্যাপিড টেস্টকে কোভিড-১৯ ডায়াগনোসিসের জন্য অনুমোদন দেয়নি। কিন্তু, এ রকম টেস্টের কর্মক্ষমতা ও সম্ভাব্য ডায়াগনস্টিক প্রয়োগ সম্পর্কে গবেষণার জন্য উৎসাহিত করে।
একটি ডায়াগনোস্টিক টেস্ট পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা নির্ভর করে কয়েকটি মাপকাঠির ওপর। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সেনসিটিভিটি (sensitivity) ও স্পেসিফিসিটি (specificity)। এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ এর জন্য যেসব র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট আবিষ্কার হয়েছে সেগুলোর সেনসিটিভিটি মোটামুটি ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ। স্পেসিফিসিটি শতভাগের কাছাকাছি। তাই র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট যেগুলোকে পজিটিভ দেখাবে সেগুলোকে অনায়াসেই পজিটিভ হিসেবে গণনা করা যায়।
রোগ নির্ণয়ের সময় এ দুটি মাপকাঠি ছাড়া যেটি বিবেচনীয় সেটি হলো— ঐ টেস্টের ‘পজিটিভ প্রেডিক্টিভ ভ্যালু (Positive predictive value)’ কতো? অর্থাৎ কোনো টেস্ট যদি ১০০টি পজিটিভ ফলাফল দেয় তাহলে তার মধ্যে শতকরা কত ভাগ সত্যিকারের পজিটিভ। এতো কিছু বিবেচনায় নিয়েই একটি টেস্টকে ক্লিনিক্যাল সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়।
কোভিড-১৯ সংক্রমণ নির্ণয় করতে কোন টেস্টই শতভাগ সফলতা দেখায় না। এমনকী, যে RT-PCR কে এখন মূল টেস্ট ধরা হচ্ছে সেটিও শতভাগ নিখুঁত ফলাফল দেয় না। RT-PCR-ও ভুল ফলাফল দেয়। কিন্তু অন্য টেস্টের তুলনায় ভুল কম তাই এটিকে এখন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য টেস্ট ধরা হয়।
যেসব দেশের সক্ষমতা আছে তারা লাখ-লাখ পিসিআর পরীক্ষার মাধ্যমে মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে। বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশে এতো বিশাল সংখ্যাক পিসিআর পরীক্ষা করাও অনেক কষ্টসাধ্য ও সময় সাপেক্ষ। এ কারণে, যেদিনের নমুনা সেদিন ফলাফল দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। বরং নমুনা সংগ্রহের ৪ থেকে ৫ দিন পর পরীক্ষার ফল পাচ্ছি আমরা। এই বিলম্বে পাওয়া ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে কন্টাক্ট-ট্রেসিং-এর সুবিধা আমরা পাচ্ছি না।
তাই, RT-PCR এর সঙ্গে সম্ভাব্য র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের সমন্বয় করে মোট টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে এরকম সমন্বয় করতে চাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
১. দেশি বা বিদেশি যে কোনো র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা পদ্ধতির প্রায়োগিক ব্যবহারের অনুমোদনের আগে ক্লিনিক্যাল ও অ্যানালাইটিক্যাল পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে যে ঐ টেস্ট পদ্ধতির সেনসিটিভিটি ও স্পেসিফিসিটির একটি গ্রহণযোগ্য মান আছে কিনা।
এখন আমাদের পর্যাপ্ত পজিটিভ নমুনা থাকায় এ পরীক্ষা করতে কয়েকদিনের বেশি সময় লাগার কথা নয়। বাংলাদেশের অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নত ল্যাব আছে যারা খুব দ্রুত এ ধরনের গবেষণা করার সামর্থ্য রাখে। প্রয়োজনে দেশি-বিদেশি একাধিক টেস্ট কিট বা পদ্ধতিকে জরুরি গবেষণার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা সম্ভব।
২. বর্তমানে আমরা উপসর্গের ভিত্তিতে শুধুমাত্র নির্ধারিত মানুষকে টেস্ট করতে পারছি। উপযুক্ত র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের সমন্বয়ে RT-PCR কে কাজে লাগাতে পারলে মানুষের সংক্রমণের ঝুঁকির সম্ভাবনা ও উপসর্গের ভিত্তিতে আরও অনেক মানুষকে টেস্টের আওতায় আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে উপসর্গের পাশাপাশি অধিক ঝুঁকিতে থাকা পেশাজীবীদেরও অগ্রাধিকার দেওয়া যায়, অথবা ঝুঁকি অনুযায়ী দেশের নির্দিষ্ট অঞ্চলকেও প্রাধান্য দেওয়া যায়।
তাছাড়া, প্রতিটি পিসিআর পরীক্ষা করতে যেখানে প্রায় ৩ হাজার টাকা খরচ, উন্নত যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ ল্যাব ও অতি দক্ষ জনবল প্রয়োজন, সেখানে খুব অল্প খরচ ও জনবলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে র্যাপিড টেস্ট করানো সম্ভব। এক্ষেত্রে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো হতে পারে প্রাথমিক টেস্ট সেন্টার।
৩. যদি উপযুক্ত কোনো র্যাপিড টেস্ট কিট পাওয়া যায় তাহলে প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের জন্য নির্ধারিত সব মানুষকে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট দ্বারা পরীক্ষা করা যেতে পারে। র্যাপিড টেস্ট ও RT-PCR পরীক্ষা এর ফলাফলের ভিত্তিতে সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য চিত্রে দেখানো এরকম একটি সিদ্ধান্ত-অ্যালগরিদম তৈরি করা যেতে পারে, এক্ষেত্রে তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্তে আসতে পারলে একই নমুনাকে দুই টেস্টের জন্যই ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই বারবার নমুনা সংগ্রহেরও প্রয়োজন হবে না।
৪. প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ে যাদের করোনা পজিটিভ আসবে তাদের সবাইকেই সত্যিকারের পজিটিভ হিসেবেই ধরে নেওয়া যায়। সে অনুযায়ী আইসোলেশন অথবা হসপিটালাইজেশন ব্যবস্থা নিতে হবে।
মহামারির সময় কিছু ফলস-পজিটিভ এসে থাকলেও চিকিৎসা-সিদ্ধান্তে সেটির বড় কোনো প্রভাব থাকার সম্ভাবনা কম। কারণ কোভিড-১৯ পজিটিভ হলেও অধিকাংশ মানুষেরই হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজনই হয় না। তাদের ব্যক্তিগত অথবা প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রেখেই প্রাথমিক চিকিৎসা সম্ভব।
কিছু পজিটিভ রোগীর ক্লিনিক্যাল কন্ডিশনের ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। তখন আবারও তাদের পিসিয়ারের মাধ্যমে পরীক্ষা করানো যেতে পারে।
৫. আবার, প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ে যাদের করোনা নেগেটিভ আসবে তাদের সবাই হয়তো সত্যিকারের নেগেটিভ নয়। এখানেই র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টের বড় সমস্যা। সংক্রমণের শুরুর দিকে অনেক মানুষের নমুনায় ভাইরাসের পরিমাণ থাকে অনেক কম। তাই র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট এ রকম নমুনাকে নেগেটিভ ফলাফল দিবে।
তবে RT-PCR পরীক্ষাতেও এসব নমুনা নেগেটিভ আসার সম্ভবনা অনেক বেশি। সুতরাং, প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ে সব নেগেটিভকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে।
প্রথম ভাগে, যাদের শরীরে কোনো উপসর্গ নেই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য জটিলতাও নেই— তাদের নেগেটিভ হিসেবেই গণ্য করা যায়। দ্বিতীয় ভাগে, যাদের শরীরে কোভিড-১৯ উপসর্গ আছে অথবা অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত কিন্তু র্যাপিড-টেস্টে নেগেটিভ— তাদের আবার আরটি-পিসিআর এর মাধ্যমে পরীক্ষা করে পরবর্তী সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
এভাবে র্যাপিড টেস্ট ও আরটি-পিসিআরের সমন্বয়ে আমাদের বর্তমান সামর্থ্যের মধ্যেই পরীক্ষার সংখ্যা আরও কয়েক গুণ বাড়ানো সম্ভব।
অস্বীকার করার অবকাশ নেই যে পিসিআরের চেয়ে র্যাপিড টেস্টের সংক্রমণ নির্ণয় সক্ষমতা কম। কিন্তু, মহামারির ভয়াবহতা বিবেচনায় এভাবে সমম্বিত পরীক্ষার আশ্রয় নেওয়াটায় যুক্তিযুক্ত। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা না থাকায় এখন পর্যন্ত কোনো দেশই অ্যান্টিজেন-ভিত্তিক র্যাপিড টেস্টকে ডায়াগনোসিসের জন্য কাজে লাগাতে পারছে না।
কিন্তু, এ রকম টেস্টের ব্যবহার উপযোগিতা যাচাই-বাছাই ও গবেষণার বিষয়ে কোনো বাধা নেই। গত ১৫ জুন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্স ভারতে প্রথম একটি র্যাপিড এন্টিজেন টেস্ট কিটকে অনুমোদন দেয়।
এই প্রসঙ্গে ভিয়েতনামের কথা বলতেই হয়। নিম্ন-মধ্যম আয়ের একটি জনবহুল দেশ হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত দেশটিতে কোভিড-১৯ সংক্রমণের সংখ্যা মাত্র ৩২৯ জন। নিজেদের তৈরি র্যাপিড টেস্ট ও দ্রুত কন্টাক্ট ট্রেসিংকে কাজে লাগিয়ে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে তাক লাগানো সফলতা দেখিয়েছে ভিয়েতনাম।
তাই, শুধু উচ্চ প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ টেস্টের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজেদের সামর্থ্যের মধ্যেই কীভাবে সহজলভ্য ও দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায় সে রকম র্যাপিড টেস্টের সম্ভবনা যাচাই করা আবশ্যক।
লেখক:
মো. জহুরুল ইসলাম (পিএইচডি), পোস্টডক্টরাল গবেষক (মাইক্রোবায়োলজি), হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাষ্ট্র ও সহযোগী অধ্যাপক, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ
আয়েশা সানিয়া (পিএইচডি), রিসার্চ সায়েন্টিস্ট (এপিডেমিওলোজিস্ট), কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র
নাজমুল হায়দার (পিএইচডি), পোস্টডক্টরাল গবেষক (এপিডেমিওলোজিস্ট), রয়েল ভেটেরিনারি কলেজ, লন্ডন, যুক্তরাজ্য
ড. নুসরাত হোমায়রা (পিএইচডি), সিনিয়র লেকচারার (রেসপিরেটরি এপিডেমিওলোজিস্ট), ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া
তামান্না ঊর্মি, ডাটা এনালিস্ট, গো-জেক, ইন্দোনেশিয়া, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, যুক্তরাষ্ট্র
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নিবে না।)
Comments