জনশক্তি থেকেই এমপি শহীদের বছরে আয় ৫৫ কোটি টাকা
কুয়েতের গণমাধ্যম দেশটির তদন্তকারীদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, লক্ষ্মীপুরের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ শহীদ ইসলাম কুয়েতে তার জনশক্তি ব্যবসা থেকে বছরে আয় করতেন প্রায় ২০ লাখ দিনার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৫৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
গতকাল শুক্রবার কুয়েতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র আল-রাইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহীদ ওরফে কাজী পাপুলের মাধ্যমে ভুক্তভোগী বেশ কয়েকজন এবং তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পেয়েছে দেশটির তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
তারা এ বিষয়ে তিন জনের বক্তব্য শুনেছেন। তিন জনের মধ্যে দুজন এমপি শহীদের জনশক্তি প্রতিষ্ঠানের পরিচালক এবং অপরজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্নেল পদমর্যাদার কর্মকর্তা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তদন্তে জানা যায়, বাংলাদেশ থেকে কর্মী আনার বিনিময়ে ঘুষ, নগদ অর্থ এবং বিভিন্ন উপহার দেওয়ার পরও বাংলাদেশি এই সংসদ সদস্যের বার্ষিক মোট আয় আনুমানিক প্রায় ২০ লাখ দিনার।’
এমপি শহীদ মানব পাচার ও অর্থ পাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত। গত বৃহস্পতিবার থেকে এ ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে তিন জন কুয়েতের কর্মকর্তা। এছাড়াও আরও চার জনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।
কুয়েতের তিন কর্মকর্তার মধ্যে একজন কুয়েতে শ্রম বিষয়ক সরকারি সংস্থার জনশক্তি কর্মকর্তা। এই কর্মকর্তার বোনের একটি জনশক্তি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে শ্রমিক আনার জন্য এমপি শহীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির একটি চুক্তি রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার তদন্ত কর্মকর্তারা কুয়েতের জনশক্তি প্রতিষ্ঠানটির মালিকের কথা শুনেছেন। তবে তিনি কোনো অবৈধ কাজে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন।
এমপি শহীদকে গ্রেপ্তারের পর গত ৬ জুন কুয়েতের ফৌজদারি তদন্ত বিভাগ তাকে নির্দোষ বলে জানালেও তদন্তের ধাপে ধাপে তিনি নিজের অভিযোগ স্বীকার করেছেন।
তিনি কুয়েতের একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা, সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান করেছিলেন। এমন তথ্যের ভিত্তিতে চার জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্ত কর্মকর্তারা।
তদন্তকারীদের তিনি জানিয়েছেন, সরকারের ভেতরেই একটি মহল এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। যারা অর্থের বিনিময়ে আরব দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের প্রবেশের পথ তৈরি করে দিয়েছেন।
কুয়েতের জনশক্তি প্রতিষ্ঠান মারাফি কুয়েতির মালিক এমপি শহীদ এবং কুয়েতের এক নাগরিক।
দেশটিতে শ্রমিক পাঠানোর বিনিময়ে জন প্রতি প্রায় তিন হাজার দিনার নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে এমপি শহীদের বিরুদ্ধে। এছাড়াও প্রতি বছর সেদেশে থাকার অনুমতিপত্র পুনরায় অনুমোদন করাতে প্রতিষ্ঠানটিকে মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান করতে হত শ্রমিকদের।
১৬ ফেব্রুয়ারি দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন এমপি শহীদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। অভিযোগে বলা হয়, তিনি কুয়েতে মানব পাচারের মাধ্যমে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশে তা পাচার করেছেন।
এছাড়াও গত ফেব্রুয়ারিতে কুয়েতের মিডিয়া জানায়, মধ্য প্রাচ্যের দেশটিতে মানব পাচারের সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে তিন বাংলাদেশি। ১২ ফেব্রুয়ারি আরব টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, তিন জনের মধ্যে একজন ‘বাংলাদেশের সংসদ সদস্য’।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনটি বড় প্রতিষ্ঠানে এই তিন জন ‘গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দখল’ করে আছেন। যেসব প্রতিষ্ঠান ২০ হাজারেরও বেশি বাংলাদেশি শ্রমিককে কুয়েতে পাঠিয়েছে। ধারণা করা হয়, এই শ্রমিকদের কাছ থেকে বিনিময় হিসেবে প্রায় এক হাজার ৩৯১ কোটি ৬০ লাখ টাকারও বেশি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: এমপি শহীদের সঙ্গে ২ কুয়েতি অভিযুক্ত
এমপি শহিদের জালিয়াতির জবানবন্দি দিয়ে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরলেন ১১ শ্রমিক
কুয়েতের সরকারি ২ কর্মকর্তাকে ২১ লাখ দিনার দেন এমপি শহিদ
মানব পাচারের অভিযোগে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের এমপি কুয়েতে গ্রেপ্তার
Comments