আইসিইউয়ের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে ঢামেক

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পর্যাপ্ত শয্যা নেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। আর এই পরিস্থিতি প্রকট হয়েছে বিপুল সংখ্যক গুরুতর কোভিড-১৯ রোগী দেশের এই বৃহত্তম সরকারি হাসপাতালে ভিড় করার কারণে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ছবি: সংগৃহীত

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পর্যাপ্ত শয্যা নেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। আর এই পরিস্থিতি প্রকট হয়েছে বিপুল সংখ্যক গুরুতর কোভিড-১৯ রোগী দেশের এই বৃহত্তম সরকারি হাসপাতালে ভিড় করার কারণে।

কমপক্ষে ১০০ জনের চাহিদার বিপরীতে হাসপাতালটিতে কোভিড-১৯ রোগী বা উপসর্গ থাকা রোগীদের জন্য মাত্র ১৪টি আইসিইউ শয্যা আছে। এছাড়াও অন্যান্য রোগীদের জন্য হাসপাতালটিতে রয়েছে প্রায় ৩৫টি আইসিইউ শয্যা।

ঢামেকের চিকিত্সকরা বলছেন, বেশিরভাগ কোভিড-১৯ রোগী এবং উপসর্গ থাকা রোগীরা শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেনের মাত্রা কম হওয়ায় গুরুতর অবস্থায় এখানে আসেন। তাদের অনেককেই আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন হয়।

আইসিইউ শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে, তবে এর জন্য সময় লাগবে জানিয়ে ঢামেকের উপ পরিচালক আলাউদ্দিন আল-আজাদ বলেন, ‘কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য মাত্র ১৪টি আইসিইউ শয্যা আছে। আইসিইউ শয্যার জন্য সিরিয়াল অনেক লম্বা।’

১২ জুন ৬৭ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার শফিক ইসলাম শ্বাসকষ্ট নিয়ে ঢামেকের ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডে করোনা ইউনিটে ভর্তি হন।

তার ভাগ্নে আমিনুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন তাকে আইসিইউতে নেওয়া প্রয়োজন। কিন্তু ঢামেকের করোনার রোগীদের আইসিইউয়ে কোনো শয্যা খালি পাওয়া যায়নি।

অনেক প্রচেষ্টা পর গত রোববার সন্ধ্যায় তারা আইসিইউ শয্যা পান। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, তারা ভাগ্যবান যে দুদিনের মধ্যেই আইসিইউ পেয়ে গেছে।

ঢামেকে ৭৫০ জন করোনা রোগীর চিকিৎসার সক্ষমতার বিপরীতে বর্তমানে প্রায় ৬২৫ জন রোগীর চিকিৎসা করছে।

মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, পুরাতন বার্ন ইউনিট ২ মে থেকে কোভিড-১৯ রোগী এবং সন্দেহভাজন কোভিড-১৯ রোগীদের ভর্তি করা শুরু করে। বর্তমানে এখানে সার্জারি, স্ত্রীরোগ ও শিশু রোগ নিয়ে ১০০ জন রোগী আছেন যাদের কোভিড-১৯ পজিটিভ বা উপসর্গ রয়েছে।

এছাড়াও গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢামেকের নতুন ১০ তলা ভবনে পাঁচ শতাধিক কোভিড-১৯ রোগী বা উপসর্গ থাকা রোগী ভর্তি হয়েছেন।

এখানকার করোনা ইউনিটের সব শয্যায় রোগী পূর্ণ হয়ে গেলে নতুন আসা রোগীদের রেলওয়ে হাসপাতালে পাঠানো হবে। সেখানে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট করোনা ইউনিট রয়েছে বলে জানায় ঢামেক কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, রোগী সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে বাড়ছে ঢামেকে রোগী মৃত্যুর সংখ্যাও। গত দুসপ্তাহে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ জন কোভিড-১৯ রোগী এবং উপসর্গ থাকা রোগী এখানে মারা গেছেন বলে জানা যায়। গত সোমবার হাসপাতালটিতে মারা গেছেন ১১ জন করোনা রোগী।

অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত প্রায় তিন হাজার কোভিড-১৯ পজিটিভ ও উপসর্গ থাকা রোগীর চিকিত্সা তারা করেছেন। এই রোগীদের মধ্যে সুস্থতার হার ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ।

তিনি বলেন, ‘সারা দেশ থেকে গুরুতর অবস্থার রোগীরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার হিসেব বিবেচনায় নিলে মৃত্যুর হার বেশি না। এর আগে মেডিসিন ওয়ার্ডে ১০ শতাংশ রোগী মারা যেতেন। বর্তমান পরিস্থিতি হতাশাজনক নয়।’

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিত্সায় অবহেলার বিষয়ে জানতে চাইলে আলাউদ্দিন আল-আজাদ বলেন, ‘প্রথমদিকে কিছু সমস্যা ছিল, এখন অবস্থার অনেক উন্নতি হয়েছে।’

তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে চিকিত্সকরা আরও ভালো কিছু করতে পারবেন।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই গুরুতর পরিস্থিতি সামাল দিতে চিকিৎসকরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছেন। রোগী ব্যবস্থাপনা, সুস্থদের ছেড়ে দেওয়া এবং নতুন রোগীদের ভর্তি করার বিষয়ে প্রতি রাতেই তারা ভার্চুয়াল সভা করেন।

বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদা

ঢামেকের চিকিত্সকরা জানিয়েছেন, প্রচুর রোগী আসেন যাদের অক্সিজেনের স্তর ৪০ শতাংশের নিচে। কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহের মাধ্যমে এই স্তর ৮০ শতাংশের উপরে ওঠানো কঠিন। সেজন্যই প্রয়োজন আইসিইউ।

একটি ওয়ার্ডের উদাহরণ দিয়ে হাসপাতালে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে জানিয়ে গত ৮ জুন অধ্যাপক ডা. মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এখানে ভর্তি ৮০ জন কোভিড-১৯ রোগীর মধ্যে ৬০ জন রোগীকেই অক্সিজেন দিতে হয়।’

এই গুরুতর রোগীদের উচ্চ প্রবাহের অক্সিজেন দিতে এইচএফএনসি প্রয়োজন হয়। যার মাধ্যমে প্রতি মিনিটে ৬০ লিটার অক্সিজেন রোগীকে দেওয়া হয়। বর্তমানে ঢামেকে দুটি এইচএফএনসি রয়েছে।

হাসপাতালের উপ পরিচালক জানিয়েছেন, তারা আরও ২০টি এইচএফএনসি চেয়েছেন। যার মধ্যে দুটি শিশুদের জন্য এবং ১৮টি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।

এগুলো পেলে তা তীব্র শ্বাসকষ্টে ভোগা রোগীদের চিকিত্সায় আইসিইউ এর বিকল্প হিসেবে কাজে দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নিউজিল্যান্ড থেকে এগুলো আনা হচ্ছে। আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহেই এগুলো হাতে পাব।’

Comments

The Daily Star  | English

Ex-public administration minister Farhad arrested

Former Public Administration minister Farhad Hossain was arrested from Dhaka's Eskaton area

3h ago