প্রথম শ্রেণির পৌরসভার নিম্ন শ্রেণির সড়ক!

পানিতে হাঁসের জলকেলি দেখে যে কারো মনে হতে পারে এটি কোনো নালা বা খালের চিত্র। কিন্তু, বাস্তবে এটি ভাঙা সড়কে জমে থাকা পানির চিত্র। আর এমন গর্ত ও খানাখন্দে ভরা সড়কটি ১৫০ বছরের পুরনো প্রথম শ্রেণির ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার। ৩০ বছরে উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগা রাস্তাটির ইটের সলিং এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।
পানিতে হাঁসের জলকেলিতে মনে হতে পারে এটি কোনো নালা বা খালের চিত্র। ছবি: মাসুক হৃদয়

পানিতে হাঁসের জলকেলি দেখে যে কারো মনে হতে পারে এটি কোনো নালা বা খালের চিত্র। কিন্তু, বাস্তবে এটি ভাঙা সড়কে জমে থাকা পানির চিত্র। আর এমন গর্ত ও খানাখন্দে ভরা সড়কটি ১৫০ বছরের পুরনো প্রথম শ্রেণির ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার। ৩০ বছরে উন্নয়নের ছোঁয়া না লাগা রাস্তাটির ইটের সলিং এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের চন্ডালখিল থেকে গোকর্ণ পর্যন্ত মাত্র দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটিতে গত ৩০ বছরে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। রাস্তাটি এতোটাই বেহাল যে, এলাকাবাসীকে পায়ে হেঁটে চলাচল করতে হয়।

চন্ডালখিল গ্রামের বাসিন্দা নাছির মিয়া বলেন, ‘যান চলাচলের অনুপযোগী সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল এরশাদ সরকারের আমলে। এরপর বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এটিতে ইটের সলিং দেওয়া হয়। বছর খানেকের মধ্যে ওই সলিং ক্ষত-বিক্ষত হয়ে এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে।’

অথচ প্রথম শ্রেণির পৌরসভার বিধানে বলা আছে, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং এর নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সাত নম্বর ওয়ার্ডের চিত্র যেন একেবারেই ভিন্ন। ওই ওয়ার্ডের চন্ডালখিল, আমিনপুর ও ছোট গোকর্ণ- এই তিন গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ প্রথম শ্রেণিভুক্ত পৌরসভায় বাস করেও নিজের শহরে যাতায়ত করেন পায়ে হেঁটে।

সরেজমিন দেখা যায়, সড়কটিতে অসংখ্য ছোট-বড় খানাখন্দ ও গর্তে ভরে আছে। গর্ত এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, কোনো ধরণের যানবাহন চলাচল অসম্ভব। সড়কের গর্তে জমে থাকা পানিতে হাঁসের জলকেলিও দেখা গেছে।

চন্ডালখিল সিরাজবাগ মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি ওবায়দুল্লাহ আশরাফ বলেন, ‘ওই গ্রামে থাকা একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি কিন্ডারগার্টেন এবং দুটি মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ ৭০ জনেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী আশপাশের গ্রামের উচ্চ বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে পায়ে হেঁটে। ফলে এই সড়ক নিয়ে দুঃখের শেষ নেই এখানকার বাসিন্দাদের।’

একই গ্রামের মন মিয়া বলেন, ‘যদিও আমরা শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে বাস করি, তবে সড়কের এমন বেহাল দশা দেখে মনে হয় আমরা কোনো অজপাড়া গ্রামে বাস করি।’

জেলা শহরের মধ্যে থাকা এমন একটি রাস্তা যদি সংস্কারের অগ্রাধিকার না পায়, তাহলে পৌরসভায় বাস করে কী লাভ? প্রশ্ন করেন তিনি।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, নির্বাচন এলে বারবার সড়কটি মেরামতের আশ্বাস দেন প্রার্থীরা। কিন্তু, নির্বাচনের পরে আর কোনো জনপ্রতিনিধি খবরও নেয় না তাদের। গ্রামে কেউ অসুস্থ হলে তাকে শহরের হাসপাতালে নিতেও বেগ পেতে হয়। বর্ষা এলে এই দুর্ভোগ আরও বাড়ে।

এ সড়কটি সহসা নির্মাণের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানালেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. কাউসার আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে সড়কটি মেরামতের কোনো আর্থিক সক্ষমতা নেই পৌরসভার। পরবর্তী মাসিক সভায় এই সড়ক নিয়ে আলোচনা করা হবে।’

এ বিষয়ে মুঠোফোনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবীর বলেন, ‘মহামারি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শেষ হলে প্রকৌশলীদের দিয়ে সড়কটির প্রাক্কলন তৈরি করবো। এরপর দরপত্র আহবান করা হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago