গুরুত্বহীন রোগ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা

হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় নির্ধারিত লোকবল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে নির্বিশেষে সংক্রমিত হচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও তাদের আত্মীয়রা।
dmch corona unit doctors
পিপিই পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কোভিড-১৯ ইউনিটে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ছবি: এমরান হোসেন

হাসপাতালগুলোতে সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় নির্ধারিত লোকবল না থাকায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে নির্বিশেষে সংক্রমিত হচ্ছেন স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী ও তাদের আত্মীয়রা।

সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণে (আইপিসি) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যে নীতিমালা রয়েছে তা মেনে চলছে হাতেগোণা কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতাল।

বিশেষজ্ঞদের মত, আইপিসি কর্মসূচি যথাযথভাবে মেনে চলা হলে চলমান করোনা মহামারিতে অনেকের জীবন বাচাঁনো যেত।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আইপিসি হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থা যার মাধ্যমে রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে সংক্রমণ রোধ করে।

সংক্রমক রোগের বিভিন্ন পর্যায়ে সংক্রমণ রোধ করতে রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ও তা বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। শুধু এ কাজের জন্যেই প্রয়োজন চিকিৎসক, নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর।

করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যু আইপিসি বা সংক্রমণ রোধ ও নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীতাকে আবারও সামনে তুলে ধরল।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) হিসাবে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ ৪৪ জন চিকিৎসক মারা গেছেন। একই সময় পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭১৪ জন স্বাস্থ্যকর্মী। তাদের মধ্যে চিকিৎিসক ১১৪৩ জন, নার্স ১০২৩ জন ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী ১৫৪৮ জন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণপূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মুজাহেরুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এই মহামারিকালে আইপিসি কর্মসূচি যথাযথ মেনে চলতে পারলে আমরা অনেক চিকিৎসককে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারতাম।’

তার মতে, ‘আমি নিশ্চিত যে দেশে কোনো সরকারি হাসপাতালে আইপিসি কর্মসূচি নেই। গুটি কয়েক বেসরকারি হাসপাতালে তা থাকতে পারে। কিন্তু, তা কতোটা যথাযথভাবে করা হচ্ছে তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।’

এছাড়াও, বাংলাদেশে হাসপাতাল থেকে কতোজন সংক্রমিত হচ্ছেন সে বিষয়ে কোনো গবেষণা নেই বলেও মনে করেন অধ্যাপক মুজাহেরুল হক।

‘সঠিকভাবে পিপিই ব্যবহার না করায় ও প্রয়োজনীয় বিধিমালা না মানায় অনেক স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন,’ উল্লেখ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক সুলতানা শাহানা বানু ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হাসপাতালগুলো পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। অনেক পরিচ্ছন্নকর্মীর এ বিষয়ে যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় এ কাজ ভালোভাবে করতে পারছেন না।’

তিনি মনে করেন, হাসপাতালের চিকিৎসা বর্জ্য ব্যাবস্থাপনা ভাইরাস সংক্রমণের আরেকটি উৎস।

‘আমরা বিদেশে দেখেছি, সংক্রমণ রোধে প্রতিটি হাসপাতালে পৃথক ইউনিট থাকে। আমি যতটুকু জানি, বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালে সংক্রমণ রোধ করার জন্যে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয় না।’

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘যদিও, আমাদের হাসপাতালে সংক্রমণ রোধের কাজে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি, তবে এ কাজের জন্যে অনেকদিন থেকে একটি কমিটি আছে।’

‘সেই কমিটিতে চিকিৎসক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা রয়েছেন’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এ বিষয়ে অনেক দিন থেকেই চিকিৎসক, নার্স ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা কী?

২০১৬ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আইপিসি বা সংক্রমণ রোধে কিছু নীতিমালা জারি করে। সেখানে বলা আছে যে প্রতিটি হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আইপিসির কাজে সুনির্দিষ্ট করে লোকবল রাখতে হবে এবং তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

আইপিসি বিষয়ে হাতে-কলমে শিক্ষা প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীকে দিতে হবে বলেও নীতিমালায় বলা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Over 5,500 held in one week

At least 738 more people were arrested in the capital and several other districts in 36 hours till 6:00pm yesterday in connection with the recent violence across the country.

14h ago