করোনাভাইরাস: ফুসফুসে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতির শঙ্কা

বিশ্বে করোনাভাইরাস থেকে প্রায় ৩৮ লাখেরও বেশি রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর তারা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।
তুরস্কের ইস্তানবুলের একটি হাসপাতালে করোনা রোগীর সেবায় স্বাস্থ্যকর্মীরা। ফাইল ফটো রয়টার্স

বিশ্বে করোনাভাইরাস থেকে প্রায় ৩৮ লাখেরও বেশি রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সম্প্রতি অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার পর তারা দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে পড়ছেন।

হেলথলাইন মিডিয়ার এক প্রতিবেদন বলছে, শুরুতে তরুণদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাসের জটিলতার ঝুঁকি কম বলে ধারণা করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার্স ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন- সিডিসির একটি গবেষণা ওই ধারণাকে প্রশ্ন করছে।

সম্প্রতি, শিকাগোতে ২০ বছর বয়সী এক কোভিড আক্রান্তের ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়। পোস্ট-কোভিড ফাইব্রোসিসের জন্য ফুসফুস প্রতিস্থাপন করার ঘটনা সম্প্রতি আরও দেখা গেছে। চীন ও অস্ট্রিয়ায় দুই রোগীর ক্ষেত্রেও পোস্ট-কোভিড ফাইব্রোসিসের পর ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

শিকাগোর ওই রোগী দ্রুত পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আশা করা হলেও ভাইরাসটির গুরুতর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ট্রান্সপ্ল্যান্ট পালমোনোলজিস্ট ডা. লরি শাহ বলেন, ‘পোস্ট কোভিড ফাইব্রোসিস হলো পোস্ট এআরডিএস (অ্যাকিউট রেসপিরাটরি ডিসট্রেস সিন্ড্রোম) ফাইব্রোসিস এর মতো। এর মাধ্যমে ফুসফুসের গর্ত হয়ে যাওয়াকে বোঝায়।’

ফুসফুসে অ্যালভেওলি নামের ছোট বায়ু থলেতে তরল তৈরি হলে তাকে এআরডিএস বলা হয়। এটি রক্ত প্রবাহে অক্সিজেন সরবরাহ কমিয়ে দেয় ও অঙ্গগুলোতে অক্সিজেন পৌঁছাতে দেয় না। এর ফলে, অঙ্গ বিকল হতে পারে।

তার মতে, পোস্ট কোভিড ফাইব্রোসিসকে ফুসফুসের ‘অপরিবর্তনীয় ক্ষতি’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে। এর ফলে কাশি, শ্বাসকষ্ট হয়, কৃত্রিম অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন হতে পারে। আবার কখনো শিকাগোর ওই রোগীর মতো কখনো কখনো ক্ষতি এতোটাই মারাত্মক হয় যে ফুসফুস প্রতিস্থাপনেরও প্রয়োজন হতে পারে।

পোস্ট কোভিড ফাইব্রোসিসের জন্য বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। ডা. জাকারি কন জানান, এটা হতে পারে যে করোনাভাইরাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে রক্ত জমাট বাঁধতে উদ্বুদ্ধ করে। ফলে, রক্ত ফুসফুসের নির্দিষ্ট অংশে যেতে বাধা পায়।

ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কারা ঝুঁকিতে আছেন তা এখনই জানাতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা।

কন বলেন, ‘কিছু কিছু ঘটনা থেকে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে, একটি নির্দিষ্ট গ্রুপের মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে আছেন। সামগ্রিকভাবে, করোনা আক্রান্ত প্রায় প্রত্যেকেরই হালকা উপসর্গ থাকে। অনেকে আবার একেবারেই উপসর্গহীন হয়ে থাকে। তবে, খুব কম মানুষই মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হন।

কন বলেন, ‘মারাত্মক আক্রান্তদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়। তাদের ভেন্টিলেটরেরও প্রয়োজন হয়। যাদের অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় তারাই পোস্ট কোভিড ফাইব্রোসিসের শিকার হওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে আছেন।’

নিউইয়র্ক শহরের লোনক্স হিল হাসপাতালের পালমোনারি মেডিসিনের প্রধান ডা. বুশরা মিনা বলেন, ‘আমরা জানি কোভিড -১৯ কীভাবে ফুসফুস এবং শ্বাসপ্রশ্বাসকে প্রভাবিত করে। বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে কাশি ও হালকা শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হতে দেখা যায়। তারা সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর ফুসফুসের অত্যধিক ক্ষতি হয় এবং তাদের মধ্যে কিছু লোক ফাইব্রোসিসের শিকার হন।’

শিকাগোর ওই রোগী ফুসফুসের প্রতিস্থাপনের আগে দুই মাস ভেন্টিলেশন ও ইসিএমও মেশিনে ছিলেন। 

দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, চীনের উহানে শুরুর দিকে করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ২৬ শতাংশ রোগীর নিবিড় চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৬১ শতাংশের এআরডিএস হয়।

ল্যানসেট বলছে, ‘পালমোনারি ফাইব্রোসিস দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের পরে বা প্রাথমিকভাবে হতে পারে। এটি জিনগতভাবে প্রভাবিত ও বয়সের সঙ্গে সম্পর্কিত ফাইব্রোপ্রোলাইভারিটি প্রক্রিয়া হিসেবে তৈরি হতে পারে।’

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত প্রায় ৪০ শতাংশের এডিডিএস হয়। এর মধ্যে ২০ শতাংশের মধ্যে তা গুরুতর রূপ নেয়।

মিনা বলেন, ‘কেন কিছু নির্দিষ্ট মানুষের মধ্যে এটি দেখা গেছে, কারা এর শিকার হচ্ছেন এই মুহূর্তে এটি বলা যাচ্ছে না।’

ফাইব্রোসিসের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, যারা এই রোগ থেকে বেঁচে ফিরেছেন তাদেরও দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক জটিলতা থেকে গেছে।

১০ জুন পর্যন্ত, কোভিড-১৯ এ মারা যাওয়া বেশিরভাগ মানুষেরই বয়স ৮৫ বছরের চেয়ে বেশি।

সিডিসি বলছে, মৃত্যুর সংখ্যা এখনও বয়সের ওপর নির্ভরশীল।

তবে চিকিত্সকরা বলছেন, তরুণদের মধ্যে যারা সেরে উঠছেন তাদেরও পোস্ট-কোভিড ফাইব্রোসিসের মতো দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হতে পারে। কিডনি, হার্ট ও মস্তিষ্কে স্থায়ী প্রভাব পড়তে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

10h ago