গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য কোঁচা দিয়ে মাছ শিকার
কোঁচা দিয়ে মাছ শিকার বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের গ্রামবাংলার একটি প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পদ্ধতি। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে গ্রামের খাল বিল ভরে গেলে কোঁচা দিয়ে মাছ শিকারিদের দেখা যায়। এক হাতে টর্চ লাইট অন্য হাতে কোঁচা নিয়ে তারা মাছের সন্ধানে খালে বিলে ঘুরে বেড়ায়। এ পদ্ধতিতে শুধু রাতের বেলায় মাছ শিকার করা হয়।
পূর্বে এটির প্রচলন আরও বেশি ছিল। তবে আস্তে আস্তে মাছ ধরার এই সনাতন পদ্ধতি হারিয়ে যাচ্ছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বাজেমজুরাই গ্রামের হেলাল হোসেন বলেন, ‘একটি কোঁচা তৈরি করতে খরচ পড়ে দুইশ থেকে তিনশ টাকা। একবার কোঁচা তৈরি হলে সেটি তিন থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়। কোঁচা দিয়ে মাছ ধরা একটি আনন্দের বিষয়। খালে বিলে কোঁচা হাতে যখন অনেক মানুষ রাতের বেলা বিচরণ করে তখন একটি মনোরম পরিবেশ বিরাজ করে।’
লালমনিরহাট সদর উপজেলার ঠাকুরের মাল্লি গ্রামের আউয়াল হোসেন বলেন, ‘বর্ষাকালে বৃষ্টির পানিতে গ্রামের খাল বিল ভরে যায়। তখন অনেক মাছের বিচরণ বেড়ে যায়। আর কোঁচা দিয়ে মাছ শিকারিরা মেতে উঠে মাছ শিকারে। দুই থেকে তিন ঘণ্টা কোঁচা দিয়ে মাছ শিকার করে পাওয়া যায় এক থেকে দুই কেজি মাছ। কোঁচা দিয়ে মাছ শিকারিদের অধিকাংশই সৌখিন মাছ শিকারি। কেউ কেউ এ মাছ বিক্রি করে সংসারও চালান।’
একই এলাকার মুহিন রায় বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে মাছ শিকারে ব্যবহৃত কোঁচা বানাতে হয় কামারের কাছ থেকে। এক সময় ভুটিয়া জ্বালিয়ে তার আলোয় কোঁচা দিয়ে ধরা হতো মাছ। অনেক সময় দুই বা ততোধিক মানুষ একত্রিত হয়ে কোঁচা দিয়ে মাছ ধরেন। এ পদ্ধতিতে মাছ ধরতে সাপের আতঙ্কও থাকে। এ পদ্ধতিতে সাধারণত দেশি প্রজাতির মাছ শিকার করা হয়।’
কোঁচা দিয়ে মাছ শিকার এ অঞ্চলের ঐতিহ্য। যা আজও প্রচলিত আছে।
Comments