করোনার প্রভাবে সংকুচিত প্রবাসে কর্মসংস্থান

হাজারো অভিবাসী শ্রমিক করোনা মহামারিতে চাকরি হারিয়ে নিদারুণ অর্থ কষ্টে দিন পার করছেন। তাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখলেও তাদের কষ্টের দিনগুলোতে সরকারের অবদান একেবারেই সামান্য।
মালয়েশিয়ায় প্রবাসী শ্রমিক। প্রতীকি ছবি। ছবি: রয়টার্স

হাজারো অভিবাসী শ্রমিক করোনা মহামারিতে চাকরি হারিয়ে নিদারুণ অর্থ কষ্টে দিন পার করছেন। তাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখলেও তাদের কষ্টের দিনগুলোতে সরকারের অবদান একেবারেই সামান্য।

করোনার কারণে তৈরি অর্থনৈতিক মন্দায় এক কোটিরও বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী শ্রমিকের মধ্যে কয়েক লাখ চাকরি হারাতে পারেন বলে বাড়ছে উদ্বেগ।

ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) বাংলাদেশ সম্প্রতি এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক ও শ্রম সংকটের কারণে বছরের শেষের দিকে কয়েক হাজার প্রবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে আসবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

এ অবস্থায় যারা বিদেশে আছেন এবং যারা দেশে ফিরে আসছেন তাদের সবাইকেই সরাসরি সরকারি আর্থিক সহায়তা দিতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রবাসী শ্রমিক অধিকার বিষয়ক কর্মীরা। দেশের অর্থনীতিতে কৃষি ও পোশাক শ্রমিকদের পাশাপাশি প্রবাসী শ্রমিকরা সবচেয়ে বড় অবদান রাখছেন। তাদের দুর্দশা লাঘব করতে সরকারকে ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

যোগাযোগ করা হলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন জানান, চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হওয়া এবং মহামারিতে অসুবিধার মুখে পড়া প্রবাসী শ্রমিকদের সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন। ‘আমরা আশা করি, যারা বিদেশে থাকতে চান, তারা তা পারবেন’, বলেন তিনি।

গত ১৬ জুন দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেছিলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশে কর্মরত শ্রমিকদেরকে বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রায় ১১ কোটি টাকার সহায়তা দেওয়া হয়েছে এবং এই সহায়তা অব্যাহত রাখবে।’

বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদে প্রবাসী শ্রমিকদের সহায়তা করার পরিকল্পনা আছে কি না, জানতে চাইলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক মো. হামিদুর রহমান জানান, তারা এ জাতীয় ব্যবস্থাকে গৌণ হিসেবে বিবেচনা করছেন।

তিনি জানান, বিদেশে শ্রমিক নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সরকারের অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। মহামারিজনিত কারণে কোনো শ্রমিককে নির্বিচারে চাকরিচ্যুত করা বা বঞ্চিত করা যায় না বলেও তিনি যোগ করেন।

অভিবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য আরও শক্তিশালী কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার ওপরেও জোর দেন এই কর্মকর্তা।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭৬ সাল থেকে চলতি বছরের মে পর্যন্ত দক্ষ-অদক্ষ শ্রমিক ও পেশাজীবীসহ এক কোটি ৩০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি বিদেশে গেছেন কাজ করতে।

দেশে মহামারি শুরু হওয়ার পর প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য সরকার ৫০০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে এবং প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় প্রবাসী শ্রমিকদের জন্য আলাদা ২০০ কোটি টাকার ঋণ প্রকল্পের ঘোষণা দিয়েছে। এই উভয় প্যাকেজই বিদেশফেরত শ্রমিকদের মাঝে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ঋণ হিসেবে বিতরণ করা হতে পারে। তবে, মহামারির আঘাত থেকে বাঁচতে বিদেশে সংগ্রামরত শ্রমিকরা এই প্যাকেজগুলো থেকে কিছুই পাচ্ছে না।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০০ কোটি টাকার ঋণ ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে আসবে, যা অভিবাসী শ্রমিকদের অর্থ দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।

বাসস’র একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ১৪ মে করোনাভাইরাস মহামারি চলাকালীন কর্মহীন হয়ে পড়া প্রবাসীদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এই অর্থ প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে দেওয়া হবে, যাতে বিদেশফেরত শ্রমিকরা ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে দেশে কিছু করতে পারেন’।

দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিটের (আরএমএমআরইউ) চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, ‘প্রবাসী শ্রমিকরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের রাজস্ব আয়ে অবদান রেখেছেন।’

তবে, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করা হবে এমন প্রতিফলন খুব কম রয়েছে বলে জানান তিনি।

‘(অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি) রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া দরকার’, বলেন অধ্যাপক তাসনিম সিদ্দিকী।

Comments